তীব্র সমালোচনার মুখে সেই ছবি সরিয়ে নিলো ভারতীয় দূতাবাস
কিন্তু ফেসবুকে গতকাল থেকে এসব ছবি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে সেগুলো তাদের পেইজ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঢুকে হাইকমিশনের ফেসবুক পেইজে ছবিগুলো দেখা যায়নি। তবে সেখানে এক পাঠকের শেয়ার করা ছবি ও তাদের সমালোচনামূলক কমেন্ট পাওয়া গেছে।
তাতে সুহাসিনী উদ্ভাসন নামের ওই পাঠক লিখেছেন–
“ছি…ছি…! বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে…?
হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ নয় পেছনে দণ্ডায়মান বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট। প্রনব মূখার্জী যখন ভারতের অর্থমন্ত্রী (১৯৮২-৮৪) হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তাছাড়া বয়সেও প্রনব মূখার্জী তাঁর থেকে ৫ বছরের ছোট। রীতিবদ্ধভাবে, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির সাথে অারেক সাবেক রাষ্ট্রপতি দেখা করতে গেলে যেরকম প্রটোকল দেখানো উচিত সেই সৌজন্যতাও ভারতীয় দূতাবাস দেখায়নি । অন্তত এরশাদ সাহেবের জন্য অারো একটি চেয়ার দিয়ে, সমতা দেখানো উচিত ছিল। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ, কারো দানের নয়। ভারতীয় হাইকমিশনের এই ঘৃণ্য প্রটোকল স্পর্ধা প্রদর্শন এবং পেছনের সারিতে এরশাদ সাহেবের ফুলকিত অবয়ব, বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে অামি হতভম্ব। অামার কাছে মনে হয়েছে, পেছনে দণ্ডায়মান একটি মেরুদণ্ডহীন বাংলাদেশ, এতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। সর্বোপরি, লজ্জিত বাংলাদেশ এ ছবিতে !! অাপনারা কি বলেন?”
বাঙালি মুসলমানের অপূরণীয় ক্ষতি করা তিন ঘৃণিত মুখার্জি
বর্তমানে বাংলাদেশে ‘মুখার্জি জ্বর’ চলছে। আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মুখার্জির কথা বলতে গিয়ে প্রিয় এক বড় ভাই স্মরণ করিয়ে দিলেন আরো দুই মুখার্জির কথা।
তাদের একজন হলেন- আশুতোষ মুখার্জি।
খুবই নামকরা শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। বাঙালি মুসলমানকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারী হিন্দু উগ্রপন্থীদের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। তার ব্যাপারে ড. শেখ আব্দুর রশীদ তার ‘সেই সিভিল সার্ভিস সেইসব সিভিলিয়ান’ বইয়ে লিখেছেন–
“কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মহল হ’তে ছিল সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জীর বিরোধিতা ছিল একেবারে সর্বজনবিদিত ও অতি প্রকাশ্য। এক্ষেত্রে তার পরম সুহৃদ ও বন্ধু পন্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন একাট্টা। কিন্তু অবশেষে ঢাকায় যখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েই গেল তখন এর ভাইস-চ্যান্সেলর হার্টগের মেধা-শিকারযজ্ঞের প্রথম দিকের পাত্রই হয়ে গেলেন এই বিখ্যাত পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। অনেকে অবাক হ’লেন। আশুতোষ মুখার্জী তো ক্ষেপে অস্থির হ’য়ে গেলেন। ক’দিন আগেই না দু’বন্ধু মিলে প্রস্তাবিত ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে ব্যঙ্গ ক’রে ‘মক্কা ইউনিভার্সিটি’ নামে অভিহিত করেছেন। কত যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছেন যে, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর ক’দিনের ব্যবধানে হরপ্রসাদ সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলেন। হরপ্রসাদের ছুটি বা রিলিজ নেয়া ও তার পাওনাদি আদায়ের আবেদনের ওপরও বাগড়া বাঁধানো হয়েছিল তখন।”
“…. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর ছুটিতে একবার কলকাতায় গিয়ে বন্ধুর সাক্ষাতের চেষ্টা ক’রেও ব্যর্থ হন। যে ক’বছর বেঁচে ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখার্জী আর হরপ্রসাদের মুখদর্শন করেননি। বাক্যালাপ তো দূরের কথা, পত্রালাপও হয়নি কখনো।” (মুক্তচিন্তা প্রকাশনা, ২০১১, পৃষ্ঠা ২২৬-২২৭)
আরেক মুখার্জি হলেন আশুতোষ মুখার্জির-ই ছেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।
তিনি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি এর বাপ। শ্যামাপ্রসাদ বিজেপির পূর্বসংস্করণ ‘ভারতীয় জনসংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৪৩ থেকে ৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন উগ্রপন্থী গ্রুপ ‘হিন্দু মহাসভা’র সভাপতি। এবং সবাই জানে ৪৭ এর বাংলা ভাগের নায়ক ছিলেন এই মুখার্জি।
#বাঙালি মুসলমানের শিক্ষাগত জাগরণের পেছনে মূল ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছেন আশুতোষ মুখার্জি।
#মুসলমানবিদ্বেষ থেকে বাংলা ভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।
#আর বাংলাদেশিদের কাছে প্রণব মুখার্জির সবচেয়ে বড় পরিচয় কী?
তার পরিচয় হচ্ছে, ৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে যে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলছিলো তা ভারতের স্বার্থে থামিয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন প্রণব মুখার্জি।
মজার বিষয় হলো এই তিন মুখার্জিই পশ্চিবঙ্গের লোক! অতীত থেকে বর্তমান- বাংলাদেশিদের সুগা মারতে পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাঙালি সব সময় নের্তত্ব দিয়েছেন।
সূত্রঃ বিডিটুডে।