পক্ষপাতদুষ্টে অভিযুক্ত এাটর্নি জেনারেলকে হুঁশিয়ারি-’টাইম উল কাম’।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিলের শুনানি হট্টগোলের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি হয়।
শুরুতেই বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এর পর একে একে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাওদুদ আহমদ শুনানি করেন। পরে বক্তব্য দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
সব শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুনানি শেষ হয়। তাঁর বক্তব্যের সময় আদালতে প্রচণ্ড হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আদালত এজলাস ছেড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমি এ রকম একটি মামলা পেলাম না, যেখানে হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট ইন্টারফেয়ার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুদকের মামলা হাইকোর্ট বাতিল করে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুদক বা সরকার কেউ আপিল বিভাগে আসেনি। তাঁর বিরুদ্ধে তো আসতে পারত।’
‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, মেডিকেল রিপোর্ট পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হয়নি। দেখা করতে গেলে ১০টি সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। তাও দেখা না করে ফিরে আসতে হয়। উনার হাত ফুলে গেছে, ঘাড় ব্যথা, তাই উনি নড়াচড়া করতে পারেন না। অথচ অ্যার্টনি জনারেল বললেন, উনি রেস্টে আছেন! বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য; কারাগার থেকে বলা হয়, আনফিট। এ কারণে খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করা হয় না। তাহলে আমরা কোথায় যাব।’
এ সময় জয়নুল আবেদীন অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মি. অ্যাটর্নি, টাইম উইল কাম।’
জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আপনাদের বিবেক আছে, চোখ আছে, সামনে অনেক বই আছে… মানুষের জন্য কোর্ট, কোর্টের জন্য মানুষ নয়। সে অনুযায়ী বিচার করবেন। মাই লর্ড, জুডিশিয়ারি রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। রাষ্ট্র যদি এভাবে করে, তাহলে কীভাবে রক্ষা পাবে।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদেরও তো দায়িত্ব আছে।’ জয়নুল আবেদীন তখন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকারে গেলে আপনারাও তাই করবেন।’ এ সময় আদালত কক্ষে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। খানিক পরেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এরপর জয়নুল আবেদীন পুনরায় তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি আদালতে বলেন, ‘মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে দুদকের মামলায় ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু এ মামলায় হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন এবং পরে মামলাটি বাতিল হয়। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে সরকার বা দুদক কেউ আপিলে আসেনি। তাই আমি বলব, আপনি দয়া করে অসুস্থতা বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার জামিন দেন।’
‘তিনি (খালেদা জিয়া) একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পাবলিক পারসেপশন বুঝতে হবে। মাই লর্ড, আমরা বাইরে যতই বক্তব্য দিই, সবাইকে কিন্তু কোর্টে আসতে হয়। কোর্টের বিরুদ্ধেও বলি; কিন্তু তারপরও কোর্টে আসতে হয়। দয়া করে জামিন বিষয়টি বিবেচনা নেবেন। আমি কথাগুলো এ জন্য বলছি, আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি। বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোর্ট পরিচালনা করা যায় না। এই কথাগুলো আপনারাও বলেন।’
জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, ‘আরেকটি বিষয় মাই লর্ড, এ মামলায় সাজা প্রদানকারী বিচারক একবারও বলেননি, এতিমের টাকা চুরি হয়েছে। কিন্তু একটি বড় জায়গা থেকে বারবার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বলা হচ্ছে, এতিমের টাকা চুরি করছেন। এ বিষয়ে আপনি একটি আদেশ দেন।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘এ মুহূর্তে তো এটার শুনানি হচ্ছে না।’ এরপর জয়নাল আবেদীন শুনানি শেষ করেন। এরপর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শুনানি শুরু করেন