ড. কামালই কী শেষাবধি ভাঙবেন বিএনপি?
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১০ আগস্ট, শুক্রবারও কামাল-ফখরুল টেলি আলাপ হয়েছে। এই আলাপে মির্জা ফখরুল ড. কামালকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ঐক্য প্রক্রিয়ায় তিনি থাকবেন। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরো বিএনপিকে নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যেতে চান। কিন্তু ড. কামাল তাঁর ঐক্য প্রক্রিয়ায় তাদেরই রাখতে চান যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ নেই। যাদের ইমেজ ভাল। ড. কামাল হোসেন বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতো ইমেজ সংকটে থাকা নেতাদের তিনি চান না। এর কারণ হিসেবে ড. কামাল বলেছেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য সন্ত্রাস, পেশী শক্তি এবং দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি। এজন্য প্রস্তাবিত জোটে তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের রাখতে চান না। তিনি চান ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদদের। এক্ষেত্রে বিএনপিতে তাঁর মির্জা ফখরুল ছাড়া যাদের পছন্দ তাঁরা হলেন লে. জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদের মতো রাজনীতিবিদদের। ড. কামালের এই পছন্দ অপছন্দের কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ড. কামাল হোসেনই ভাঙছেন বিএনপি? বিএনপিতে ক্রমশ: এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। কারণ, গত কয়েক মাস ধরেই বিএনপি মহাসচিব ২০ দলের চেয়ে যুক্তফ্রন্ট এবং ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। এসব জোটের অনুষ্ঠানে তিনি একাই আমন্ত্রিত হচ্ছেন এবং একাই যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এসব অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বেগম জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাচ্ছেন। কথা বলছেন শুধু জাতীয় ঐক্য নিয়ে। বিএনপির মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, তাহলে কি মির্জা ফখরুল বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন? তিনি কি ড. কামাল এবং অধ্যাপক বি. চৌধুরীর জোটে যাচ্ছেন। বিএনপি মহাসচিব অবশ্য দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি একেবারেই নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় যারা তাদের সবাইকে নিয়েই একটি ঐক্যমঞ্চ করতে চান । আলাপকালে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই।’ এরকম ঐক্য বা জোটের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নেতৃত্ব এখানে কোনো ইস্যু নয়। ইস্যু হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’
তবে বিএনপির একটি বড় অংশ মহাসচিবের সঙ্গে ড. কামাল এবং বি. চৌধুরীর অতিরিক্ত মাখামাখিতে বিরক্ত। তাঁরা মনে করছেন, মির্জা ফখরুল ভুল পথে চলছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী একজন পরীক্ষিত বিশ্বাস ভঙ্গকারী। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে ড. কামাল একজন পরীক্ষিত জনবিচ্ছিন্ন মানুষ। এরা সুবিধাবাদী। এখন এরা বিএনপির উপর সওয়ার হয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, ড. কামাল হোসেন ইস্যুতে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। ড. কামালের জন্যই কি তাহলে ভাঙ্গবে বিএনপি?
বাংলা ইনসাইডার