নেহেরুর কারণেই অখণ্ড ভারত ভেঙে পাকিস্তান হল।।

March 2, 2018 7:59 pm0 commentsViews: 36
এম নুরুনন্নবীঃ  বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তৎকালীন সংখ্যালঘু মুসলিমদের রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ নেতাদের সাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার ফলে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ গভীরভাবে ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, ঘটনার উল্টো-সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক ও বর্ণ বৈষম্যের কারণেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যে আলাদা বসতের চিন্তা জেগে উঠে। তবে তারও একটা ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে।নেতা হিসেবে জিন্নাহ ছিলেন আগা-গোড়া একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁর মাতৃভাষা কোন কালেই উর্দু ছিল না, ছিল গুজরাটি। তাঁর অধিকাংশ বক্তৃতাই ছিল ইংরেজিতে। জিন্নাহ ১৯৪৬ সালের মে পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ ভারতের পক্ষে ছিলেন। তার দাবী ছিল, সংখ্যালঘু মুসলমানদের সাংবিধানিক সুরক্ষা ও সমতা। কিন্তু নেহেরু ও কংগ্রেস সাংবিধানিকভাবে সেটা দিতে অস্বীকার করলেন। ফলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও আত্ননিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তান সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল।

২০০৫ সালে ভারতীয় হাইকোর্টের বিচারক Rajinder Sachar এর নেতৃত্ব  Sachar Commission এর রিপোর্টে ভারতের সংখ্যালঘু-বিশেষ করে মুসলমানদের করুণ ও দূরবস্থা’র চিত্র ফুটে উঠেছে। সে রিপোর্ট থেকে যে কোন সুস্থ বিবেকের মানুষ সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হবে, মুসলমানদের আলাদা বসত ১৯৪৭ সালে কত প্রয়োজনীয় ছিল। এ লেখার মধ্যে আমরা দেখব, কখন থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল।

১৯৪৬ সালের মার্চে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যেগে ব্রিটিশ কেবিনেটের ৩ জন সদস্য ভারত এসে পৌঁছালেন। তারা হলেনঃ ভারত সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স, মি: এ ভি আলেকজান্ডার এবং স্যর স্টেফোর্ড ক্রিপ্স। সিমলা কনফারেন্স ব্যর্থ হওয়ার পর ৩ সদস্যের কেবিনেট মিশন একটি প্লান ঘোষণা করল, যাকে কেবিনেট মিশন প্লান বলা হয়।

কি ছিল কেবিনেট মিশন প্লানে?

ব্রিটিশ ভারতে যাতে মুসলিম স্বার্থ রক্ষিত হয় আবার হিন্দুদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায়, এ দু’টি বিষয়কে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল কেবিনেট মিশন প্লানে। এ প্লানে প্রদেশগুলোকে গ্রুপিং সিস্টেম নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থাধীন করার পরিকল্পনা নেয়া হল।

গ্রুপ ‘এঃ মাদ্রাজ, বোম্বে, সংযুক্ত প্রদেশ, বিহার, মধ্য প্রদেশ এবং উড়িষ্যা অর্থাত হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকাসমূহ।

গ্রুপ ‘বিঃ পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধ এবং বেলুচিস্তান অর্থাত পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহ।

গ্রুপ ‘সিঃ বাংলা এবং আসাম অর্থাত পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহ. ( উল্লেখ্য বর্তমান আসামের তুলনায় তত্কালীন আসাম অনেক বড় ছিল, সেভেন সিস্টারের সাতটি প্রদেশের ৫ টি আসাম ভেঙ্গে করা হয়েছে ৪৭ পরবর্তী সময়ে, এসব অঞ্চল জনসংখ্যার দিক থেকে খুব কম হলেও বনজ সম্পদের দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ।

প্রত্যেক গ্রুপের তার নিজের সংবিধান রচনা করার অধিকার থাকবে এবং প্রত্যেক গ্রুপ দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া বাকি বিষয়গুলোর উপর পূর্ণ কতৃত্ব থাকবে. দেশরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ‘ভারত ইউনিয়ন’ নামে একটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকবে। কেবিনেট মিশন আরোও ঘোষণা করলো যে ভারতীয় সংবিধান সভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন পার্লামেন্ট হবে, সেখানে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসকে ৫ টি আসন দেয়া হবে, শিখ ও অচ্ছুতরা পাবে ১ টি করে আসন।

যদিও মুসলমানরা পাকিস্তান আন্দোলনে অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছে যেখান থেকে পিছনে আসা কষ্টকর তারপরও জিন্নাহর চাপে মুসলিম লীগ কেবিনেট মিশন প্লান গ্রহণ করতে রাজী হল। কেবিনেট মিশন প্লান গ্রহণ করার ফলে অনেকে মনে করেন মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ভূখণ্ড আদায় করে নেয়াটা জিন্নাহর মূল উদ্দেশ্য ছিল না। কিছু অঞ্চলে মুসলমানরা মেজরিটি হলেও সামগ্রিকভাবে মুসলমানরা ছিল মাইনরিটি, ফলে জিন্নাহ চেয়েছিল, মেজরিটির চাপে মুসলমানরা যেন কোনঠাসা হয়ে না থাকে, সুবিধাবঞ্চিত না হয়, সেটা যেন নিশ্চিত হয় – হোক সেটা ভারতীয় ইউনিয়নের অধীনে, হোক সেটা স্বাধীনতার মাধ্যমে।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কেবিনেট মিশন প্লান রচনার ব্যপারে মাওলানা আজাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন গ্রুপ সিস্টেমের মাধ্যমে পাকিস্তানের দাবি আংশিক মিটিয়ে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। কিন্তু জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করল, কোন ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ না হয়ে কংগ্রেস সাংবিধানিক সভায় যোগ দেবে এবং কংগ্রেস চাইলে কেবিনেট মিশন প্লান পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারবে। নেহেরুর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেবিনেট মিশন প্লান ব্যর্থ হয়ে গেল।

কেবিনেট মিশন প্লান ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখলেও অনেক বেশি ভূমিতে মুসলমানদের কর্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত। ভৌগলিকভাবে মুসলমানরা অনেক বেশি লাভবান হত-পশ্চিম পাকিস্তান সমগ্র পাঞ্জাব পেত, পূর্ব পাকিস্তান সমগ্র বাংলা এবং সমগ্র আসাম পেত। ফলে নেহেরু এবং তার কংগ্রেস এটা মেনে নিতে পারল না। নেহেরু এবং কংগ্রেসের সংকীর্ণ মানসিকতার ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট জন্ম নিল পাকিস্তান নামক মুসলিমদের আলাদা ভূখণ্ড।

মাওলানা আজাদ তার ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ এ লিখেছেন “আরও কিছুদিন কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট না থেকে নেহেরুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা তার জীবনে বোধহয় সবচাইতে বড় ভুল হয়েছে”।

গান্ধী মুসলমানদের কিছুটা ছাড় দিতে রাজী হলেও নেহেরু ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক নেতা। নেহেরু মুসলমানদের বঞ্চিত করে রাখার নীতিতে বিশ্বাসী ছিল আর জিন্নাহ চেয়েছিল মুসলমানদের জন্য সম মর্যাদা ও সম অধিকার আদায় করে নেয়া।সেটা না পাওয়াতে মুসলমানরা পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন ভূখণ্ড আদায় করে নেয় ১৪ অগাস্ট ১৯৪৭।পাকিস্তান আন্দোলনের সফলতার মাধ্যমে জমিদারদের নানা অত্যাচার এবং ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান ঘটে।

(বিস্তারিত জানতে পড়ুন  আওয়ামীলিগের সাবেক এমপি এম এ মোহাইমেন এর লেখা ‘ইতিহাসের আলোকে দেশ বিভাগ ও কায়েদে আজম জিন্নাহ’ এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদ Jaswant Singh এর লেখা Jinnah: India- Partition- Independence)

প্রাসঙ্গিক পোষ্টঃ

কারা বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করলো এবং কার স্বার্থে– সুনীতি কুমার ঘোষ

গান্ধীর বিশ্বাসঘাতকতা ও নেহেরু-প্যাটেলের বিরোধীতায় ভেস্তে যায় অখন্ড বাংলার পরিকল্পনা-দাবী শরৎ চন্দ্র বোসের

অখন্ড বাংলা, অখন্ড ভারত, অখন্ড পাকিস্তান নাকি বাংলাদেশ?

Facebook Comments

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com