পারিবারিক সূত্র ধরে অভিবাসন পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা আরও জোরালো হচ্ছে।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুকঃ পারিবারিক সূত্র ধরে অভিবাসন পদ্ধতি বাতিলের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এতদিন ধরে এমনিতেই বলে আসছিলেন। নিউইয়র্ক সিটির প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটানে এ সন্ত্রাসী হামলার পর তা আরও জোরালো করার ঘোষণা দিতে সুযোগ মিলল এবার। তিনি এখন অত্যন্ত কঠোর ভাবেই বলেছেন, এরপর থেকে চেইন ইমিগ্রেশন নয়, বরং মেধার ভিত্তিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের বরাবরই বক্তব্য হল, পারিবারিক সূত্র ধরে যে সব লোক যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমাচ্ছে ও স্থায়ী হচ্ছে, তাদের অনেকই শেষাবধি রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে না ।
ম্যানহাটানে হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তি একজন অভিবাসী হওয়ায় এ বিষয়ক আইন কড়াকড়ি করার আভাস দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনার পরপরই এক লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, অভিবাসন আইন আরও কড়াকড়ি করতে উদ্যোগ নেবে কংগ্রেস। অভিবাসীরা যেন কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে না পারে, সে ব্যাপারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে আরও কঠোর হওয়ারও নির্দেশ দিলেন তিনি।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন হোয়াইট হাউস মুখপাত্র সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স। বলেন, পারিবারিক সম্পর্কের সূত্র ধরে নয় বরং মেধার ভিত্তিতে হতে হবে মার্কিন অভিবাসন নীতিমালা। তিনি বলেন, “নিউইয়র্কে হামলাকারী আকায়েদ উল্লাহ যে ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে, তা সাধারণত মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তির ভাইবোনের সন্তানরা পেয়ে থাকেন। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই এ পদ্ধতির বিরোধী। তার নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে আটকানো যেত চরমপন্থিদের প্রবেশ। এ কারণেই গোটা অভিবাসন নীতিমালা সংস্কারের পক্ষে প্রেসিডেন্ট।”
হোয়াইট হাউসের এ বক্তব্যে সমর্থন দিচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও। তারা বলছেন, বিদ্যমান অভিবাসন নীতির ব্যর্থতারই ফলাফল এসব হামলা। এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার আহ্বান জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স বলেন, “দু’মাসের কম সময়ে অভিবাসীদের হামলার শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা সামগ্রিক নীতিমালার ব্যর্থতারই ফল। যাদের মার্কিন স্বার্থ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, তাদের অভিবাসনের অনুমতি দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করছি।”
বছরে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসীকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিপত্র- গ্রিন কার্ড দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত আগস্টে অভিবাসন নীতিতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে এ সংখ্যা ৫ লাখে নামানোর ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলার পর আরও জোরালো হবে ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ- এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, হামলার আগে ফেসবুকে আকায়েদ লিখেছিল, ‘‘ট্রাম্প, তুমি তোমার দেশ রক্ষা করতে পারলে না!’’ ফেসবুকেই আইএসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল সে। পুলিশের দাবি, জেরায় সে প্রথমে বলে, ‘‘নিউইয়র্ক শহরে চারদিকে বড়দিনের প্রচুর সাজসজ্জা দেখেই আর মাথা ঠিক রাখতে পারি নি।’’ আজ আবার আকায়েদ নাকি বলেছে, ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই এ হামলা। একটি বৈদ্যতিক সংস্থার কর্মী আকায়েদ নিজের অফিসে বসেই বিস্ফোরক বানিয়েছিল বলে আজ দাবি করেছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র। আকায়েদ নিজেকে আইএস জঙ্গি বলে দাবি করলেও ওই ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে তার কোন যোগসাজশ পাওয়া যায় নি, জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি দূতাবাস কালকের ঘটনার নিন্দা করেছে। একটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কোনভাবেই আপোস করতে রাজি নয়। যদিও ঢাকার তরফে আজ জানানো হয়েছে, আকায়েদের কোন অপরাধের অতীত ছিল না। বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, কাউকে পাসপোর্ট দিতে গেলে তাঁর অতীতের সব রেকর্ড খতিয়ে দেখা হয়। আকায়েদের তেমন কোন অপরাধের ইতিহাস ছিল না
নিজের দেহে পাইপ বোমা বেঁধে সেটি ফাটানোর উদ্দেশ্য ছিল তার। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে একটি পাইপ বোমা ফেটে জখম হয় ওই জঙ্গি। ভেস্তে যায় বড় হামলার ছক। আহত হন ওই সময় আশপাশে থাকা তিন জন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে ২৭ বছরের আকায়েদকে। তাকে জেরা করে জানা গিয়েছে, বর্তমান ব্রুকলিনের বাসিন্দা আকায়েদ সাত বছর আগে পারিবারিক এফ-৪৩ মার্কিন ভিসায় বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এসেছিল। এ ধরনের ভিসায় আমেরিকার কোন নাগরিকের ভাই বা বোনের ছেলেমেয়েকে অন্য কোনও দেশ থেকে আমেরিকায় আসার অনুমতি দেওয়া হয়।
https://www.usatoday.com/story/news/politics/2017/12/11/trump-team-immigration-restrictions-needed-after-new-york-city-incident/941692001/