তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অত্যাসন্ন ?

February 7, 2018 6:22 pm0 commentsViews: 36

।।এম এ বাছিত আশরাফ।।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন (পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত) মানুষের মহাযুদ্ধ পাঁচটি। তার দুটি ইতোপুর্বে সংঘটিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ এ উম্মতের আগে বিগত হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি এই উম্মতের সময় সংগঠিত হবে।
(১) তুরস্কের মহাযুদ্ধ (২) রোমানদের সঙ্গে মহাযুদ্ধ (৩)- দাজ্জালের মহাযুদ্ধ। দাজ্জালের পর আর কোন মহাযুদ্ধ হবে না। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ৫৪৮)।
আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিগ্রহ আমাদেরকে সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ইরাক, ফিলিস্তিন বা সিরিয়ার যুদ্ধ। সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব আতঙ্কিত এবং দু’ভাগে বিভক্ত। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অত্যাসন্ন এ নিয়ে অনেকের মনে এখন আশঙ্কা জাগছে ! সময় যত গড়াচ্ছে ততই এ শঙ্কা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তা নিশ্চয়ই বিশ্ব মোড়লরা জানেন। পূর্বেকার দুটি বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, তা কম বেশ সবারই জানা, তাই নতুন করে স্মরণ না করিয়ে দিলেও চলবে। আমরা জানি বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বড়ই তিক্ত। শান্তিকামী মানুষেরা কখনও যুদ্ধ সমর্থন করে না, কারণ যুদ্ধ কোন জটিল সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। তারপরও যুদ্ধবাজরাই যুদ্ধের পক্ষে থাকে এবং থাকবে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহ, নৈরাজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব আজ অশান্ত হয়ে উঠছে, সবার মনে একটি প্রশ্নই বারবার জেগে উঠছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অত্যাসন্ন ? ইতোমধ্যে অনেক বিজ্ঞজনরাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা তাদের লিখনীতে ব্যক্ত করেছেন।
(১) ব্রিটেন থেকে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র “The Daily Telegraph” ৯ জুন ২০১৫ সংখ্যায় “Here’s how World War Three could start tomorrow তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে লিখেন ” Throughout history, rising powers have repeatedly tested the status by using their might: Harvard professor Graham Allison found that, since 1500, 11 out of 15 such cases have result in conflict.
অর্থাৎঃ ইতিহাস সাক্ষী, ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা বারবার তাদের শক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা করেছে। হার্ভার্ড প্রফেসর গ্রাহাম অ্যালিসন তার অনুসন্ধানে পেয়েছেন এ ধরনের ১৫ টার মধ্যে ১১ টা ঘটনাই সংঘাতে রূপ নিয়েছে। অর্থাৎ বড় কোন যুদ্ধের দিকে মোড় নিয়েছে।
তাদের প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে-
How might a third world war unfold? Undoubtedly differently from the Òsmall warsÓ of today.
অর্থাৎঃ একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিভাবে বিস্ত ‍ৃত হতে পারে? নিঃসন্দেহে ভিন্নভাবে আজকের ‘ছোট যুদ্ধ’ থেকে।
(২) বাসস (বংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) এর সাবেক প্রধান সম্পাদক গাজিউল হক্ব তার ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাঁয়তারা কি শুরু হয়ে গেছে?’ প্রবন্ধে লিখেন, বিশ্বের বুদ্ধিজীবী মহল, বিশেষ করে প্রগতিশীলদের মধ্যে (আইসিস) ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার’ ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার বিভ্রান্তিকর সশস্ত্র জেহাদ এবং বিশ্বমোড়লদের পক্ষপাতিত্ব এক নতুন উদ্বেগ ও আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। অনেকই মনে করছেন যে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে যাচ্ছে।
(৩) ষোড়শ শতকের ফরাসি পদার্থবিদ মাইকেল দে নোতর দাম, ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন তাঁর আশ্চর্য ভবিষ্যৎবাণীর জন্য। তার ইংরেজি বই ‘দি প্রফেসিস’ এ লেখা রহস্যেপুর্ণ ভবিষ্যৎবার্তাগুলোর অনেকগুলোই কালক্রমে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৩০-এর দশকে হিটলারের উত্থান, আমেরিকার কেনেডি-ভাইদের নিহত হওয়ার ঘটনা, নেপোলিয়নের পরাজয়, এমনকি ৯/১১-এ আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদী হামলা, সবটাই তিনি রহস্যময় ভাষায় বলে গিয়েছিলেন ৫০০ বছর আগে।
মাইকেল দে নোতর দাম এর বইয়ে ভবিষ্যৎবাণী করে লিখেন-২০১৬ সালেই পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তিগুলির মধ্যে এক ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হবে। যা দীর্ঘ ২৭ বছর স্থায়ী হবে, এবং বিপুল প্রাণহানির কারণ হবে। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক বিজ্ঞজনরাই মনে করেন, তার এই ভবিষ্যৎবাণী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
(৪) শাহ নেয়ামতুল্লাহ ওয়ালী (র.)-এর কবিতায় আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রদত্ত ইলহাম এর জ্ঞান দ্বারা আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশত বছর পূর্বে ( হিজরী ৫৪৮ সাল মোতাবেক ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে) তার বিখ্যাত কাব্য রচনা করেন, এটি লিখার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি ভবিষ্যদ্বানী হুবহু মিলে গিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরিণতি সম্পর্কে তিনি বলেনঃ
‘ভারতের মত পশ্চিমাদেরও ঘটিবে বিপর্যয়
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে ঘটাইবে মহাপ্রলয়’
ব্যখ্যাঃ বর্তমান সময়ে স্পষ্ট সেই তৃতীয় সমরের প্রস্তুতি চলছে। অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিররা যুদ্ধ করছে তথা জুলুম নির্যাতন করছে। এ জুলুম নির্যাতনই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রুপ নিয়ে একসময় তাদের ধ্বংসের কারণ হবে। এখানে বলা হচ্ছে মহাপ্রলয় বা কেয়ামত শুরু হবে যাতে পশ্চিমারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
তিনি অন্যত্র বলেনঃ
‘এ রণে হবে ‘আলিফ’ এরূপ পয়মাল মিসমার
মুছে যাবে দেশ, ইতিহাসে শুধু নামটি থাকিবে তার’।
ব্যখ্যাঃ এ যুদ্ধের কারণে আলিফ- আমেরিকা এরূপ ধ্বংস হবে যে ইতিহাসে শুধু তার নাম থাকবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। বর্তমানে মুছে যাওয়ার আগাম বার্তা স্বরূপ দেশটিতে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চরমভাবে দেখতে পাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা ব্রিটিশদের মধ্যে যুদ্ধ পরিপূর্ণ না হলেও এটা হলফ করে বলা যায় আমরা একটা বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ! সিরিয়া আক্রান্ত হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেকটা দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। ইসরায়েল যদি তার চিরশত্র“ ইরানে আক্রমন চালায় তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটা অবশ্যম্ভাবী। এ যুদ্ধে যোগ দিতে পারে সৌদি আরবসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সিরিয়ার পর যদি লেবানন আক্রান্ত হয় তাহলে ইরান বসে থাকবে না। সে অবশ্যই যুদ্ধে যোগ দেবে। চীন সরাসরি হয়তো বা এ যুদ্ধে যোগ নাও দিতে পারে কিন্তু তুরস্ক তার বন্ধু রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নেওয়ার সম্ভবনা অত্যধিক। যুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে যে হারে যুদ্ধবিগ্রহ লেগে আছে তা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা ততই বৃদ্ধি পাবে।
এই সব যুদ্ধবিগ্রহের কারণে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে মুসলমানরা, মুসলমানদের বাস্তুহারা করে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে অপরের করুণার পাত্র বানানো হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের শিশুদের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে মাদকাশক্তি, পতিতাবৃত্তিসহ বিভিন্ন নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। মুসলমানদের মধ্যে অজ্ঞতা আর ইসলামের ভুল শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে সন্ত্রাসী বানানোর জন্য কাজ করছে যৌথ ভাবে ইহুদি খ্রিষ্টানরা। এর বাস্তব উদাহরণ সিরিয়া, বার্মা, ফিলিস্তিন, কাশ্মির সহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানরা। তারা হিংস্র সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে যখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তখন কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেছে না। পৃথিবীতে যতগুলো সংঘর্ষ চলছে তাতে একদিকে যেমন বিশ্বের নিরীহ মানুষ হতাহত হচ্ছে। অন্যদিকে আবার মুসলমান নিধনও চলছে, এক ঢিলে দুই পাখি মারা। যুদ্ধআক্রান্ত দেশে শুধুমাত্র অমুসলিমদের দ্বারাই নির্যাতিত হচ্ছে না বরং মুসলিম নামধারী মুনাফিক শাসকদের দ্বারাও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যেমন মিশর, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্থান ইত্যাদি। ইতিহাস প্রমাণ করে জালিমদের জুলুম কখনো স্থায়িত্ব লাভ করে নি। ফেরাউন, নমরুদ, আবু জেহেল, আবু লাহাব, বুশসহ অনেকের পরিণতির কথাই আমরা জানি। আজকে যারা জুলুম করছে কাল হয়ত তারাই মজলুম হবে। আজকে যারা ইসলাম এবং মানবতাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছে কাল তারাই হয়ত ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নেবে। তবে এজন্য প্রকৃত মুসলিমদের আরও সজাগ, সতর্ক এবং একতাবদ্ধ হতে হবে। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যদি সচেতন হই তাহলে পালের হাওয়া পরিবর্তন হতে বেশী সময় লাগবে না। বিশ্বের সকল মুসলমানরা কায়মনোবাক্যে সেই দোয়া করছে এবং সেই সময়ের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে।

তথ্যসুত্র:
(১) তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ; মাহদি ও দাজ্জাল
(২) কবিতা সওগাত
(৩) The daily telegraph.
(৪) The prophesies (Online version)

 

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com