ডা. মরিস বুকইলি’র ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার গল্প।।

December 16, 2017 1:30 am0 commentsViews: 41
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।
 ফ্রাঁসোয়া মিত্রা  ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি তার পদে থাকাকালীন সময়ে আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে আতিথেয়তার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। ফ্রান্স তাতে কিছু প্রত্নতাত্তিক গবেষণা করতে চাইল। মিসরের সরকার তাতে রাজি হল। কাজেই কায়রো থেকে ফিরাউনের যাত্রা হল প্যারিস! প্লেনের সিড়ি থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ লাইন দিয়ে দাঁড়ালেন এবং মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন!!
যখন ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে সে মমিকে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা আছে এবং তারা ফিরাউনের মমিকে অটপ্‌সি (ময়নাতদন্ত) করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে। মমির উপর গবেষণার জন্য প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন, তারা মমিটাকে পুনর্গঠন (ক্ষত অংশগুলো ঠিক করা) করতে চাচ্ছিল, আর ডা. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে কিভাবে এই ফিরাউন মারা গেল! পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসল!
তার শরীরে লবণ অবশিষ্ট ছিলঃ এটা সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল এবং তার শরীর ডুবার পরপরই সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র [লোহিত সাগর] থেকে তুলে আনা হয়েছিল! তারপর লাশটা সংরক্ষণ করার জন্য দ্রুত মমি করা হল। কিন্তু এখানে একটা ঘটনা প্রফেসর মরিসকে হতবাক করে দেয়। তিনি চিন্তা করতে থাকেন, কিভাবে এ মমি অন্য মমিদের তুলনায় একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যদিওবা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে [কোন বস্তু যদি আর্দ্রাবস্থায় থাকে, ব্যাকটেরিয়া ঐ বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিতে পারে, কারণ আর্দ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে]!!
ড. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করে তাতে তিনি বললেনঃ এটা একটা নতুন আবিস্কার। সে সময় তাকে একজন তার কানে ফিসফিস কেরে বললঃ মুসলিমদের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে ঝট করে আবার বলতে যেও না! কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর সমালোচনা করলেন এবং এটা আজব ভাবলেন যে, এ রকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানান যাবেনা!! কেউ একজন তাকে বলল যে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে ফিরাউনের ডুবা ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বর্ণিত আছে । এ ঘটনা শুনে ড. মরিস বুকাইলি বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব?? এ মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে!! আরবেরা প্রাচীন মিসরীয়দের মমি করার পদ্ধতিতো জানতই না। মাত্র কয়েক দশক আগে আমরা জানলাম!! ড. মরিস বুকাইলি সেই রাতে ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই বসে রইলেন। আর গভীরভাবে ভাবছিলেন, যা তার কলিগ তার কানে ফিশফিশিয়ে বলে গেল যে মুসলিমদের কুরআনে ফিরাউনের লাশের সংরক্ষণের কথা!!
বাইবেল ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ) পিছু নেয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু ফিরাউনের লাশের কি হল সেটা সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন যে, এটা কি সম্ভব যে, এ মমি যার সেই (ফিরাউন) কি মুসার (আ) পিছু নিয়েছিল? এটা কি ধারণা করা যায় যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন??
ডা.  মরিস বুকাইলি সে রাতে ঘুমাতে পারলেন না। তিনি তোরাহ্‌ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে, পানি আসল এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল। যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড. মরিস বুকাইলি হতবাক হয়ে গেলেন যে, বাইবেলে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছুই বলা নেই!!
তিনি তার লাগেজ বাঁধলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন, যারা অটোপ্‌সি বিশেষজ্ঞও। তাঁর সেখানে পৌছনোর পর ফিরাউনের লাশ ডুবার পর সংরক্ষণের যে আবিষ্কার তিনি যেটা পেয়েছেন সেটা নিয়ে বললেন। তাই একজন বিশেষজ্ঞ (মুসলিম) পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ডা. মরিসকে পড়ে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ
“অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে, যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।” [আল-কুরআন; সুরাঃ ১০, আয়াতঃ ৯২]
তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়ে পড়লেন এবং দর্শকদের (মুসলিম সার্জন) ভীষণভাবে অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং তিনি তার জোর গলায় চিৎকার দিয়ে বললেনঃ আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]
ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রাকটিস করেন নি বরং এ সময় টানা ১০ বছর ধরে তিনি আরবী ভাষা শিখলেন। তিনি পবিত্র কুরআনে কোন বৈজ্ঞানিক দ্বিমত আছে কিনা সেটা খুঁজেছেন। তারপর তিনি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ বুঝলেন যেটাতে বলা আছেঃ “এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” [আল-কুরআন; সুরাঃ ৪১, আয়াতঃ ৪২]
১৯৭৬ সালে ডা. মরিস বুকাইলি একটা বই লেখেন যেটা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়। যেটা বেস্ট সেলার হয়। বইটি প্রায় ৫০ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে!!
বইটির নামঃ “বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান”
তিনি থিওরি অফ এভুলুশনকে চ্যালেঞ্জ করে একটি বই লেখেন, যার নাম “What is the Origin of Man?”
[অনলাইন থেকে নেওয়া তথ্যাবলম্বনে রচিত]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com