বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মা বলেছিলেন, তুই এখনই বেরিয়ে যা
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রতিবাদে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
তার নেতৃত্বে সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ১৭ হাজার মুজিবভক্ত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিরোধ গড়ার জন্য মা থেকে অনুপ্রেরণা পান বলে জানিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী নিজেই।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সরাসরি টক শো অনুষ্ঠানে এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে ও পরের ঘটনার বর্নণা তুলে ধরেন কাদের সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার খবর সকালে আমি ছোটবোনের কাছ থেকে পাই। সে বলল, আপনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান, ক্যু হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। আমার বিশ্বাস হয়নি। তখন বলল, রেডিও ধরেন।
এরপর রেডিও ধরে শুনলাম, দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে, শেখ মুজিবের সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। এটা শোনার পরে আমার কেমন লেগেছে আমি বলতে পারবো না। এর ১০ মিনিট পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছি।’
‘কয়েক জায়গায় থাকার পরে মোহাম্মদ মোদাব্বের নামের এক সাংবাদিকের বাড়িতে ছিলাম দুপুর পর্যন্ত। সেখান থেকে খোঁজখবর নেয়া শুরু করলাম। আমার সঙ্গে তখন সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা হয়েছে। এরপর কথা হয়েছিল মনসুর ভাইয়ের সঙ্গে।
তার কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তিনি বলেছিলেন, তুমি যা করবে তার সঙ্গেই আমি থাকবো, আমাকে ডাকলেই তুমি পাবে। ওই রাতেই আমরা একটা লিফলেট করেছিলাম, কামাল, জামাল ও রাসেলকে হত্যা করতে পারলেও আমি কাদের সিদ্দিকি তার (বঙ্গবন্ধু) চতুর্থ সন্তান, বঙ্গবন্ধুর হত্যা বদলা আমরা নেবই, নেব’, বলেন তিনি।
কাদের সিদ্দিকি বলেন, ‘দু’দিন পরে মা এসেছিলেন আমার কাছে। উনি পিজি হাসপাতালে ছিলেন। মা আমাকে তখন বলেছিল, তুই এখনও ঘরে? ঘর থেকে ধরলে তোকে মেরে ফেলবে। তখন আমি কাঁদতেও পারবো না।
তুই এখনই বেরিয়ে যা, রাস্তা থেকে তোকে ধরার পর যদি মেরে ফেলে, আমি কাঁদতে পারবো, বলতে পারবো, বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রতিবাদ করতে যেয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। কথাটা আমাকে ভীষণভাবে শক্তি দিয়েছিল। আমি সঙ্গে-সঙ্গেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম ঘর থেকে।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম মনে হয়েছিল, সীমান্তে যাওয়া দরকার। আমাকে একটা নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করা দরকার। আমি জামালপুর হয়ে সেখান থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে কামালপুরের তন্তর বলে একটা ভারতীয় ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তারপরের ইতিহাস ভীষণ লম্বা। সেগুলো আর বলতে চাই না। প্রায় আড়াই বছর আমি বাংলাদেশের সীমান্তে ছিলাম।’
বঙ্গবীর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে বড় বেশী ভালোবাসতাম। এখনও বাসি কিন্তু তখনকার বাসা আর এখনকার বাসা একটু পার্থক্য অবশ্যই আছে। এখন ভালোবাসাটা ছেলেদের মধ্যে, মেয়েদের মধ্যে, স্ত্রীর মধ্যে, দেশের মধ্যে, বাস্তব অবস্থার মধ্যে কিছুটা হলেও ভাগ হয়েছে। তখন এর কিছুই ছিল না। ৯০ ভাগ ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারে, তারা আমাকে হত্যা না করলে আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদিত না। আমি যে একেবারে সৎ, নিষ্ঠাবান, এটা প্রমাণ হয় না।
আমার মনে হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা। সেজন্য আমি প্রতিবাদ করেছিলাম, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। তারা যদি রাজনৈতিক রাস্তা খোলা রাখতো, তাহলে আমি রাজনৈতিকভাবেই করতাম।’
‘একটি জিনিস পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, যদি আমরা প্রতিবাদ না করতাম, আজকে যে আওয়ামী লীগ আছে, সে আওয়ামী লীগ থাকতো না। যদি খন্দকার মোশতাক দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতো, তাহলে খন্দকার লীগ হত, শেখ হাসিনা আজকে যে লীগকে পরিচালনা করছেন, সেটা হত না। আমরা সেজন্য প্রতিবাদ করেছিলাম, বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাকে (ফখরুল) এ ধরনের বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করলে কি ভুল হবে? তবে আমরা তা করতে চাই না। জনগণের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশকে স্বাধীন করার আহ্বান জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
১৭ আগস্ট, শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে কাদের এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাকে (ফখরুল) এ ধরনের বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করলে কি ভুল হবে? তবে আমরা তা করতে চাই না। জনগণের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মানুষের শক্তি যখন কমে, মনের জোরও তখন কমে যায়। আর তখন মুখের জোর বেড়ে যায়। বিএনপিরও সেটাই হয়েছে। আর তাই তারা সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় কথা বলছেন।
বিএনপি ওয়ান ইলেভেনের পরিবেশ তৈরির সকল ষড়যন্ত্র করছে। তবে দেশে আর সে পরিস্থিতি তৈরি হবে না। জনগণ বিএনপির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে। বিএনপি নামক সাম্প্রদায়িক দানব পার্টি যতদিন থাকবে, ততদিন তারা দেশে অশান্তির আগুন জ্বালাবে। এ দানবীয় শক্তির হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে।’
‘বিএনপিকে কারা কারা তলে তলে বাতাস দিচ্ছেন, তা আমরা জানি। বাতাস দেওয়া বন্ধ করুন। কারণ বিএনপির আন্দোলন মাঠে নেই, রয়েছে মিডিয়ায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে’, যোগ করেন কাদের।
১৭ আগস্টের দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৫ সালের এ দিনে দেশের ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে বিএনপি জামায়াতের সহায়তায় জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল। এ হামলার টার্গেট ছিল দেশের বিচারালয় ও সরকারি স্থাপনা। এ হামলায় দুইজন নিহত ও প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছিল।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।