ফাঁসীর দিন রাতে আবদুল কাদের মোল্লার কথা কি ছিল।

June 3, 2018 5:45 pm0 commentsViews: 15

কথাটি শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের। আমি তখন উনার পাশে। একই রকম কথা অনেকে অনেক ভাবে শুনেছেন। আমি যখন শুনেছি তখন তার চেহারার মধ্যে এর পুরো প্রতিক্রিয়া দেখেছি। রায় কার্যকরের কিছুদিন আগের ঘটনা যখন রিভিউ এবং মারসি পিটিশান নিয়ে কথা হচ্ছিল সর্বমহলে। আমি সাক্ষাতের জন্য ইন্টার রুমে গিয়েছি। শনিবার আমার পারিবারিক সাক্ষাত। আমি ঢুকার কয়েক মিনিটের মধ্যে কাদের মোল্লা ভাই আসলেন। উনারও পারিবারিক সাক্ষাত ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার উনার পরিবারের লোকজনের সাথে সাক্ষাত হয়েছে শনিবারের কারনে। আমাদের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল আগে থেকে। বিশেষ করে মোল্লা ভাইয়ের স্ত্রী এবং মেয়েদের সাথে সাংগঠনিক কারনে আমার স্ত্রীর পূর্ব থেকে হৃদ্যতা। মোল্লা ভাইয়ের পূরো পরিবার সংগঠনের সাথে সক্রিয় এবং সংঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে অনেক হয়রানির শিকারও হয়েছেন। ছাত্রী বোনদের অফিস থেকে যখন একসাথে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন মোল্লা ভাইয়ের স্ত্রীও ছিলেন। পুলিশ অফিস ঘেরাও করার পর বোনদের সেখানে কোন রকম ভয় ভীতির পরোয়া না করে অভিভাবক হিসেবে হাজির হয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সবাইকে একসাথে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

মোল্লা ভাই ঢুকার কিছুক্ষন পর উনার স্ত্রী, ছেলে,মেয়ে, জামাই আসলো। আমার লোকজনও আসলো দেখা করার জন্য সাথে শিবিরের এই বিভাগে নিয়োজিত ভাইয়েরা। আমরা সাক্ষাতে আসলে একই সময়ে অন্য ভাইদের জন্য সাক্ষাতে আসা ভাইয়েরা সু্যোগে দেখা করে যায়। আজকে মোল্লা ভাই আছেন সেই সুযোগে আরো বেশী ভাই ভীড় করলেন। আমি মোল্লা ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের সালাম দিয়ে এক কর্নারে উনাকে নিরিবিলি কথা বলার সু্যোগ করে দিলাম। আমি একটু দূরে ভাইদের সাথে কথা বলছি। এই রুমটা ছোট এবং নিরিবিলি। মোল্লা ভাইকে কয়েদি কাপড় পরা অবস্থায় শিবিরের এই বিভাগের তৎকালীন সদস্য আলমগীর ভাই সালাম দিয়ে বললেন, “আপনাকে সাদা কয়েদী কাপড় পরা অবস্থায় জান্নাতী জান্নাতী লাগছে”। মোল্লা ভাই খুব সুন্দর করে হেসে বললেন, “দোয়া কর আল্লাহ যেন কবুল করেন”।

উনাদেরকে সরিয়ে এনে কথা বলছি। কথা বলার এক পর্যায়ে খুব জোরে মোল্লা ভাইয়ের চিৎকার শুনে আমরা থেমে গেলাম। পুরা ইন্টার রুম থমকে গেল। বাহির ভিতরে সাক্ষাত করতে আসা এবং কারারক্ষীরা সবাই নীরব হয়ে মোল্লা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো কিছু বলার সাহস হচ্ছেনা। আমরা তাকিয়ে থাকতে থাকতে উনি পুনরায় আবার বললেন, “কাদের মোল্লা শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত, প্রান ভিক্ষার জন্য না”। আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম এবং বুঝতে পারলাম উনার উত্তেজিত হওয়ার কারন। পরিবারের পক্ষ থেকে সম্ভবত এই বিষয়টি কেউ উঠিয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করিনা উনার পরিবারের সদস্যরা সত্যিকারের প্রান ভিক্ষার পক্ষে ছিলেন।হয়তোবা প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টি এসেছিল। কিন্তু উনার প্রতিক্রিয়ায় সবাই চুপ হয়ে গেল। উনার স্ত্রীর সেই কথা আমার এখনো কানে বাজে। সাক্ষাতের এক ফাঁকে উনি বার বার বলছিলেন , “তুমিতো সফল, তুমি শহীদ হয়ে জান্নাতের দিকে চলে যাচ্ছ, আমাদের কি হবে”। আমি অবাক হয়ে শুনলাম। কেবল মাত্র আল্লাহ যাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দিয়েছেন তারাই কেবল এ কথা বলতে পারে। আল্লাহর দেয়া ওয়াদাকে যারা বিশ্বাস করে এবং তাঁর রহমতের উপর আস্থা রাখে, বাতিলের আঘাত ষড়যন্ত্র যাদের হৃদয়ে এতটুকু কাঁপন ধরাতে পারেনা তারাই অনাগত প্রজন্মের জন্য সাক্ষী হতে পারে।

উনার স্ত্রীর সাক্ষাত শেষে আমাকে যা বললেন তাতে আরো অবাক হলাম। উনার সাথে সাক্ষাত শেষ করে যখন চলে যাবেন তখন আমি বললাম “আপনারা উনার জন্য কোন টেনশান করবেন না, উনি এখানে ভাল আছেন, আগে যেখানে ছিলেন সেখানে আছেন, আমরা সবাই খোজ খবর রাখছি”। আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বললেন, “ বাবা ওর জন্যতো টেনশান করিনা, ওর বয়স হয়ে গিয়েছে। আমাদের সব চিন্তা টেনশান তোমাদের মত যুবক, তরুণদের জন্য, তোমাদেরকে ধরে এনে আটকিয়ে রেখেছে”সেই সাথে উনার গলা ধরে আসলো,চোখে পানি টলমল। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। অনেক শ্রদ্ধা গর্বিত স্ত্রী, গর্বিত মা এবং গর্বিত সন্তানদের জন্য। আপনারা আমাদের প্রেরণা। আল্লাহ আপনাদের হৃদয়কে আরো প্রশান্ত রাখুন। আমীন।। আমার বার বার মনে হচ্ছে আমাদের প্রিয় সেই ইসলামী সঙ্গীত- “আমাকে দাও সে ঈমান আল্লাহ মেহেরবান , যে ঈমান ফাঁসির মঞ্চে অসঙ্কোচে গায় জীবনের গান”

লেখক-ডা:মো:ফখরুদ্দিন মানিক , সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ,মুল- কারাগারের ডায়েরী থেকে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com