বৈবাহিক সূত্রে পাক নাগরিক মাসুদা ভাট্টি নিয়ে নাটকের শুরু।
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৮,
লেখিকা ও সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করে বাজে মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। এছাড়াও একাত্তর টিভির যে লাইভ অনুষ্ঠানটিতে মাসুদা ভাট্টিকে তিনি ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দেন ওই অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও সমন্বয়কারী মিথিলা ফারজানার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। তবে আপত্তিকর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ দৈনিক আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ সহকারি সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি তা প্রত্যাখান করে ব্যরিস্টার মঈনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একাত্তর টিভির অফিসে মিথিলা ফারজানার কাছে পাঠানো চিঠিতে মঈনুল হোসেন লিখেছেন, পুরো বিষয়টির জন্য আমি বিব্রত। আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে প্রশ্ন করেন উনি (মাসুদা ভাট্টি)। ক্ষুব্ধ হয়ে রাগের মাথায় তার উদ্দেশ্যে বেফাঁস কিছু মন্তব্য করি। যেটা নিজের অজান্তেই হয়ে গেছে। এ ঘটনার জন্য আমি নিজে থেকেই মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছি।
সেনা নিয়ন্ত্রিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের অন্যতম এই উপদেষ্টা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় এই অবঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে চিঠিতে ভুল বোঝাবুঝি অবসানে মিথিলা ফারজানা ও একাত্তর টিভি কৃর্তপক্ষের সহযোগিতাও চেয়েছেন। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে ব্যারিস্টার মঈনুলের নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রাতে তাকে কল দেওয়া হলে রাজু আহমেদ নামে একজন নিজেকে ব্যারিস্টার সাহেবের পিএস দাবি করে বলেন, পুরো ঘটনার জন্য স্যার দুঃথ প্রকাশ করেছেন। ওই নারী সাংবাদিকের (মাসুদা ভাট্টি) সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে গেছে।
মিটমাটের বিষয়ে জানতে সাংবাদিক-কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। তবে তিনি (মঈনুল হোসেন) আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, এটা সত্য। ফোনে তিনি আমাকে বলেন, তুমি মনে কিছু নিও না, তোমার একটা প্রশ্ন আমাকে ভীষণ উত্তেজিত করে তুলে। উত্তেজিত অবস্থায় ভুল করে বাজে মন্তব্য করে ফেলেছি। তুমি এটা মনে রেখো না।
প্রচন্ড অপমানজনক এ ঘটনাটি সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে মাসুদা ভাট্টি বলেন, আমি সরাসরিই তাকে বলে দিয়েছি, এভাবে দুঃখ প্রকাশ করলে তো হবে না। আপনি টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে আমাকে কটূক্তি করেছেন, তাই আপনাকে প্রকাশ্যেই ক্ষমা চাইতে হবে।
একাত্তর টিভিতে গত মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণে অতিথি ছিলেন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ও সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। আলোচনায় স্টুডিওর বাইরে থেকে যুক্ত হোন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। আলোচনার ফাঁকে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর জবাবে ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি একজন চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।
লাইভ অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দাবি করা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের একজন নারী সাংবাদিককে গালি দেওয়ার প্রতিবাদে ফেইসবুকে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড় । এরই মধ্যে দেশের ১০১ জন বিশিষ্ট নারী মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মানহানিকর উক্তির জন্য ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাসুদা ভাট্টিকে ব্যারিস্টার মঈনুলের বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদে ১০১ বিশিষ্ট নারীর বিবৃতি
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৮,
একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ টকশোতে লেখিকা ও সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১০১ জন বিশিষ্ট নারী।
বুধবার (১৭ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে তার আপত্তিকর মন্তব্যে জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান তারা।
গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের র নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণে অতিথি ছিলেন দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি ও সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাত্তরের মিথিলা ফারজানা। আলোচনায় স্টুডিওর বাইরে থেকে যুক্ত হোন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। আলোচনার ফাঁকে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর জবাবে ব্যারিস্টার মঈনুল বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’
এরই প্রতিবাদে ১০১ জন বিশিষ্ট নারীর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি তার এই বক্তব্য নারীর জন্য অবমাননাকর, আপত্তিকর, চরম অসহনশীলতার পরিচায়ক। ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের মতো যারা রাজনৈতিক সহনশীলতার কথা বলেন, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের শব্দচয়ন উদ্বেগজনক বলে আমরা মনে করি।
এতে তারা মাসুদা ভাট্টি তথা নারীর জন্য মানহানিকর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ফরিদা ইয়াসমিন, মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী, ফাতেমা আবেদীন নাজলা, ফৌজিয়া সুলতানা, সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, নাসিমুন আরা হক মিনু, মুন্নী সাহা, ফরিদা ইয়াসমিন, মিথিলা ফারজানা, নাসিমা খান মন্টি, নবনীতা চৌধুরী, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, সুপ্রীতি ধর, রোজিনা ইসলাম, এলিটা করিম, উদিসা ইমন, আঙ্গুর নাহার মন্টি, ফারহানা মিলি, প্রিয়াঙ্কা আচার্য, ফাতেমা আবেদিন নাজলা, শারমিন রিনভী, নাদিরা কিরণ প্রমূখ।
জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বললেন মঈনুল
একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আলোচনায় ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন যুক্ত হলে উপস্থাপকের অনুমতি নিয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলেই এই প্রশ্ন তুলছেন যে, আপনি এই ঐক্যফ্রন্ট-এর অায়োজনে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না? তখন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন আমাকে ‘চরিত্রহীন’ বলে গাল দেন।
তার এই গালি শোনার পর যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে:
১. আজকে তফাজ্জল হোসেন মাণিক মিয়া বেঁচে থাকলে কী করতেন?
২. ১/১১-র সময়ে এর হাতে দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রের দায়িত্ব?
৩. এরাই করবে গণতন্ত্র উদ্ধার? যে গণতন্ত্রে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন গালি শুনতে হয়?
৪. আইন এক্ষেত্রে কী বলে?
৫. নারী বলেই চরিত্রহীন বলে গাল দেওয়া যদি এতোটাই সহজ হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতাসীন হলে নারীর অবস্থান কী হবে এদেশে?
৬. ড. কামাল হোসেনর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশে এরকম একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তিকে কী মানায়? এদের সঙ্গে মিলে ড. কামাল হোসেন কী গণতন্ত্র দেবেন আমাদেরকে? চরিত্রহীন বলার গণতন্ত্র?
৭. রাজনীতিকে এতোটা পঁচিয়ে কারা নিজেদের রাজনীতির বাইরের সুশীল সমাজ বলে ১/১১-র সরকার গঠন ও তাকে সমর্থন দিয়েছিল?