নিরাপত্তা নিয়ে আগেই শঙ্কায় ছিলেন নদী।।
আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা আক্তার নদী হত্যাকাণ্ডে তার সাবেক স্বামী রাজীব হোসেন ও শ্বশুর আবুল হোসেনই জড়িত বলে মনে করছেন নিহত সাংবাদিকের পরিবার।
মা মর্জিনা বেগমের দাবি মৃত্যুর আগে নদী তাকে বলে গিয়েছেন তার সাবেক স্বামী রাজীব ও মিলন নামে দুই ব্যক্তিই তাকে কুপিয়েছিল।
গত ২৮ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার রাতে অফিস শেষে বাড়ি গেটের সামনে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা নদীকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। এসময় তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কা আঁচ করতে পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন সাংবাদিক নদী। এ নিয়ে পাবনা ও ঢাকায় তিনি একাধিক সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। ২০১৭ সালের ২২ জুলাই পাবনা সংবাদপত্র পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন নদী। সে সময় তিনি বলেছিলেন, শিল্পপতি স্বামী রাজীব হোসেন ও শ্বশুর আবুল হোসেন ভাড়াটিয়া গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা করছেন। জানা যায়, ২০১৬ সালে ৬ জুন পাবনা শহরের রাজীব হোসেনের সাথে ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে নদীর বিয়ে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নদী দাবি করেছিলেন, বিয়ের পর তার স্বামী ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দিনকে দিন তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নদী বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ মে আমার স্বামী আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে বাবার বাড়ি গিয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। এরপর ৪ জুন পাবনা সদর থানায় নারী-শিশু ও যৌতুক আইনে মামলা করি (মামলা নং-০৮)। এ ছাড়া পাবনা জজ কোর্টে যৌতুক মামলা করি। ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন সাংবাদিক নদী।
তিনি বলেন, মামলা করার পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী প্রচণ্ড ভাবে আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি প্রদর্শন করতে থাকেন। মামলা তুলে না নিলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। পরে রাস্তায় ভাড়াটিয়া গুণ্ডা দিয়ে গলায় চাকু ধরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য শাসিয়ে যায়। এ অবস্থায় আমি ভয়ে পাবনা ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
জানা যায়, রাজীবের বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে করা মামলায় মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ছিল। ওইদিন সাক্ষ্য দেন নদীর বড় বোন চম্পা বেগম। সাক্ষ্য রাজীবের বিপক্ষে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর নদী তার অফিসে যায়। রাতে কাজ শেষে বাড়ির গেটে ঢোকামাত্রই ৩/৪ জন দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় নদীকে উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নদীকে হাসপাতালে নেয়ার সময় সে আমাদের কাছে জানিয়ে গেছে, তার স্বামী রাজীব ও সহযোগী মিলনসহ কয়েকজন তাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয় নি, কাউকে আটকও করা হয় নি। তবে খুব শিগগিরই আমরা মূল হোতাদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। সূত্রঃ পরিবর্তন।