পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মুমিনের ৫০টি গুণাবলী
অনুলিখন ও পরিমার্জনাঃ নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।
পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করে মোটামুটি ভাবে মুমিনের এ সব গুণাবলী’র উল্লেখ পাওয়া যায়। আয়াত সমূহের অনুবাদ মূলতঃ বিশ্বের অন্যতম খ্যাতিমান ইসলামি চিন্তাবিদ আবুল আ”লা মওদূদী (রহ) এর জীবনের সবচেয়ে বিশাল কর্ম ‘তাফহীমুল কোরআন’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এ সব আয়াতগুলো ছাড়া আরও কোন আয়াত কারও নিকট প্রয়াজনীয় অনুভূত হলে মন্তব্য হিসেবে পেশ করতে পারেন। তবে ব্যাখ্যার জন্য সরাসরি ‘তাফহীমুল কোরআন’ বা অন্য কোন নির্ভরযোগ্য অনুবাদকের লেখা খুঁজতে পারেন। অনলাইনে ডাউনলোড করে পুরো ‘তাফহীমুল কোরআন’ সব সময় অধ্যাায়ন করতে পারেন এবং সে জন্য কোন পে করা লাগবে না, অর্থাৎ সেটি পারবেন ফ্রি। দেখি এবার মুমিনের ৫০টি গুণাবলী কী কীঃ
০১. আল্লাহ তা’লার নাম নিলে ভয়ে অন্তর কেঁপে উঠবেঃ
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ﴾
সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে৷ আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় ২ এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে৷ (সুরা আনফাল ২)
০২. আল্লাহ তা’লার সাথে কখনও শিরক করবে নাঃ
لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ
তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না। (সুরা আল ফুরকান ৬৮)
০৩. জিনা (ব্যভিচার) করবে নাঃ
وَلَا يَزْنُونَ
ব্যভিচার করে না৷ (সুরা ফুরকান ৬৮)
০৪. নিজেদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করেঃ
﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ﴾
নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সুরা মুমিনুন ৫)
০৫. খুশু সহকারে নামাজ আদায় করেঃ
﴿الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ﴾
যারা নিজেদের সলাতে বিনয়াবনত হয়,
﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ﴾
এবং নিজেদের সলাতগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে,
( সুরা মুমিনুনঃ ২ ও ৯)
০৬. পিতামাতার প্রতি উফ শব্দও করবে নাঃ
فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ
তাদেরকে “উহ্” পর্যন্তও বল না (সুরা ইসরাঃ ২৩)
০৭. অযথা এবং বাজে কাজ থেকে দূরে থাকবেঃ
﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ﴾
বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে। (সুরা মুমিনুন ৩)
০৮. জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।
وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا. আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। [ সুরা নিসা আয়াত৭৫ ]
০৯. কখনই ধারণা করে কাজ করবে নাঃ
﴿وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ ۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ﴾
এরা বলেঃ জীবন বলতে তো শুধু আমাদের দুনিয়ার এই জীবনই৷ আমাদের জীবন ও মৃত্যু এখানেই এবং কালের বিবর্তন ছাড়া আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না৷ প্রকৃতপক্ষে এ ব্যাপারে এদের কোন জ্ঞান নেই৷ এরা শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে এসব কথা বলে৷। (সুরা জাসিয়াঃ ২৪)
১০. মূর্খদের সাথে কখনও তর্কে লিপ্ত হয় নাঃ
وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا﴾
মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে সালাম বলে দেয় (সুরা ফুরকান ৬৩)
১১. নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করে নাঃ
وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ
যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা (সুরা মায়েদাঃ ৫৪)
১২. কখনও মিথ্যা কথা বলবে নাঃ
﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ﴾
নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে
১৩. আমানতের খিয়ানত করবে না।
আল্লাহ তোমাদেরকে যাবতীয় আমানত তার মালিকদের (হকদার) নিকট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। (সুরা নিসাঃ ৫৮)
১৪. প্রতিশ্রুতি দিলে রক্ষা করবে।
وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا
যারা অংগীকার করে তা পূর্ণ করবে (সুরা বাকারা ১৭৭)
১৫. পরিপুর্ণ ভাবে যাকাত আদায় করবে।
وَآتَى الزَّكَاةَ
যাকাত দান করবে (সুরা বাকারা ১৭৭)
১৬. ইয়াতিমের হক নষ্ট করবে না।
﴿وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ
এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও৷ (সুরা নিসা ২)
১৭ রাস্তায় অবস্থানরতদের সাহায্য করবে।
لَيْسَ
الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে পুণ্য নেই;কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণকে বিশ্বাস করলে এবং অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, (এতীম-মিসকীন) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে, নামায যথাযথভাবে পড়লে ও যাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং ধর্মভীরু। (সুরা বাকারাঃ ১৭৭)
১৮. কাফিরদের সাথে কঠিন আর মুমিনদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করবে।
أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ৫২ এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ৷ (সুরা ফাতহঃ ২৯)
১৯. মানুষের ভুল ভ্রান্তিকে ক্ষমা করবে।
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ
অন্যের দোষক্রটি মাফ করে দেয়৷ (সুরা আলে ইমরানঃ ১৩৪)
২০. সর্বাবস্থায় কেবল মাত্র আল্লাহতালার উপরই নির্ভর করবে।
“যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! অতঃপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত ও অনুগ্রহসহ। কোনো মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৩-১৭৪)
২১. কেবল মাত্র মুমিনদেরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে।
لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ (28) قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (29)
“মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে,তাদের সঙ্গে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর,তাহলে তাদের সঙ্গে সাবধানে মিশবে। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নির্দেশ অমান্য করার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন এবং জেনে রাখ তোমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে।” (আল ইমরানঃ ২৮)
“হে নবী! আপনি মুসলমানদেরকে বলুনঃ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমরা গোপন কর অথবা প্রকাশ কর আল্লাহ তা জানেন এবং আসমান ও জমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তাও জানেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (৩:২৯)
২২.অভাব অনটন এবং সচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় দান করবে।
﴿الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّا
যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে (আলে ইমরানঃ ১৩৪)
২৩.রাগান্বিত হলে রাগকে দমন করবে।
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ
যারা ক্রোধ দমন করে (আলে ইমরানঃ ১৩৪)
২৪. অন্যদের উপাস্যকে গালি দেবে না।
﴿وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ
আর ( হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না৷ (আনআমঃ ১০৮)
২৫. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করবে না।
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, ন্যায় সংগতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস কর না৷ (আনআম ১৫১)
২৬. আল্লাহর আয়াতকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা যাবে না।
لَا يَشْتَرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا
আল্লাহর আয়াতকে সামান্য দামে বিক্রি করে না৷ (আলে ইমরানঃ ১৯৯)
২৭. মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত কর না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা কর না৷
﴿وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
মিথ্যার রঙে রাঙিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত কর না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করার চেষ্টা কর না৷ (বাকারাঃ ৪২)
২৮. মানুষকে একথা বলতে পারবে না যে ‘’তুমি মুমিন নও’’।
ً ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا
হে ঈমানদারগণ ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য বের হও, তখন বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে পার্থক্য কর এবং যে ব্যক্তি সালামের মাধ্যমে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসে, তাকে সংগে সংগেই বলে দিও না যে, তুমি মুমিন নও৷ (সুরা নিসাঃ ৯৪)
২৯. কোন নবী রাসুলের মধ্যই পার্থক্য করবে না।
﴿قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ﴾
হে মুসলমানরা!তোমরা বলো, “আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, যে হিদায়াত আমাদের জন্য নাযিল হয়েছে তার প্রতি এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল , ইসহাক , ইয়াকুব ও ইয়াকুবের সন্তানদের তাদের রবের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল তার প্রতি ৷ তাদের করোর মধ্যে আমরা কোন পার্থক্য করি না৷ আমরা সবাই আল্লাহর অনুগত মুসলিম ৷” (বাকারাঃ ১৩৬)
৩০. পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করবে।
﴿وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا
রহমানের (আসল) বান্দাহ্ তারাই , যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে। (ফুরকানঃ ৬৩)
৩১. সঠিকভাবে ওজন করবে ওজনে কম দেয় না।
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ﴾
ধবংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়৷
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ
ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ কর। (আনআমঃ ১৫২)
৩২.হালাল এবং পাক পবিত্র জিনিস ভক্ষণ করবে।
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾
হে মানবজাতি ! পৃথিবীতে যে সমস্ত হালাল ও পাক জিনিস রয়েছে, সেগুলো খাও এবং শয়তানের দেখানো পথে চল না। (বাকারাঃ ১৬৮)
৩৩. কখনই মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করবে না।
﴿وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا﴾
(আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়৷ (ফুরকানঃ ৭২)
৩৪. পেঁচিয়ে কথা বলবে না।
وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا﴾
আর যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা সত্যতাকে পাশ কাটিয়ে চল, তাহলে জেনে রাখ, তোমরা যা কিছু করছ, আল্লাহ তার খবর রাখে ন৷ (নিসাঃ ১৩৫)
৩৫. মানুষকে ন্যায়সঙ্গত ভাবে শাসন করবে।
﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا﴾
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তদপরি আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায়। আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি, কিন্তু কতককে প্রত্যাক্ষান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃত পক্ষে তারাই কাফের। আর যারা কাফের তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আযাব। (সূরা নিসাঃ ১৫০-১৫১)
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
﴿وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ﴾
যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার পরিচালনা করে না, তারা কাফের। (সূরা মায়েদাহঃ ৪৪)
৩৬.অভাব অনটনের কারণে সন্তান হত্যা করবে না।
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ
দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা কর না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেব। (আনআমঃ ১৫১)
৩৭. কখনই শপথ ভঙ্গ করবে না।
﴿وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ﴾
আল্লাহর অঙ্গিকার পূর্ণ কর, যখনই তোমরা তাঁর সাথে কোন অঙ্গিকার কর এবং নিজেদের কসম দৃঢ় করার পর আবার তা ভেঙে ফেল না, যখন তোমরা আল্লাহকে নিজের ওপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছ৷ আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত৷
৩৮. মান্নত পূরণ করবে ।
وفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا﴾
এরা হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে )মানত পূরণ করে, সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে৷ (দাহর ৭)
৩৯. আল্লাহকে প্রদত্ত ওয়াদা পালন করে।
﴿الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ الْمِيثَاقَ﴾
আর তাদের কর্মপদ্ধতি এমন হয় যে, তারা আল্লাহকে প্রদত্ত নিজেদের অঙ্গিকার পালন করে এবং তাকে মজবুত করে বাঁধার পর ভেঙ্গে ফেলে না৷ (সুরা রাদ ২০)
৪০. নিকটাত্মীয়দের সাহায্য করবে। ( বাকারা ১৭৭)
৪১. অসুস্থ এবং পথচারীদের সাহায্য করবে।
(বাকারাঃ ১৭৭)
৪২. নিঃস্ব এবং দরিদ্রদের সাহায্য করবে।
(বাকারা ১৭৭)
৪৩. দুঃখ, দুর্দশা এবং যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করবে।
(বাকারা ১৭৭)
৪৪. আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক থেকে দান করে।
﴿الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ﴾
তারা নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে ( আমার পথে) খরচ করে৷ (আনফাল ৩)
৪৫. রাতে কম ঘুমায়।
﴿كَانُوا قَلِيلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ﴾
রাতের বেলা তারা কমই ঘুমাত৷ (যারিয়াতঃ ১৭)
৪৬. চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকবে।
سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ
তোমরা যখনই দেখবে, তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান, যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়৷ (ফাতহঃ ২৯)
৪৭. মানুষকে সৎ কাজের উপদেশ এবংঅসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিবে।
﴿كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ﴾
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাক, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আন৷ (আলে ইমরানঃ ১১০)
৪৮. এমন বিষয়ে প্রশ্ন করবে না, যেটা প্রকাশ হয়ে পড়লে তারা লজ্জিত হবে।
لَا تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ
হে ঈমানদারগণ ! এমন কথা জিজ্ঞেস কর না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করে দেয়া হলে, তোমাদের খারাপ লাগবে৷ (মায়েদাহঃ ১০১)
৪৯. কাজ করার পূর্বে সভাসদদের সাথে পরামর্শ করবে।
وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ
নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়। (শুরাঃ ৩৮)
৫০. বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে।
﴿وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنتَصِرُونَ﴾
তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করা হলে তার মোকাবিলা করে৷ (শুরাঃ ৩৯)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এ আয়াতসমূহের আলোকে জীবন গঠন করার তওফিক দান করুন। আমিন।