বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে রাঘববোয়ালেরা ছিল: প্রধান বিচারপতি

August 15, 2017 9:52 am0 commentsViews: 31

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে রাঘববোয়ালেরা জড়িত থাকলেও তদন্তে ত্রুটির কারণে তাদের বিচারে সোপর্দ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এক স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নথি পর্যালোচনা করে দেখলাম, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আরও অনেক রাঘরবোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু তদন্তে ত্রুটির জন্য আমরা তাদের আর বিচারে সোপর্দ করতে পারিনি। যদিও আমাদের রায়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, এটি একটি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের বিচারে সোপর্দ করার জন্য। আজকের দিনটি জাতির জন্য একটি দুঃখময় দিন।’

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আজকে আমাদের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক দিন। উপমহাদেশে জাতির পিতা দুজনকে হত্যা করা হয়। একজন মহাত্মা গান্ধী, অপরজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হয়তোবা কারও শত্রু বা বিরাগভাজন হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ যাঁরা নব্য বিবাহিত, আজকে পত্রিকায় পড়লাম, তাঁদের গায়েহলুদ হয়েছিল। এগুলো (মেহেদির রং) মুছে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের, উনি রাজনীতিতে ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সমস্ত পরিবারকে এই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’

এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো হত্যার মিল পাওয়া যায় না উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই, যে রকম তারা হত্যা করেছিল। আরও কষ্টদায়ক হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীদের রাষ্ট্রের আইন দ্বারা বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া। আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গৌরবান্বিত বোধ করছি। এই সুপ্রিম কোর্ট ওই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে সেই বিচারের পথ প্রশস্ত করেছিল।’

এই মামলাতেই একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল বলে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি যখন আপিল বিভাগের সবচেয়ে কনিষ্ঠ বিচারক, তখন অসুস্থ ছিলাম। সিঙ্গাপুরে আমার ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল। আমি চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় মামলাটির বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে সমস্যা চলছিল। আমাকে বলা হয় তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য। ডাক্তার তখনো বলেনি, আমি বাঁচতে পারব কি না? যা-ই হোক, আমি আমার চিকিৎসা বাদ দিয়ে চলে আসলাম, পরে শপথ নিয়ে চিকিৎসার জন্য চলে গেলাম।’

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির জনক, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। উনি ছিলেন বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সে কারণে আমি আজ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হতে পেরেছি। পাকিস্তান যদি থাকত, হাইকোর্ট পর্যন্ত হয়তো যাওয়া যেত, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি হওয়া কল্পনার বাইরে ছিল। কাজেই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি। এ জন্য করি, আমি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক, সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে আসীন আছি।’

হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী পর্বে উভয় বিভাগের বিচারপতিরা ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শোক দিবস ২০১৭ উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে সহায়তায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সিফিশন মেডিসিন বিভাগ। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, ১২০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com