নারীদেহ নিয়ে পুরুষের ক’টি ভ্রান্ত ধারণা।।
যেমন, নারী যে কোন সময়েই যৌনতা উপভোগ করে বা ধর্ষণ নারীর জন্য আনন্দদায়ক। অনেক পুরুষ এটাও মনে করেন যে, পৃথিবীর সমস্ত নারীর পিরিয়ড একই দিনে হয়!

ভুল ধারণাগুলো যে কেবল তরুণদের থাকে, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। বরং নারীদেহের ব্যাপারে সকল বয়সী পুরুষদের মাঝেই নানান রকমের ভ্রান্ত ধারণা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, নারী যে কোন সময়ই যৌনতা উপভোগ করে বা ধর্ষণ নারীর জন্য আনন্দদায়ক। পিরিয়ড এবং সন্তান জন্মদান বিষয়েও অধিকাংশ পুরুষের অসংখ্য ভুল ধারণা রয়েছে এবং এ সব ভুল ধারণা অনেক সময়ই নারী নির্যাতন ও ধর্ষণকে উসকে দিতে পারে।
নারী দেহ নিয়ে অনেক পুরুষেরই এ রকম ১২ টি ভ্রান্ত ধারণা আছেঃ
যৌন সম্পর্ক ছাড়া ‘হাইমেন’ নষ্ট হয় নাঃ
যোনির মুখে যে পাতলা পর্দা থাকে, সেটাকে হাইমেন বা বাংলায় সতীচ্ছেদ বলা হয়। প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী এই পর্দা অটুট থাকলে নারী কুমারী এবং পর্দা ইতোমধ্যে ছিঁড়ে গিয়ে থাকলে ধরে নিতে হবে সে নারী অসতী। তাই এই একবিংশ শতকে এসেও বিয়ের প্রথম রাতে রক্তাক্ত বিছানা দিয়ে উপমহাদেশের অনেক পুরুষই নারীর সতীত্ব বিচার করে । এটি শতভাগ ভুল ধারণা! যৌন সম্পর্ক ছাড়াও কঠোর কায়িক শ্রম বা ব্যায়ামের কারণেও হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে। অনেকে অপূর্ণ হাইমেন বা হাইমেন ছাড়াও জন্মগ্রহণ করতে পারে।
পিরিয়ড শুরু হয়েছে মানেই যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরিঃ
একজন বালিকার পিরিয়ড শুরু হয়েছে মানেই সে যুবতী নয় এবং যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরি নয়। পিরিয়ড খুব স্বাভাবিক একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাপার, যা সাধারণত ১২ থেকে ১৫ বছরের মাঝেই বালিকা দেহে পিরিয়ড উপস্থিত হয়। কারো ক্ষেত্রে আরও আগে হয়ে থাকে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, পিরিয়ড হয়েছে বলেই ছোট কিশোরী মেয়েটি বিয়ে বা যৌন সম্পর্কের জন্য তৈরি হয়ে গেছে।
ধর্ষণ নারী উপভোগ করেঃ
অসংখ্য পুরুষ এটাই মনে করে যে, নারীরা মনে মনে ধর্ষণ কামনা করেন এবং ধর্ষণ ইচ্ছা থেকেই সাজসজ্জা করে থাকেন। এটি অত্যন্ত কুৎসিত একটি ভুল ধারণা। ধর্ষণ নারীর জন্য সবচাইতে ভয়াবহ রকমের অস্বস্তিকর একটি ব্যাপার এবং কোন পরিস্থিতিতেই কোন নারী ধর্ষণ কামনা বা উপভোগ করেন না।
নারীর নিজস্ব যৌন চাহিদা ও অরগাজম নেইঃ
পুরুষের ইচ্ছাই নারীর ইচ্ছা, পুরুষের অরগাজমেই নারীর সমাপ্তি- অসংখ্য পুরুষ এমন ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই বসে আছেন। ভয়ে কখনোই সঙ্গিনীর যৌন ইচ্ছাকে তারা প্রাধান্য দেন না কিংবা সঙ্গিনীর অরগাজম হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবেন না। সত্যটি হচ্ছে, নারীর যৌন চাহিদা পুরুষের সমান বা বেশিও হতে পারে এবং নারীর অরগাজমে পুরুষের চাইতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।
স্তন মাতৃদুগ্ধে পুর্ন থাকেঃ
না, কোন নারীই মাতৃদুগ্ধে পূর্ণ স্তন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সন্তান জন্মদানের পর স্তনে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন শুরু হয়।
মেনোপজ কেবলই নারীর হয়ঃ
নারীর একার নয়, মেনোপজ পুরুষেরও হয়। মেনোপজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যৌনতায় অনাগ্রহ ইত্যাদি সকল ব্যাপার পুরুষের জীবনেও উপস্থিত হয়।
নারীর পাঁজরের হাঁড় পুরুষের চাইতে একটি কমঃ
এটিও একটি ভুল ধারণা, নারী ও পুরুষ দেহে সমান সমান পাঁজরের হাঁড় থাকে।
পিরিয়ডের সময় যৌন সম্পর্ক করা যায় নাঃ
পিরিয়ডের সময় যৌন সম্পর্ক করা যায় এবং অসংখ্য নারীর পিরিয়ডের সময়ে যৌন ইচ্ছা প্রবল থাকে।
নারী দেহে লোম থাকে নাঃ
অসংখ্য পুরুষ মনে করেন, সুন্দরী নারীদের দেহে লোম থাকে না, তারা লোম ছাড়াও জন্মগ্রহণ করে থাকেন। অন্যদিকে যেসব নারীদের দেহে লোম আছে, তারা কুৎসিত বা ‘পুরুষ পুরুষ’ ভাব সম্পন্ন। সত্য হচ্ছে, লোম সকলের দেহেই থাকে। নারীরা ওয়াক্সিং , থ্রেডিং ইত্যাদির মাধ্যমে লোম দূর করে থাকেন।
নারীর ব্লাডার পুরুষের তুলনায় ছোট হয়ঃ
পুরুষের তুলনায় নারীরা টয়লেট বেশি ব্যবহার করেন, এর অর্থ এই নয় যে নারীর ব্লাডার পুরুষের চাইতে ছোট ।
পিরিয়ডে কষ্ট হয় নাঃ
অনেক পুরুষই মনে করেন, পিরিয়ডে নারীর কোন কষ্ট হয় না। কেবল তাই নয়, অনেক পুরুষ এটাও মনে করেন যে, পৃথিবীর সমস্ত নারীর পিরিয়ড একই দিনে হয়। দু’টিই নিতান্তই ভুল ধারণা।
সন্তান জন্ম দেয়া এমন কোন ব্যাপার নয়ঃ
কোন পুরুষের যদি এমন ধারণা হয় যে, নারীর সন্তান জন্মদান স্রষ্টা প্রদত্ত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে কোন কষ্ট নেই। এটির চাইতে ভুল ধারণা আর হতেই পারে না। সন্তান জন্ম দেয়া নারীর জন্য অসম্ভব কষ্টকর একটি প্রক্রিয়া। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে একজন নারীকে অসংখ্য শারীরিক পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে যেতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টকর। স্বাভাবিক নিয়মে ডেলিভারি হোক বা সি সেকশন, দুটিই সমান। কেবল শারীরিক কষ্ট নয়, সন্তান জন্ম দেয়ার সময়ে নানান রকমের মানসিক পরিবর্তন আসে। সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে কখনও কখনও মারাত্মক ডিপ্রেশনও দেখা দিতে পারে। এজন্য সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে যে কোন নারীরই চাই অনেক বেশি বাড়তি যত্ন।
এমন আরও অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা আছে শিক্ষিত- অশিক্ষিত সকল শ্রেণির পুরুষের মাঝেই। যুগ বদলাচ্ছে, সঠিক ব্যাপারটি জানা জরুরী। নারীকে জানতে ও বুঝতে না শিখলে নিজের সঙ্গিনীকে আজীবন অচেনাই রয়ে যাবে।
সূত্রঃ প্রিয়ডটকম অবলম্বনে রচিত এবং আংশিক সম্পাদিত ও পরিমার্জিত।