ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃত্বের কাছেই কি হাসিনার পতন আসন্ন?
শেখ হাসিনার মতই ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শে বিশ্বাসী একজন নেতা ড. কামাল হোসেন, যিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেছিলেন, তিনি আজ হাসিনাকে কর্তৃত্বপরায়ন এবং একনায়ক হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার সরকারের পতন ঘটানোর জন্য বিরোধী সকল দলকে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছেন- যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি সমীকরনের সূচনা করেছে।
চলতি মাসের শেষেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে আর এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার মুখোমুখি অবস্থানে অক্সফোর্ড ফেরত আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন- যাকে শেখ হাসিনা একটা সময় খুব আদর করে কাকা বলে ডাকতেন। ডা. কামাল এখন ৮২ বছরের এক প্রাজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং আরো দুই দলকে নিয়ে গত অক্টোবরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন।
বিএনপি আশা করছে যে নতুন এই জোটটি তার জনসমর্থন আরো বাড়াবে যার উপর ভিত্তি করে তারা চলমান সংকটগুলোকে মোকাবেলা করতে পারবে। বিশেষ করে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে সক্ষম হবে- যিনি গত ফেব্রুয়ারী থেকে কথিত দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাগারে আটক আছেন।
ড. কামাল ছিলেন শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। তাহলে তিনি কেন বিএনপির সাথে ঐক্য করতে গেলেন? ড. কামালের মতে তিনি বিএনপিকে নিয়ে ঐক্য করেছেন কেননা এছাড়া দেশে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বিকল্প আর কোন রাস্তা নেই।
শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে সকল বিরোধী দলের বয়কটের মুখে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসেন। সেই নির্বাচনে ১৫১টি আসনেই আওয়ামী সংসদ সদস্যরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ড. কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দু:শাসন প্রসংগে বলেন, বিগত ৫ বছর ধরে দেশে একটি অনির্বাচিত সরকার আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো এমনটি দেখা যায়নি। ড. কামাল আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা এটা নিশ্চিত করবেন যাতে একজন ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদের পর আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারে।
আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি একা কিছু করতে পারছেনা বলে তারা কামাল হোসেনের উপর ভর করে আওয়ামী লীগকে নামাতে চাইছে, তবে এবারও তারা ব্যর্থই হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, গন ফোরাম একটি ছোট দল। তারা আজ অবধি জাতীয় সংসদে একটি আসনেও জিততে পারেনি। ড. কামাল কোন গনসম্পৃক্ত নেতা নন। জনগন থেকে তিনি ও তার দল গনফোরাম পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।
তবে ড. কামাল এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন যে তিনি কোন পদ পদবীর জন্য এই লড়াই করছেন না। এমনকি ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচিত হলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ নেবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা সম্প্রতি এমন আইন প্রনয়ন করেছেন যার মাধ্যমে যে কোন ভিন্নমতের বা বিরোধী মতের মিডিয়াকে তিনি দমন করতে পারেন। ড. কামাল মনে করছেন এর মাধ্যমে সরকার শুধু এক দলীয় রাষ্ট্র নয় বরং এক ব্যক্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
তিনি বলেন, কর্তৃত্বপরায়ন এই সরকার যদি ছলে বলে কৌশলে আগামীতেও ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে আমার মত অনেকেই আর দেশে থাকতে পারবেনা। কেননা সরকার তার কোন সমালোচককেই আর সহ্য করবেনা।
ড. কামালের পিতা একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে জেলে ছিলেন দীর্ঘদিন। বঙ্গবন্ধুর অধীনে তিনি আইনমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি জাতিসংঘের বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করেছেন। তার ব্যপারে সুশীল সমাজে ব্যপক গ্রহনযোগ্যতাও আছে। তবে তার মত ব্যক্তি বাংলাদেশের এই নোংরা রাজনীতির জন্য কতটুকু ফিট তা নিয়ে অবশ্য অনেকের মনেই সন্দেহ আছে।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ড. শাহদীন মালিক ড. কামাল প্রসংগে বলেন, তিনি খুব বিদ্রোহী মানসিকতার নেতা নন। তিনি একজন চমৎকার সংবিধান বিশ্লেষক ও আইনজীবি। তিনি একজন পুস্তকপ্রেমী মানুষ। তত্ব দিয়ে অনেক কিছু বিবেচনা করেন যা আমাদের প্রচলিত রাজনীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ন নয়।
অন্যদিকে শিক্ষাবীদ ও কলামিস্ট আফসান চৌধুরী মনে করছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কতক্ষন নিজেদের ঐক্য ধরে রাখবে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তবে ঐক্যফ্রন্ট করায় বিএনপির ভাবমুর্তি অনেকটাই বেড়েছে। আর খালেদা জিয়া অন্তরীন হওয়ার পর বিএনপি যে অভিভাবকশূন্যতায় পড়ে গিয়েছিল সেক্ষেত্রেও দলটি যেন কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে পৌছেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা