পরকীয়া প্রেম যেন ‘পরের বাড়ির পিঠা’র মতই স্বাদে ভরা।।

February 24, 2018 7:17 am0 commentsViews: 33

পরকীয়া প্রেমটা যেন ‘পরের বাড়ির পিঠা’র মতই রস-স্বাদ আর গন্ধে ভরা। নিজের বাড়ির পিঠা-পুলি খেতে রসনায় স্বাদ জোটে না, অথচ পরের বাড়ির পিঠার গন্ধ নাকে লাগলেই ওই রসনাই আকুলি-বিকুলি করতে থাকে! পরকীয়ার ব্যাপারটিও এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন। নিজের স্বামী অথবা স্ত্রী সংসারের গৌরবময় জীবন অনেকের কাছে গতহওয়া ক্যালেন্ডার বা ঠাণ্ডা চায়ের মতো মনে হয়। তাই অন্য নারী অথবা অন্য পুরুষেরা তাদের কাছে হয়ে ওঠে আরাধ্য ধন! নিজের স্বামী, সংসার আর সন্তান-সন্ততি নিয়ে তো বেশ আছো, তারপরেও কেন পরকীয়ার এই পঙ্কিলতায় পা ঢুকিয়ে দেয়া!

জীবন-যৌবনের সব সুখ তো আল্লাহ তা‘আলা রেখেছেন বিবাহের পবিত্র বন্ধনের মধ্যে। এই ভাল পথ ছেড়ে কেন মন্দ পথে কদম চালানো? আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেনঃ

﴿ مُحۡصَنَٰتٍ غَيۡرَ مُسَٰفِحَٰتٖ وَلَا مُتَّخِذَٰتِ أَخۡدَانٖۚ ﴾ [النساء: ٢٥]

… যাদের বিয়ে করবে তারা হবে পবিত্রা। ব্যভিচারিণী কিংবা উপস্বামী (পরকীয়ার স্বামী) গ্রহণকারীণী হবে না।’ [সূরা নিসা, আয়াতঃ ২৫]

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বিয়ে করার মূল উদ্দেশ্য এবং বিবাহিত নারী-পুরুষের মৌলিক গুণ কী হবে- তা বলে দিয়েছেন। আয়াতে কঠোরভাবে নিন্দা করা হয়েছে উপপত্নী কিংবা উপস্বামী গ্রহণ করতে। আর আজকের সমাজ এ মারাত্মক সমস্যার মরুভূমির চোলাবালিতে আটকে তা থেকে উদ্ধারের জন্য পা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় কী?

এ প্রশ্নের জবাব হয়ত একেকজন একেকভাবে দেবেন। একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি হবে একেক রকম। কিন্তু এক জায়গায় এসে সবাইকে একথা মেনে নিতে হবে যে, সামাজিক এ অশান্তির বিরাট এক দায়ভার পরকীয়ার, যার বাজার গরম করে তুলেছে বল্গাহীনও মুক্তবাসের অভিশপ্ত জীবন। নিচের ঘটনাটা দেখুনঃ

তিনি একজন নারীকল্যাণ সংস্থার সভানেত্রী। কাজ করেন নারীদের কল্যাণের জন্য। নাম রহিমা খাতুন লিজা। মহিলার বয়স পঁয়ত্রিশের ওপরে কত হবে তা বলতে পারব না। তবে কম যে হবে না নিশ্চিত। মৌ ও দোলা নামের দু’ কন্যা সন্তানের জননী তিনি। স্বামী আব্দুল জলিল ভুঁইয়া। স্বামী যে তাকে অর্থকষ্টে রেখেছেন তাও নয়। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তিনতলা বিল্ডিংয়ের মালিক আব্দুল জলিল। বস্তুজগতের বাজারে এ বাড়িটির মূল্য নেহায়েত কম নয়। তাই সম্ভবতই তিনি গর্বিত, আপ্ল ‍ুত, উচ্ছসিত। কিন্তু এক জায়গায় এসে তার সকল উচ্ছ্বাস, আবেগ আর অনুভূতি থেমে যায়। ঘরের জগতটা তার কাছে স্রোতহীন, পানিবিহীন এক মরা খালের মত নির্লিপ্ত মনে হয়। কারণ, যার বুকের ভেতর তিনি ভালবাসার উত্তাল ঢেউ আশা করেছিলেন, সেই বুক এখন তার জন্য কেবলই মরিচিকা। এ মরীচিকা তাকে ভালবাসা দেবার নামে যমের ঘরে নিয়ে যায়। কেননা, তিনি আজ শিকলে বন্দী। স্ত্রী লিজা নিজ হাতে তাকে বন্দী করে রেখেছেন। দুঃস্বপ্নে কেঁপে ওঠেন তিনি। নিজ বাড়িকে তার কাছে থেমে-থেমে গুয়ান্তানামো বে আর আবূ গারিবের মত কারাগারই মনে হয়। চার চারটি দিন কেটেছে তার ইনজেকশনের নির্মম ব্যথায়। এ যেন ইংরেজ জন্তুদের নির্যাতনকেও হার মানায়!

স্ত্রী লিজা আজ আমেরিকান হায়েনাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। যে স্ত্রী এক সময় তাকে লুকিয়ে মা-বাবাকে আড়াল করে সিদ্ধ ডিম আর সুস্বাদু শরবত খাওয়াতেন, আজ তিনি স্বামীকে করেছেন বন্দী! কেন? কারণ, ওই পরের বাড়ির পিঠার স্বাদ!

ঘটনাটা এমনঃ আবদুল জলিল বাড়ির নিচতলা ও দোতলা ভাড়া দিয়েছিলেন। আর তিনতলায় থাকতেন তিনি নিজে পরিবার নিয়ে। এ তিনতলারই দু’টি রুম অফিসরুম হিসেবে ব্যবহার করতেন লিজা। অফিসটা ছিল ‘নারী কল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের। অফিসের ম্যানেজার ছিলেন দিপু ভূঁইয়া। প্রায় ৩৫ বছরের কাছাকাছি বয়সের একজন নারী প্রেমে পড়লেন যুবক দিপুর। ভুলে গেলেন স্বামী সন্তান আর সংসারের পবিত্র বন্ধনের কথা। শুধু মনের আদান-প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকেন না তারা। মেতে ওঠেন পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য পাপকর্মে। হয়ত বহুদিন চলেছে তাদের এ অভিসারযাত্রা। বহুদিন ভেসেছেন পাপসাগরে। ডুবে-ডুবে খেয়েছেন ঘোলাজল। ‘দশদিন চোরের, গৃহস্থের একদিন’ কথাটার সত্যতা প্রমাণের জন্যই কিনা একদিন তারা অভিসাররত অবস্থায় ধরা পড়লেন গৃহকর্তা আবদুল জলিলের হাতে। নিজ স্ত্রীকে এমন পাপদৃশ্যে দেখতে কার ভাল লাগে? ভাল লাগল না বলেই তিনি প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যে যুগ-যমানা পড়েছে, তাতে গৃহস্থ চোরকে আর শাসন করতে পারে না এখন আর! এখন চোরই উল্টো গৃহস্থকে শাসন করে! তাই লিজা- দিপু কোন রিস্ক নিতে গেলেন না। ‘কেন বাপু তুমি আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছ’ বলে তাকে মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হল। শুধু তা-ই নয়, অভিসারের নীরবদর্শক আব্দুল জলিলকে বাঁচিয়ে রাখা নিরাপদ মনে করলেন না স্ত্রী লিজা। তাই স্বামীর ওপর চালালেন অমানুষিক নির্যাতন। লোহার মোটা রড দিয়ে ইচ্ছে মত পেটালেন। কিন্তু একি! এ যে কৈ মাছের প্রাণ! মারার চেষ্টা ব্যর্থ হলে আরেক পন্থা অবলম্বন করলেন তিনি। ঘটনা যাতে ফাঁস না হয়, সে জন্য স্বামীর দেহে পুশ করলেন একে একে চেতনা নাশক ৪টি ইনজেকশন। এবার বেটা যাবে কই? আধামরা, অচেতন হয়ে নিজ ঘরে চারদিন মৃতাবস্থায় পড়ে থাকলেন আব্দুল জলিল।

চারদিন আব্দুল জলিলের কোন খোঁজখবর না পেয়ে এলাকার লোকজন কৌতুহলী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এলাকাবাসী স্ত্রীর গুয়ান্তানামোবে কারাগার থেকে উদ্ধার করে স্বামী আব্দুল জলিলকে।

পত্রিকায় রিপোর্ট করেছে, স্বামী আব্দুল জলিলকে এক সময় খুব ভালবাসতেন স্ত্রী লিজা। গোপনে সবার অলক্ষ্যে তাকে ডিম খাওয়াতেন, ক্লান্তদেহে বাড়ি ফিরলে চির কোমল স্ত্রীসেবা নিয়ে তার কাছে ছুটে যেতেন। বুকে স্বামী প্রেমের ঝড় উঠত তার। কোমল ঠাণ্ডা পানি পরিবেশন করতেন স্বামী সমীপে। সোহাগ দিয়ে, আদর দিয়ে মধুময় করে তুলতেন দাম্পত্যের পবিত্র বন্ধন।

কিন্তু আজ তা ধূসর অতীত। আল্লাহয়ী বিধান লঙ্ঘনের একটি অগ্নিশলাকা তাদের এই ভালবাসার সবুজভূমিকে মরুপ্রান্তরে পরিণত করেছে। যুবক দিপুর সঙ্গে মেলামেশা লিজার মন থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বামীর পবিত্র ভালবাসা। বেপর্দা থেকে প্রেম আর প্রেম থেকে অবৈধ মিলন। অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে ভালবাসার পূণ্যভূমি।

এদিকে ধর্মের অপব্যবহার দেখুন! এ অনৈতিক সম্পর্কের স্বাদ আস্বাদন করতে প্রায়ই ঠেকে যেতেন লিজা। স্বামী-সংসারে তো আর প্রকাশ্যে এ সব কাজ করা যায় না! লিজা নিজেও তা বোঝেন। তাই প্রায়ই স্বামীকে দূরে রাখার কৌশল আঁটতেন তিনি। তাকে দ্বীনকর্ম করার পরামর্শ দিতেন। এভাবে তাকে তিন দিন, সাত দিন এবং চল্লিশ দিনের জন্য তাবলিগে চিল্লায় পাঠিয়ে দিতেন। সরল মনে স্ত্রীকে বিশ্বাস করে তিনি যখন চিল্লার জন্য বের হতেন, তখন লিজার খুশি ধরত না। দিপুকে সঙ্গে নিয়ে মেতে উঠতেন আদিম সুখে। পরম অবৈধ-সুখ অভিসারে! তিনি নিজেও অনেক সময় ট্রেনিংয়ের কথা বলে পাঁচ দিন, সাত দিন করে ঢাকায় গিয়ে থাকতেন। এ সময় লিজার ওপর স্বামী আব্দুল জলিলের কোন অধিকার থাকত না।

পাঠক! এবার আসুন আমরা এ ঘটনার পোস্টমার্টেম করি। আপনি জেনেছেন যে, লিজা এক সময় স্বামী আব্দুল জলিলকে অত্যধিক ভালবাসতেন। প্রাণভরে সেবা করতেন। কিন্তু কিসে আজ তাকে এত হিংস্র করে তুলল? কিসে তাকে স্বামীর গলায় শিকল ঝুলানোর শক্তি জোগাল? ওই যে বেপর্দা! অবৈধ মেলামেশা! পরকীয়া এবং ইলাহী বিধান লঙ্ঘন! [তথ্যসূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ, ৪ অক্টোবর ২০১০]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com