নাস্তিকদের জবাব।।
ইসলামের বিরুদ্ধে বর্তমানে কিছু লোক আছে, ব্যাপক প্রপাগান্ডা করে বেড়ায়। পৃথিবীতে চার হাজারেরও বেশি ধর্ম রয়েছে। অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে কোন বিষোদগার করা না হলেও এক তরফা ভাবে শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই যেন সকল অভিযোগ। Adherents.com এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০। তবে সংখ্যাটা এর বেশিও হতে পারে।
একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীর সংখ্যার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে খ্রিস্টান স্টান ধর্ম। ২০১৩ সনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর সাত’শ কোটি মানুষের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মানুসারী ৩৩%। সে হিসেবে সারা বিশ্বে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি।
এর পরের অবস্থান ইসলাম ধর্মের। বিশ্বজুড়ে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি। সাত’শ কোটি মানুষের মধ্যে মুসলমান তথা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হচ্ছে ২১ শতাংশ। আরও একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীতে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্মের মধ্যে ইসলাম ধর্ম এক নম্বরে। ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে সংখ্যানুপাতের দিক থেকে ইসলাম ধর্ম পৃথিবীতে প্রথম স্থানে উঠে আসবে।
ধর্মের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থান হিন্দু ধর্মের। এর অনুসারীর সংখ্যা ৯০ কোটি। শতাংশের হিসাবে হিন্দু ধর্ম অনুসারী পৃথিবীতে ১৪%। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, নাস্তিক, অধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যা কিন্তু পৃথিবীতে কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদের সংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি। শতাংশ হিসাব করলে প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ।
এছাড়া পৃথিবীতে চীনা ঐতিহ্যগত ধর্মের অনুসারী ৩৯ কোটি ৪০ লাখ, বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ৩৭ কোটি ৬০ লাখ এবং আদিম আদিবাসী ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ৩০ কোটি।
ইসলাম বিরোধীদের অপপ্রচারের অন্যতম লক্ষ আয়েশা(রাঃ)এর সাথে রাসুল(সাঃ) এর বিয়ে! অনেক মুসলমান ভাই বোন মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেন “এটা না করলে কি পারতেন না?না করলেতো আজকে এই প্রপাগান্ডার সুযোগ ছিল না! ”
এই লেখনি শুধু তাদের জন্য! বন্ধুগন, রাসুল(সাঃ) মাওলার নির্দেশ ছাড়া কিছুই করেননি! সর্বজ্ঞ মাওলা ভবিষ্যত জানতেন বলেই এই বিয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন তার প্রিয় হাবিবকে! নিচের লেখনিতেই আপনারা বুঝবেন ইসলামের ইতিহাসে এই বিয়ের প্রভাব কত ব্যাপক ছিল!
রাসুল(সাঃ) এর প্রতিটি বিয়েই ছিল ইসলামের সার্থে!! আর ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশি ফলপ্রদ হয় আয়েশা(রাঃ) এর সাথে হুজুর পাক (সাঃ) এর এই বিয়ে!
হযরত আয়েশা (রা): ইসলাম প্রচারে
তাঁর ভুমিকা ও তাঁর মর্যাদাঃ
———————————————-
রাসুল মুহাম্মদ (সা) এর স্ত্রীগনের মধ্যে হযরত আয়েশা
(রা) সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব।তিনি একাধারে
রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী ও আবু-বকর (রা) এর কন্যা। রাসুলের
(সা) সাথে তাঁর মাত্র ৯ বছরে সংসার জীবন । রাসুলের
(সা) ওফাতের পর ইসলামের ইতিহাসে তাঁর রয়েছেএক
গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা।আমি ধারাবাহিক কয়েকটি পোস্টের
মাধ্যমে হযরত আয়েশা (রা) এর ইসলামে অবদান ও তাঁর
মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
প্রথমেই শুরু করছি হযরত আয়েশা (রা) কতৃক বর্নিত একটি
হাদীস দিয়েঃ
হযরত আয়েশা (রা) বলতেন আমি গর্বের জন্য নয় , বরং
বাস্তব কথাই বলছি। আর তা হল, আল্লাহ তায়ালা এমন
কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যা আর কাউকে দান
করেননি। ১/ ফেরেশতা রাসুলুল্লাহকে (সা) স্বপ্নের
মাধ্যমে আমাকে দেখিয়েছেন, ২/ আমার সাত বছর বয়সে
রাসুল (সা) আমাকে বিয়ে করেছেন, ৩/ নয় বছর বয়সে আমি
স্বামী গৃহে গমন করেছি, ৪/ আমিই ছিলাম রাসুল (সা) এর
একমাত্র কুমারী স্ত্রী ৫/ যখন তিনি আমার বিছানায়
থাকতেন তখন ওহী নাযীল হতো, ৬/ আমি ছিলাম রাসুল সা
এর সর্বাধিক প্রিয় স্ত্রী, ৭/ আমার নির্দোষতা ঘোষণা
করে কোরআনে আয়াত নাযীল হয়েছে ৮/ জীবরিলকে আমি
স্বচক্ষে দেখেছি, ৯/ রাসুল সা আমার কোলে মাথা রেখে
শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন, ১০/ আমি তার খলিফা ও তার
সিদ্দিকের কন্যা ১১/ রাসুলুল্লাহর (সা) জীবনের শেষ
মুহুর্তে আমার মুখের লালা তার মুখের লালার সাথে
মিলেছে, ১২/ আমার ঘরেই তাঁর কবর দেয়া হয়েছে। [সুত্রঃ
সিয়ারু আলাম আন-নুবালা ৩/১৪০-১৪১]
হযরত আয়েশা (রা) এর সীরাতের প্রতি যখন দৃষ্টি নিবদ্ধ
করা হয় তখন কেবল সকল মহিলা সাহাবা নয় বরং অনেক বড়
বড় পুরুষ সাহাবিদের তুলনায় তাঁর যে অনন্য বৈশিষ্ট্য
লক্ষ্য করা যায় তা হলঃ
১/ দ্বীনের তাৎপর্য বিষয়ে গভীর জ্ঞান।
২/ ইজতিহাদির ক্ষমতা ও শক্তি
৩/ আলোচনা ও পর্যালোচনার রীতি-পদ্ধতি
৪/ গভীর অন্তর্দৃষ্ট
৫/ প্রয়োজনীয় মতামত প্রকাশের ক্ষমতা
হযরত আয়েশা (রা) সম্পর্কে কয়েকজন প্রতিথযশা সাহাবা
একরাম, তাবে-তাবেঈন ও মুসলিম স্কলারের কিছু মন্তব্য
লক্ষ্য করা যাক–
হযরত মুসা আশ’আরী (রা) বলেন–
আমরা মুহাম্মদ (সা) এর সাহাবীরা কক্ষণো এমন কোন কঠিন
সমস্যার মুখোমুখি হইনি, যে বিষয়ে আমরা আয়েশা (রা) এর
নিকট যানতে চেয়েছি এবং সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান আমরা
তাঁর কাছে পাইনি।
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফের (রা)
সুযোগ্য পুত্র আবু সালামা যিনি একজন অতি উচ্চ স্তরের
তাবেঈ ছিলেন, বলেন–
— রাসুলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নাতের জ্ঞান , প্রয়োজনে কোন
ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দান, আয়াতের শানে নুযুল ও ফরজ বিষয়
সমুহে আমি আয়েশা (রা) অপেক্ষা অধিকতর পারদর্শি ও
সুচিন্তিত মাতামতের অধিকারী আর কাউকে দেখিনি।
হযরত উরউয়া ইবনে যুবায়ের (রাঃ) বলেন –
আমি হালাল হারাম জ্ঞান , কবিত্ব, চিকিৎসা বিদ্যায়
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) অপেক্ষা অধিক পারদর্শি
কাউকে দেখিনি।
প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত মাসরুখ (রঃ) যিনি হযরত আয়েশা
(রাঃ) এর তথ্যাবধানে লালিত পালিত হন, একবার তাকে
প্রশ্ন করা হল ঃ উম্মুল মু’মেনিন আয়েশা (রা)কি ফারায়েজ
শাস্ত্র জানতেন? তিনি জবাব দিলেন—
সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন , আমি বড় বড়
সাহাবীদেরকে তাঁর নিকট ফারায়েজ বিষয়ে প্রশ্ন করতে
দেখেছি।
আল্লামা জাহাবী বলেন—
তিনি ছিলেন বিশাল জ্ঞান ভান্ডার। উম্মতে মুহাম্মদীর
মধ্যে , সার্বিকভাবে মহিলাদের মধ্যে তাঁর মত বড় জ্ঞানী
ব্যাক্তি নেই।
ইলম ও ইজতিহাদ বা জ্ঞানে আযরত আয়েশা (রা) কেবল
মহিলাদের মধ্যেই নন, বরং পুরুষদের মধ্যে বিশেষ স্থান
অধিকার করতে সক্ষম হন। কুরআন , সুন্নাহ, ফিকাহ, আহকাম
বিষয়ক জ্ঞানে তার স্থান ও মর্যাদা এত উর্ধে যে- উমর
(রা) , আলী (রা), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা), আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস (রা) প্রমুখের সাথে তাঁর নামটি নির্দ্বিধায়
উচ্চারন করা যায়।
তাফসিরে জালালাইন কিতাবে প্রখ্যাত মুফাস্সির
কিরামের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তাতে হযরত আয়েশা
(রা) কে তাফসির কারকদের মধ্যে প্রথম থকে তৃ্তীয় স্থানে
রাখা হয়েছে।
হাদীস বর্ননাতেও হযরত আয়েশা (রা) নিঃসন্দেহে অন্যতম
প্রধান বর্ননাকারীদের অন্যতম। যে সকল সাহাবীর বর্নিত
হদীসের সংখ্যা এক হাজারের উর্ধে তাঁরা হলেন মাত্র ৭
জন। নিম্নে তাঁদের নাম ও বর্নিত হাদীসের সংখ্যা উল্লেখ
করা হল—
১/ হযরত আবু হুরাইরা (রা) ——————————– ৫৩৬৪
২/ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ——————২৬৬০
৩/ হযরত আবদুল্লাহ ইবন ঊমার (রা) ——————–২৬৩০
৪/ হযরত যাবির ইবন আবদিল্লাহ (রা) ——————–২৫৪০
৫/ হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) ———————–২৬৮৬
৬/ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) —————————–২২১০
৭/ হযরত আবু সাইদ আল খুদরী (রা) ———————২২৭০
উপরে উল্লেখিত নামের পাশের সংখ্যা অনুযায়ী হাদীস
বর্ননাকারী হিসেবে হযরত আয়েশা (রা) এর স্থান সপ্তম।
অনেকের মতে হযরত আবু হুরাইরা (রা) ও হযরত আবদুল্লাহ
ইবন আব্বাস (রা) ছাড়া আর কেউ হযরত আয়েশা (রা) চেয়ে
বেশী হাদীস বর্ননা করেননি। তাঁদের মতে অধিক হাদীস
বর্ননাকারী হিসেবে হযরত আয়েশা (রা)এর স্থান তৃ্তীয়।
হযরত আয়েশা (রা) বর্নিত হাদীস সমুহের মধ্যে সহীহ
বুখারী ও মুসলিম শরীফে ২৮৬ টি হাদীস সংকলিত হয়েছে।
১৭৪ তি মুত্তালাক আলাইহি, ৫৪ টি শুধু বুখারীতে এবং ৬৯
টি মুসলিমে এককভাবে বর্নিত হয়েছে। এছাড়া হযরত
আয়েশা (রা) এর অন্য হাদীসগুলি বিভিন্ন গ্রন্থে সনদ
সহকারে বর্নিত হয়েছে।
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে এতটুকু প্রতীয়মান হয় যে
নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা)
ইসলামের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিত্ব যার কাছ
থেকে পবিত্র কুরআনের তাফসীর, হাদীস বর্ননা ও ইসলামী
শরীয়তের অনেক জরুরী বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গৃহীত
হয়েছে। তিনি শুধু নবী (সা) এর স্ত্রী হিসেবে নয় বরং
একজন তাফসীরকারক, একজন রাবী, একজন ফকীহ ও মুজতাহিদ
হিসেবে মুসলিম উম্মার কাছে চিরকাল শ্রদ্ধার আসনে
অধিষ্টিত থাকবেন।
======================
দু-জাহান তারকা হযরত আয়েশা (রাঃ)
=================
এই প্রিয়তমা মহিয়সী উম্মুল মু,মিনীন হযরত আয়েশা
(রাঃ),র স্থান কুল নারী জগতের সবার ঊর্দ্ধে। তাহার সুদুর
প্রসারী শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম, জ্ঞান-বুদ্ধি, স্বভাব-
চরিত্র, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাধনা-প্রতিভায় তিনি যে
উচ্চাসনে অধিষ্ঠিতা তাহা একদিকে যেমন মহিলাকুলের
মহা-মর্যাদা ও গর্বের কথা অন্যদিকে তেমনি তাহাদের
সাধনা ও প্রেরণার উৎস বঠে। তাহার তুলনা শুধু তিনি
নিজেই। মিল্লাতে মুসলিমের সম্মানিত শিক্ষিকা হযরতে
আয়েশার সমুদ্রসম জীবন কাহিনী সীমিত আকারে লিখা
কঠিন ও দুরুহ। তারপরে ও শুধুমাত্র সময়ের দাবীর কারনে এই প্রচেষ্টা!
আশাকরি ঈমানদার ভাই বোনেরা বুঝতে পেরেছেন রাসুলে পাক (সাঃ) কেন এই বিয়ে করেছিলেন এবং মাওলা কেন এই বিয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন! সর্বজ্ঞ মাওলা ভবিষ্যত জানতেন বলেই তার প্রিয় হাবিবকে এই বিয়ের নির্দেশ দেন যার ফলে এ বিয়ের সিদ্ধান্ত ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে ফলপ্রদ বিয়ে বলে বিবেচিত!!