নয়া উপায়ে পিতৃত্বের স্বাদ, সন্ধানে সঙ্গিনীহীন পুরুষেরা

September 3, 2018 9:33 pm0 commentsViews: 22

 

[শহুরে জীবনে ক্রমশ বেড়ে চলা নিঃসঙ্গতাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ]

প্রায়ই খবরের শিরোনামে এসে থাকেন পরিচালক কর্ণ জোহর। কিন্তু মাস তিনেক আগে যে কারণে তিনি শিরোনামে আসেন, তার সঙ্গে সিনেমার সম্পর্ক নেই। যমজ সন্তানের বাবা হয়েছেন কর্ণ। বিয়ের খবর আসেনি, জানা যায়নি কোনও সঙ্গিনীর কথাও। তবে? এর উত্তর, সারোগেসি। আধুনিক এই পদ্ধতিতেই দুই সন্তানের বাবা হয়েছেন কর্ণ। এর কিছুদিন আগে একই মাধ্যমে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অভিনেতা তুষার কপূরও।
কর্ণ বা তুষারের মত তারকারাই শুধু নন, সারোগেসি এবং দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে পিতৃত্বের স্বাদ পেতে আগ্রহী এখন অনেক ‘সিঙ্গল’ পুরুষই। একা মহিলারা এক-দেড় দশক আগে থেকেই এগিয়েছেন এ পথে। এ বার পুরুষদের নতুন অভিযানের পালা। সঙ্গিনী ছাড়াই পিতৃত্বের সুখ খুঁজছেন বহু শহুরে পুরুষ। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর পাশাপাশি এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে কলকাতাও।
বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিয়ে করতে দেরি হচ্ছে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের পরে আবার সম্পর্কের জটিলতায় ঢুকতে চাইছেন না, এমন বহু পুরুষ কোনও মহিলার ডিম্বাণু এবং গর্ভ ধার নিয়ে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞেরা জানান, এই পদ্ধতিকে জেস্টেশনাল সারোগেসি বলা হয়। যেখানে এক জন ডিম্বাণু দাতার প্রয়োজন হয়। ইচ্ছুক পুরুষের শুক্রাণু ও সেই ডিম্বাণু নিয়ে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতিতে পরীক্ষাগারে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। পরে এক জন সারোগেট মায়ের গর্ভে তা প্রতিস্থাপন করা হয়। সেখানেই বড় হয় ভ্রূণ।

তবে তার আগে চলে টানা কাউন্সেলিং। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইচ্ছুক কেউ যোগাযোগ করলে দীর্ঘ কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাঁদের। বাবা হওয়ার মতো মানসিকতা রয়েছে কি না, শিশুর মানসিক, শারীরিক, নৈতিক দেখভাল করার জন্য তিনি প্রস্তুত কি না, সবই খতিয়ে দেখা হয়। বাড়ির অন্য সদস্যদের নিয়ে যৌথ কাউন্সেলিংও হয়। শিশুর বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পুরো পরিবারেরই অবদান থাকে। তাই পরিবারের সকলে কতটা প্রস্তুত, তা ভাল ভাবে বুঝে তবেই এগোনো হয়।
কেন বাড়ছে এমন সিদ্ধান্তের প্রবণতা? শহুরে জীবনে ক্রমশ বেড়ে চলা নিঃসঙ্গতাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায়ের মতে, মানুষ তো সঙ্গী চাইছেন। এ ক্ষেত্রে সন্তানের রূপেই সেই সঙ্গীর সন্ধান প্রকাশ পাচ্ছে। খুব অল্পবয়সী অনেকেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানালেন বন্ধ্যত্ব চিকিৎসক সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে চিরাচরিত সম্পর্কে না গিয়ে অনেকে এ পথে হাঁটছেন বলে মনে করেন তিনি।
তবে এ ক্ষেত্রে রয়েছে আইনি জটও। যেমন আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানাচ্ছেন, ‘সিঙ্গল’ পুরুষদের দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। কিন্তু সাধারণত কন্যাসন্তান দত্তক দেওয়া হয় না একা বাবাকে। সারোগেসি নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে সারোগেসি (রেগুলেশন) বিল আনা হলেও সেটি এখনও সংসদীয় কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায়। এখন অবিবাহিত কোনও পুরুষের এ ভাবে বাবা হওয়া বেআইনি না হলেও বিল পাস হওয়ার পরে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পাবেন শুধুই বিবাহিত দম্পতিরা। এই সুযোগ পাবেন না অবিবাহিত, সমকামী বা লিভ ইন সম্পর্কে থাকা কেউ।
আইনে কিছু জট থাকার কারণে অবিবাহিত পুরুষদের এ ভাবে সন্তানলাভে সাহায্য করে উঠতে পারছেন না অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই। বন্ধ্যত্ব চিকিৎসক রোহিত গুটগুটিয়া ও মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় যেমন জানান, সন্তানলাভের অধিকার সকলের আছে। অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম ও প্রকৃত উৎসাহী কেউ সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান চাইলে তাতে আপত্তির কারণ থাকতে পারে না। অনেকই পুরুষই এ নিয়ে জানতে চান তাঁদের কাছে। কিন্তু আইনগত অস্পষ্টতার কারণে অনেককেই ইচ্ছে সত্ত্বেও শেষমেশ পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। এই অনিশ্চয়তা না থাকলে সারোগেসির মাধ্যমে অবিবাহিত পুরুষদের বাবা হওয়ার চল এত দিনে আরও বাড়ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
প্রশ্ন যদিও আছে আরও। কোনও মায়ের সাহায্য ছাড়াই একা পুরুষেরা সন্তানকে বড় করে তোলায় কতটা দক্ষ হবেন? মায়ের অভাব খুব প্রকট হয়ে ওঠে না তো এমন ক্ষেত্রে?
প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘সন্তানপালনের বিষয়টি সময়, ধৈর্য এবং ব্যক্তিগত দক্ষতার ব্যাপার। মানিয়ে নেওয়া এবং শিখে নেওয়ার বিষয় এটি। যিনি সন্তান চাইছেন, তিনি সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত বলে ধরা যায়। মায়েরা যখন একা সন্তানপালন করতে পারছেন, বাবারাও পারবেন। কেউ একা সন্তানপালন করলে সন্তানের জীবনের মান কমে যায় না। বাচ্চারাও শুধু বাবা অথবা শুধু মাকে থাকতে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায়। শহুরে জীবনে অন্যকে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কম। তাই বেশি দিন বিষয়টি নিয়ে ছুৎমার্গ থাকবে না।’’
সুদর্শনবাবু আবার বলেন ‘‘মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমাজ তো বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আইনি বাধা না থাকলে কেউ এ ভাবে সন্তান চাইতেই পারেন। সমাজকে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। শিশুর বে়ড়ে ওঠায় কোনও খামতি যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
– আনন্দবাজার।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com