দ্যা প্রোপাগান্ডা মেশিন এফেক্টঃ যেভাবে সাধারণ মানুষের অজান্তে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়।

February 8, 2018 3:47 pm0 commentsViews: 84

by মজলুম

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মনোবিজ্ঞান, প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ার চরম উৎকর্ষতা শুরু হয়। এই তিনের যৌথ মিলনে অপপ্রচার হয়ে উঠে এক ভয়ংকর অস্র। গতানুগতিক যুদ্ধের বাইরে আরেকটা নতুন যুদ্ধ শুরু হয়, যার নাম মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। অস্ট্রিয় মানসিক রোগ চিকিৎসক  সিগমুন্ড ফ্রয়েড যে ধর্মে ছিল ইহুদী, মনঃসমীক্ষণ (Psychoanalysis) নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক এবং মনোবীক্ষণের জনক হিসেবে পরিগণিত। তার আপন ভাগিনা ছিল এডওয়ার্ড বার্নায়েজ, ১৮৯০ এর দিকে সে আমেরিকা পাড়ি জমায়। পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারে সে ছিল অসাধারণ। কিভাবে গণতান্ত্রিক সমাজে লোকদের ব্রেইন ওয়াশ করা যায়, ম্যানিপুলেট করা যায়– এসবই তিনি মার্কিন সরকারকে শিখাতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলেও আমেরিকা যোগ দেয়নি, উড্রো উইলসন পরে এডওয়ার্ড বার্নায়েজকে দিয়ে আমেরিকান জনগণের ব্রেইনওয়াশ করতে থাকেন জার্মানের বিরুদ্ধে। যেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিলে আমেরিকান জনগণ তা সমর্থন করে। বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন, লিফলেট, ব্যানার, সাইনবোর্ডে প্রোপাগান্ডা চালানো হয় জার্মানের বিরুদ্ধে।

সে একটা বই লিখে, যার নাম প্রোপাগান্ডা। ওখানে প্রোপাগান্ডার সকল কলাকৌশল লিখা আছে। প্রোপাগান্ডা শব্দটা তখন পজিটিভ শব্দ হিসেবেই ছিল যার বাংলা হবে প্রচার। পরে নাৎসি প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী জোসেফ গোয়েলবস তার এই কলাকৌশল প্রয়োগ করে। এমনভাবে সে এই প্রোপাগান্ডা চালায় যে এই শব্দটাই পরে নেগেটিভ হয়ে যায়। যার বাংলা অর্থ এখন হবে অপপ্রচার। গোয়েলবস মূলত ইহুদীদের প্রোপাগান্ডার স্টাইল দিয়েই ইহুদীদের দমাতে কাজ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব দুইভাগ হয়ে  স্নায়ু যুদ্ধের ভিতর দিয়ে যায়। আমেরিকা প্রোপাগান্ডার জনক হলেও ১৯১৭ এর বলশেভিক বিপ্লবের পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও প্রোপাগান্ডা শিখে ফেলে। নাৎসিদের প্রযুক্তি গুলো মিত্র শক্তি আমেরিকা ও রাশিয়া ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো জোসেফ গোয়েলবসের প্রোপাগান্ডার স্টাইল, কৌশল ও ওরা ভাগাভাগি করে নেয়। প্রোপাগান্ডা সেইম হলেও আমেরিকা ইউরোপের গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদের আর সোভিয়েত ও তাদের কম্যুনিস্ট রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে প্রোপাগান্ডায় কিছু পার্থক্য থাকে।  সহজ ভাষায় বলতে গেলে সূক্ষ্ম ও স্থূল প্রোপাগান্ডা। বিস্তারিত বলতে গেলে আবার আলাদা পোষ্ট লাগবে। আমেরিকা হল ব্রিটিশ ধূর্তদের উত্তরসূরি। তার সাথে এডওয়ার্ড বার্নায়েজের মতো প্রপাগান্ডিস্ট ইহুদীরা এসে আমেরিকার প্রোপাগান্ডা মেশিন আরও শক্তিশালী ও সূক্ষ্ম করে ফেলে, এরা মূলত লিবারেল ইহুদি। বিপরীতে সোভিয়েত ব্লকের প্রোপাগান্ডিস্ট গুলো হল মাথা মোটা। এরা নিজ দেশেই অত্যাচার করে নিজেদের প্রোপাগান্ডা খাওয়াবে জনগণকে।  আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে পশ্চিমের সাংবাদিক/বুদ্ধিজীবী/লেখক/বিশ্লেষকরা হলেন মোটা দাগে লিবারেল আর সোভিয়েত ব্লকের  সাংবাদিক/বুদ্ধিজীবী/লেখক/বিশ্লেষকরা হলেন বামপন্থী। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা পশ্চিমা লিবারেল মিডিয়ার শিকার আর বাংলাদেশের মুসলিমরা বামপন্থী মিডিয়ার শিকার।

বামপন্থীরা অস্রের মুখে ওদের প্রোপাগান্ডা গিলাতে চায়। ওদের থাকে ডিয়ার লিডার কমরেড। ডিয়ার লিডারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবেনা। ডিয়ার লিডার ও তাদের কমরেডরা জনগণকে চুষে খাবে, লুটপাট করবে। জনগণকে এন্টি-ইম্পিয়ারিলিজম ও মহান বিপ্লব এগিয়ে নেওয়ার কথা বলবে আর শিখানো হবে খাবার না পেলেও খুশি থাকো কারন আমরা মহান বিপ্লবকে এগিয়ে নিচ্ছি। ডিয়ার লিডার ও কমরেডরা খাবেন দামী দামী কাস্পিয়ান ক্যাভিয়ার
বাংলাদেশে ডিয়ার লিডার হলেন গডমাদার ওরফে মাদারে হিউম্যানটি। উনারা এই দেশকে লুটপাট করে খাবেন আর জনগণকে শুধু চেতনার সিরাপ খাওয়াবেন। জনগণকে শিখানো হয় যে, আপনার ব্যাংকগুলো লুটপাটে খালি হলেও কোন চিন্তা নাই, আমরা মহান চেতনাকে আগায়া নিতেছি। ভাত, পিয়াজ না খেলেও সমস্যা নাই, চেতনার জন্যে একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, নইলে আপনি দেশপ্রেমিক নন, এটা আপনার দেশ নয়, আপনি বরং পাকিস্তান, তুরস্ক বা সৌদি আরব চলে যান। গোয়েলবসের বিখ্যাত উক্তি যে একটা মিথ্যা বারবার বলতে থাকো, এক সময় তা মানুষ বিশ্বাস করে নিবে। মানুষের মনোজগতে তা কিভাবে কাজ করে তা দেখুন। এই পোষ্টা একটু দেখে নিন তাহলে অবচেতন মন ও সচেতন মনের অবস্থা বুঝতে পারবেন

সচেতন মন হল দরজায় দাঁড়ানো দারোয়ানের মতো আর ভিতরে হল অবচেতন মন। আপনি ঢাকায় বাস করেন, রাজনৈতিক জ্ঞান তেমন নেই আপনার। আপনি বাসায় টিভি খুললে দেখেন খবরে/টকশোতে দাড়ি টুপি ওয়ালা হুজুরেরা খুব খারাপ। ওরা রাজাকার, ওরা মৌলবাদী, ওরা জঙ্গি, ওরা মধ্যযুগীয়। রাস্তায় বেরুলে পোষ্টার, দেওয়াল লিখন, সাইনবোর্ডে এসব দেখেন। পত্রিকার খবরেও এসব দেখেন। হুজুরদের দুই একটা ক্রাইম যদি কোন রকম খুঁজে পায় তাহলে তিলকে তাল বানিয়ে নয় বরং তালগাছ বানিয়ে সব মিডিয়ার অপপ্রচার দেখেন।
এগুলো প্রতিদিন দেখতে থাকলে আপনার সচেতন মন যদি—-
— মন থেকে না বলে
—বা কোন সন্দেহ সৃষ্টি না করে
—বা একটু খুঁজে দেখতে হবে এই খবর সত্য কিনা, এটাও না করে

তাহলে এই প্রোপাগান্ডা সচেতন মনের দারোয়ানের সামনে দিয়ে অবচেতন মনে ঢুকে পড়ে। অবচেতন মনে ঢুকে পড়লে এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তার বিশ্বাসে পরিণত হয়। তারপর দাঁড়ি টুপি ওয়ালা হুজুর রাস্তায় দেখলেই আপনার ব্রেইনে মাইক্রো সেকেন্ডে বলে উঠবে এরা হল রাজাকার, জঙ্গি, জানোয়ার, অমানুষ, মৌলবাদী, মধ্যযুগীয়। পশ্চিমা লিবারেল মিডিয়া গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তেমন করেছে। শুধু হুজুরের জায়গায় মুসলিম পড়ে নিন। এখন পশ্চিমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে হেট ক্রাইম হচ্ছে তা এই লিবারেল মিডিয়ার অবদান। সাধারণ মানুষগুলোর অবচেতন মনে মুসলিম বিরুধী প্রোপাগান্ডা ঢুকে পড়ায় এরা মুসলিমদের মনে মনে ঘৃণা করে, আর যে বেশী উত্তেজিত সে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে বসে। অথচ এই আক্রমণকারী পশ্চিমা লোকটার সাথে ঐ মুসলিমের কোন লেনদেন নাই, সে জানেও মুসলিম লোকটা কি করে, কোথায় থাকে, সে খারাপ না ভালো, সে সন্ত্রাসী না মৌলবাদী। তবুও তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর এসবই পশ্চিমা লিবারেল মিডিয়ার অবদান। একজন রাজনৈতিক জ্ঞানহীন সাধারণ লোককে কিভাবে অন্য লোকদের ঘৃণা করা শিখানো হয়, এসবই তার উধাহারন।

আমাদের দেশে শুধু সেক্যুলারেরা নয়, মধ্যবিত্ত ও প্রগতিশীল! মুসলিমদের মধ্যেও এই রেটরিক দেখতে পাবেন যে হুজুরদের কারনেই দেশের এই অবস্থা। কারনটা হল মিডিয়ার অপপ্রচার। হুজুরেরা কি এই দেশের সরকার ছিল? সচিবালয়ের সচিব? পুলিশ/আর্মী, বিজিবি আছে? বড় বড় ঋনখেলাফী ব্যবসায়ী? মিথ্যাবাদী সাংবাদিক?  না কোনটাই নয়। বরং হুজুরদের খারাপ জানার কারন হল মিডিয়ার অপপ্রচার। বিশ্বের অবস্থা বুঝতে হুজুরদের জায়গায় মুসলিম পড়বেন। আসলে ব্যাপারটা হল উল্টা, যারা হুজুরদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে, ওদের জন্যেই দেশের এই অবস্থা। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পড়ালেখা করা আবুল বারাকাতরা ও তেমনি। এরা হুজুরদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বই লিখবে, ওরা নাকি দেশটা শেষ করে করে দিলো। অথচ সত্য বিষয় হল উনি জনতা ব্যাংক কে শেষ করে দিলেন ৫০০০ কোটি টাকা লুট করে।

গতবছর আমেরিকা কি নাটক যে করলো সিরিয়ান/ইরাকি শরণার্থী নিয়ে। এই দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ লোক হত্যা করবেন নির্বিচারে আর কয়েক হাজার লোককে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়ে বাহবা কুড়াবেন। আর মুসলিমদের অপমান করবেন। সর্প হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো। এরা মসুল ও রাকা শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে দিয়েছে কার্পেট বোম্বিং করে। হাজার হাজার নিরীহ লোক এখনো ধংস্তোপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ওরা আমাদের দেশের সংসদের মতো, ওরাই সরকারী দলে, ওরাই বিরুধী দলে। আর আমরা বোকা জনগণ। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যের মিশর, সিরিয়া, লেবানন, সৌদি, ইরান,তুরস্ক এরা সবাই ইউরোপ থেকে আসা সকল শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্যে তাদের জাতিসংঘের মতো কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার দরকার হয়নি। খুবই দুঃখ লাগে এসব দেখলে। এই যে ইউরোপের একটা দেশ পোল্যান্ড। এরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার আর স্টালিনের গণহত্যায় চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিলো। হাজারে হাজারেএরা আশ্রয় নেয় ইরানে ও অন্যান্য মুসলিম দেশে। আর এরা এখন মুসলিম রিফিউজি নেওয়া দুরের কথা, পুরা ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো মুসলিম জেনোফোবিক অথচ ঐ দেশে কোন মুসলিম বাস করেনা। এরা মুসলিম উপর হলোকাস্ট চালানোর আহবান জানায়। 

প্রত্যেক মানুষই কোন না কোন ভাবে বা কোন না কোন লেভেলে প্রোপাগান্ডার শিকার। প্রোপাগান্ডার শিকার ব্যক্তিটার মনে হবে সে স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত চিন্তা করছেন কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। প্রোপাগান্ডা যখন সচেতন মন পেরিয়ে অবচেতন মনে ঢুকে যায় তখন উক্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেনা যে সে প্রোপাগান্ডার শিকার।

যারা এই পোষ্ট এই পর্যন্ত পড়ে ফেলেছেন তারা প্রায় সবাই মুসলিম হিতৈষী। এবার আপনার নিজেরা কতটুকু প্রোপাগান্ডার শিকার তা দেখুন। ১৯৯০ সালে আমেরিকা ইরাকের উপর অবরোধ আরোপ করে। সেই অবরোধে ইরাকের শিশুদের ঔষধ ও ব্যান করা হয়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শুধু ৫ লক্ষ ইরাকি শিশু মারা যায় ঐ অবরোধে, পুরুষ-নারীদের কথা বাদই দিলাম। বিল ক্লিনটনের ঐ সময়কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মেডিলিন অলব্রাইট, তাকে সিবিএস নিউজের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন, এই ৫ লক্ষ শিশুকে হত্যা করা কি ঠিক ছিলো। উত্তরে মেডিলিন বলেছেন,  ৫ লক্ষ শিশু হত্যা ঠিক আছে। আমেরিকার ডেমোক্রেট ও লিবারেলের নয়নের মনি হলেন এই মেডিলিন। ২০১৬ তে ডেমোক্রেট ন্যাশনাল কংগ্রেসে উনি হিলারির সমর্থনে বক্তব্য দেন, মুসলিমদের পক্ষে! দুই লাইন ও বলেন। টেড-এক্সে লেকচার দেন। উনাকে কেউ সন্ত্রাসী ও বলবেনা, সন্ত্রাসের সমর্থক ও বলবেনা।

অনেক মুসলিমদের এসব ব্যাপারে ক্ষোভ ছিলো আমেরিকার বিরুদ্ধে, যেমন মাহাথির মোহাম্মদ, জাকির নায়িক। ১৯৯৮ সালে জাকির নায়িক সিঙ্গাপুরে একটা লেকচার দেন মিসকসেপশান এবাউট ইসলাম এর উপরে। তার কিছু দিন আগে বিন লাদেনের আল-কায়েদা তানজানিয়া ও কেনিয়ার মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়, ২২৪ জন লোক মারা যায়।

প্রশ্নোত্তরে এক ছেলে উনাকে প্রশ্ন করেন বিন লাদেন কে নিয়ে। জাকির নায়েকের উত্তর ছিলো, খবরে আমিও দেখেছি সে এটা করেছে, ওটা করেছে। কিন্তু আমি সঠিক কি তা জানিনা। আমি বিন লাদেনকে চিনিওনা।তবে যদি সে সবচেয়ে বড়ো সন্ত্রাসী আমেরিকাকে সন্ত্রস্ত করে তাহলে আমি তাকে সমর্থন করি। ৯/১১ এর তিন বছর আগে উনি এটা বলেন, আর এখন উনার বিরুদ্ধে ব্রিটেন/ইন্ডিয়ার বা ইসলাম বিদ্বেষীদের সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ তার এই কথাটা। বিল ক্লিনটনের সরকারে থেকে মেডিলিন ৫ লক্ষ শিশু হত্যা করেছে ও তার পক্ষে বলেছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কারো কোনও অভিযোগ নেই। আর জাকির নায়িক ২২৪ লোক হত্যায় জড়িত ছিলেন না, ডাইরেক্টলী বলেন ও নাই যে সমর্থন করেন, বলেছেন “যদি”।

এখন জাকির নায়িক সন্ত্রাসের সমর্থক, উস্কানি দাতা। কিন্তু যারা ৫ লক্ষ শিশু হত্যা করেছোএবং  তার পক্ষে বলেছে, তাদেরকে সবাই ভাবে নৈতিকতার কাণ্ডারি। ৯/১১ এর পরে আমেরিকা কি করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ায়, সোমালিয়ায়, ইয়েমেনে, তা বাদ দিলাম। ৯/১১ এর আগে যে ৫ লক্ষ শিশু হত্যা করে তার পক্ষে সাফাই গেয়েছে, কখনো ৯/১১ এর কথা মনে হলে এই শিশুদের কথা মনে আসে? ৯/১১ এর নিহত তিন হাজার বনাম ৫ লক্ষ ইরাকি মুসলিম শিশু। না আসবেনা, এই শিশুদের জন্যে প্রতিবছর কেউ ফুল নিয়ে আসেনা, এক মিনিট নীরবে দাঁড়ায় না, মার্কার দিয়ে কেউ তাদের কথা কাগজে লিখেনা, মাবতাবাদিরা তাদের জন্যে কাঁদেনা, মিডিয়া তাদের পক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন অনুষ্ঠান প্রচার করেনা, বিশ্লেষক ও ইন্টালেক্টচুলেরা তাদের জন্যে লিখেনা। এই হতভাগ্য শিশুরা শুধু একটা সংখ্যা। বরং আমরা ৯/১১ নিয়ে মাতামাতি করি কারন আমরাও তাদের প্রোপাগান্ডা মেশিনের নির্মম শিকার।

পিউ রিসার্চের মতে সারা আমেরিকাতে ২৭ লক্ষ মুসলিম বাস করে। আর আমেরিকা ১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইয়েমেন, পাকিস্তান(ড্রোন), সিরিয়াতে ৩০ লক্ষ মুসলিম হত্যা করেছে আর মুসলিমদের হাতে ১৯৯০ থকে এ পর্যন্ত ৩৫০০ এর মতো আমেরিকান সিভিলিয়ান মারা গেছে। তবুও এই আমেরিকার মুসলিমদের প্রতিক্ষণে এ্যাপোলোজি করতে হয়, এপোলোজিস্ট হতে হয়। শুধু তুলনাটা দেখুন, মাথা ঘুরবে, আকাশ পাতাল ব্যবধান। গত ৩০ বছরে আমেরিকা যত মুসলিম হত্যা করেছে তত মুসলিম পুরা আমেরিকাতেই বাস করেনা। তবুও আমরা এ্যাপোলোজিস্ট হই ওদের কাছে, কারনটা হলো এই প্রোপাগান্ডা মেশিন। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা এই প্রোপাগান্ডা মেশিনের শিকার হয়ে নিজেরা অপরাধ বোধ ও ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সটিতে ভুগিতেছে।

পূর্ব ও পশ্চিমে বাস করা মুসলিমরা অপরাধবোধে ভুগলেও পূর্বের থেকে পশ্চিমে বাস করা মুসলিমরা বেশী অপরাধবোধে ভোগে। তার কারন হলো ল্যান্ড অব প্রপাগান্ডা মেশিনে তারা বাস করে।

পশ্চিমে মোটা দাগে তিন ক্যাটাগরীর মুসলিমরা থাকে। এরা হলো,

১ঃ ট্যালেন্ট— এর ব্রেইনড্রেইন হয়ে মুসলিম দেশ হতে পশ্চিমে পাড়ি জমায় উচ্চ বেতন ও লিভিং কন্ডিশনের জন্যে। কর্পোরেশনের লোকেরা স্থানীয় সাদাদের চেয়ে কম বেতন কাজ করিয়ে নিতে পারে, সেইম কাজ হলেও।
২ঃ অড জব— এরা খালাসি বা বিভিন্ন মাধ্যেমে পশ্চিমা দেশে গিয়ে থালা, বাসন মাজা, রান্না করা, এইসব কাজ করে পরে হয়তো ওয়েটার হয়েছে বা নিজেই একটা রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছে। এদেরকেও কোম্পানির লোকেরা ভালো পায় কারন সাদারা ঘন্টায় এতো কম ডলারে কাজ করতে অনীহা দেখায়।
৩ঃ চোর-ডাকাত— এরা মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সামরিক জেনারেল, অসাধু ও ঋনখেলাপি ব্যবসায়ী। এরা মুসলিম দেশগুলো লুটপাট করে খেয়ে সব টাকা পশ্চিমে পাঠিয়ে বাকি জীবন ছেলে মেয়ে নিয়ে ওখানে মাজ মস্তিতে থাকে। এরা জানে পশ্চিমা দেশগুলো ভুলেও বিচারের জন্যে এদের নিজ দেশে পাঠাবেনা।

যেটাই হোক, সবদিক দিয়ে ঐ পশ্চিমাদেশগুলোর ই লাভ। অথচ এই মুসলিমরা ইহুদীদের মতো নয় যে  যেই দেশে মাইগ্রেট হবে পরে সেই দেশের ব্যাংক খাত, মিডিয়া, ক্ষমতা সব দখল করে ওদের উপর ছড়ি ঘুরাবে। অথচ এই সংখ্যালঘু মুসলিমদের ভিলেন বানিয়ে ফেলেছে মিডিয়া।

সবশেষে ম্যালকম এক্স আকা মালেক শাবাজের কথা দিয়েই শেষ করছি।

যদি তুমি সতর্ক না হও, তাহলে সংবাদপত্র তোমাকে শিখাবে মজলুমদের ঘৃনা করতে আর জালিমদের ভালোবাসতে যারা মজলুমদের উপর অত্যাচার করে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com