নারী প্রশ্নঃ শায়খ রশিদ ঘান্নৌশি

October 21, 2017 2:05 am0 commentsViews: 26
[নারীকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়া, পুরুষের বশ্যতা থেকে মুক্তি দেয়ার কথা বলে ওরা নারীকে আকর্ষণীয় সাজানো পুতুল বানিয়ে রাখে, যা শুধু পুরুষের আনন্দের খোরাকই নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধিও করে। মানবতার ঐতিহ্য ও পুরুষের অংশীদার হিসেবে নারী জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নারীকে বাস্তবধর্মী আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। একমাত্র আল্লাহ্‌ ব্যতীত সকলের বশ্যতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমেই পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।]
নারী সমাজের অর্ধাঙ্গ আর এই নারীর হাতেই সমাজের বাকি অর্ধাঙ্গ (পুরুষ) গড়ে ওঠে, এই সত্যকে স্বীকার করলেই সমাজে নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপলব্ধি করা যায়। মুসলিম সভ্যতার পতনের দীর্ঘ সময়ে নারীদের কত অপমান, আবমাননা আর অবিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তার সঠিক ব্যাপ্তি বুঝতে ইসলামপন্থীরা ব্যর্থ বলেই নারীর অবস্থানকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়নি। এই অবিচারই নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি, দেয়নি সমাজ ও সভ্যতায় তাদের ভূমিকা পালন করার অধিকার বরং তারা হয়েছে ভোগদখলের পণ্য। ইসলামের নাম নিয়ে করা এই সবকিছুর সাথে প্রকৃত ইসলামের কোন মিল পাওয়া যায় না।। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্থার ধ্বংসাত্বক আক্রমণের হোতা পশ্চিমা সংস্কৃতি নিজেদের স্বাধীনতা ও সাম্যের প্রবক্তা হিসেবে দাবী করে থাকে। আর স্বাভাবিকভাবেই তখন অন্যায় অবিচারের শিকার মুসলিম নারীরা যাদের দূরাবস্থার জন্য মুসলিম পন্ডিতদের নিরব ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী তারা ইসলামকে নিচ মনে করে পাশ্চাত্যের আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

এই দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে তখন সহজেই ইসলামের বিরুদ্ধে এর বহিরাগত শক্তির অভ্যুত্থান হয় আর যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে নারীরা ইসলাম বলতে বুঝতে শুরু করল শুধুমাত্র পর্দার অন্তরালে থাকা, চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে বন্দী রেখে পুরুষের ইচ্ছা পূরণ করা যেখানে কোন স্বাধীনতা নেই, নেই জ্ঞান আহরণের সুযোগ আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কিছুতে অংশগ্রহন তো দূরের কথা। পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ করে মুসলিম নারীরাই ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

 

নারী প্রশ্ন

 

যেখানে ইসলামী অন্দোলনের আবির্ভাব হয় সেখানে একটি দূষিত ও অধঃপতিত সমাজের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়, যে সমাজে উন্মুক্ত পোশাকের প্রচলন, অশ্লীলতা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বিদ্যমান। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়ার ডাক মহিলাদের আরও বেশি করে মনে করিয়ে দেয়, ইসলামের দিকে ফিরে যাওয়া মানে অবক্ষয়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও শাসনের দিকে ফিরে যাওয়া এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হারানো। দেখো যায়, ইসলামী নৈতিক আন্দোলনগুলো তখন ইসলামের নিকট মহিলাদের প্রশ্নের জবাব দিতে অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যর্থ হয়। এর কারণ সে সব ইসলামী আন্দোলনকারী দল যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অর্জনের জন্য নারী স্বাধীনতার কথা বলে থাকে। নারীর প্রশ্নগুলো যদি সঠিক সামাজিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় সেখানে নগ্নতা বা অশ্লীলতার প্রসঙ্গ আসে না বললেই চলে বরং একাত্মতার অভাব, অত্যাচার, জুলুম এবং দাসত্বের কথাই উঠে আসে বারবার। আর এ কারণেই মানুষকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, যার মনুষ্যত্ব এবং আত্মনির্ধারণের ক্ষমতা অপহরণের জন্য অবক্ষয়তার সাথে ধর্মকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অথচ জাগতিক ও পার্থিব জ্ঞানের মাধ্যমে নারীজাতিকে মুক্ত করার দাবী করে পশ্চিমারা তাকে বন্দিত্বের দিকেই ঠেলে দেয়।

নারীকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়া, পুরুষের বশ্যতা থেকে মুক্তি দেয়ার কথা বলে ওরা নারীকে আকর্ষণীয় সাজানো পুতুল বানিয়ে রাখে, যা শুধু পুরুষের আনন্দের খোরাকই নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধিও করে। মানবতার ঐতিহ্য ও পুরুষের অংশীদার হিসেবে নারী জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নারীকে বাস্তবধর্মী আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। একমাত্র আল্লাহ্‌ ব্যতীত সকলের বশ্যতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমেই পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

 

সূত্রঃ পাঠচক্রের সৌজন্যে

আশির দশকের শুরুতে আল উইহদা ম্যাগাজিনে শায়খ রশিদ ঘান্নৌশির লেখা থেকে নেওয়া।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com