তাজ উল-ইসলাম হাশমী’র দু’টো কবিতা।।
(১ )
এখনও স্মরণ কর, তাই আসা ।
তোমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে বারবার আসা,
এখনও স্মরণ কর, তাই আসা ।
কিছু কৌতুহল, কিছু আশা নিয়ে আসা,
বুঝতেই পারছ, প্রত্যাশা অনেক;
ভরা যৌবনে-
কাউকে কিছু না বলে আমার হঠাৎ চলে আসা,
স্বপ্নগুলো সব ভেঙে চুরমার, গুঁড়িয়ে গেল সবকিছু-
অতৃপ্ত বাসনা, কামনাগুলো সব অপূর্ণ ভালবাসা,
বাবার শখ, মার অহংকার, আহ্লাদ-আবদার
ছোট বোনটার যত, — সব চুরমার।
ভীরু চোখে তাকাত যে বারবার,
কলাভবনের বারান্দায়, বটতলায়, করিডোরে
কতবার কত ছলে, যে কথা বলব বলে
ঠিক করেছিলাম, হল না বলা
সে কথা যেন ধ্বসে গেল এক সাথে
সেই ৭১-এর মার্চ মাসে।
দ্যাখো দ্যাখো, চেয়ে দ্যাখো ভাল করে —
ঘ্যানর-ঘ্যানর করছি না আমি তোমাদের শহীদ ভাই,
ভরা যৌবনে কেন আসতে হল ফেলে সবকিছু
সে কথাও বলছি না আমি, ৪৭ বছর পর
২০১৮র মার্চ মাসে।
তোমাদের ভালবাসায়, ছড়ায় আর গানে;
ছোট গল্পে, সেমিনারে, আলোচনা সভায়,
আলোচিত আমার সাথীরা আর আমি, অমর শহীদ
কিংবদন্তীর নায়ক হতে কার ভাল্লাগে না বল!
কিন্তু আজকাল! বড্ডো মেকী লাগে তোমাদের সব কথা
সব আয়োজন, সব গান
যেন বড্ড বেসূরো — তাল, লয়, মাত্রার বালাই নেই কোন,
ছন্দপতন অহরহ
এ সব কথা থাক, মোদ্দা কথা শোন,
মনে হয় আর বেশিদিন নেই বাকি,
তোমাদের সব কথা এখনই বুঝি না ভাল করে,
ক’দিন পর তোমরা হবে পরদেশী, পরভাষী আগুন্তক সম
বদলে গেছ বেশ তোমরা সবাই — শহরে, বন্দরে, গ্রামে;
সর্বত্র প্রতিযোগিতা তীব্র বদলে যাবার, চিরতরে
এ যে উত্তরণ নয়, এ কথাই বলতে আসা, প্রায় অনাহুত আমি
তোমাদের দেশে — আমার বদলে যাওয়া সেই ৭১এর
বাংলাদেশে।
তোমরা যারা বক অনর্গল — বল দেশের কথা, দশের কথা,
দেশপ্রেমের কথা — বল না শুধু তোমাদের দোষের কথা;
তোমাদের বলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির কথা
বড্ড মেকী লাগে, আগেই বলেছি তোমাদের সব কথা
বুঝি না ভাল করে, আমি যেন এক পরদেশী,
এসেছি আমার বাংলাদেশে নয়, কোন এক পরদেশে।
হাসি পায় খুব, তোমাদের অভিনয় দেখে
এতসব ছিল না আমাদের কালে,
নেতার পাশে ছিল অভিনেতা বড়-বড়;
তবে ছিল না অভিনয় দেখে এত হাততালি।
যাই বল ভাই, বড্ড অসহ্য তোমাদের
নেতা, নাকি অভিনেতা!
আর তোমাদের অভিনয়,
ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা যত কথা,
বেসূরো গান — বড্ডো আনাড়ি খেলোয়াড় সব,
তোমরা সবাই , তোমাদের নেতা আর অভিনেতা
ঢের ভাল ছিল আমাদের কালে,
যাত্রা দলের ভাঁড়ের রঙ মাখা মুখ আর উম্মোচিত পশ্চাৎদেশ,
দেখে হেসে লুটোপুটি খাওয়া,
ঢের ভাল ছিল, আমাদের কালে।
-ক্লারক্সভিল।। ৯ মার্চ ২০১৮।।
(২)
নাগর দোলায় আতশবাজি!
শোন, শেষ কথা বলিঃ মেলায় যেতে চাও, যাবে
দেখবে আতশবাজি, ভাল কথা।
কিন্তু ও’পথে কেন? দেখতে পাওনা সোজা পথ?
ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে কানা বগির তালগাছটার
পাশ দিয়ে, হাটখোলার বিরাট বুড়ো সেই বটগাছটার
নিচ দিয়ে,
পিচঢালা নয় এ পথ। এ পথে এখনও চলে গরুর গাড়ি,
মোটরগাড়ি কুপোকাত, এ যে বড্ড সোজা মেঠো পথ;
এ পথ ছেড়ে, ঘাটে নৌকা বেঁধে
মাঝি খুঁজতে যাওয়া!
তোমরা আতশবাজি দেখবে না ছাই!
সোজা পথটাকে ঝুলিয়েছ দড়ি দিয়ে,
ঘুরছ নাগরদোলায়! চমৎকার!
চোখেমুখে উৎকণ্ঠা, বুক ঢিপ-ঢিপ
নাগরদোলাটা কখন ভেঙে পড়ে!
যাবার আগে আবার বলছি শোন,
নাগরদোলা ছাড়তে হবে
শিখতে হবে পথ চলা — সোজা পথে
আর নয়, বাঁকা পথ;
একটু বন্ধুর, কর্দমাসিক্ত মাঝে-মাঝে,
এ পথেই যাবে মুক্তির পথে,
চড়ে স্বাধীনতার রথে।
নাগরদোলা ছাড়,,
নাগরদোলায় চড়ে দেখবে আতশবাজি?
বড্ড দুরাশা! এখনও সময় আছে,
পথে নেমে পড়, সেই পুরানো মেঠো পথে।
ক্লারক্সভিল।। ৯ মার্চ ২০১৮।।