টেস্টটিউব বেবি যেভাবে জন্ম নেয় – জেনে রাখুন

January 13, 2018 3:15 am0 commentsViews: 8

বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবি এখন আর কোনো কল্পনার বিষয় নয়। উল্লেখ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম টেস্টটিউব বেবি লুইস ব্লাউনের জন্ম হয় ১৯৭৮ সালের ১১ নভেম্বর ইংল্যান্ডে। অনেক দেরিতে হলেও দেশে টেস্টটিউব বেবি জন্মদানের প্রযুক্তি আমাদের আয়ত্তে এসেছে। ক্রমান্বয়ে এ প্রযুক্তির পদ্ধতিগত উন্নয়নের সঙ্গেও আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি এবং হব। এসব আশার কথা।

বাংলাদেশে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় ২০০১ সালের ২৯ মে ঢাকার একটি কিনিকে। দেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবির মা ফিরোজা বেগম (৩৩) ও বাবা আবু হানিফ তাদের বিবাহিত জীবনের ১৬ বছর পর এ টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতিতে একসঙ্গে তিন কন্যাসন্তান লাভ করেন। টেস্টটিউব বেবি নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার ও ভুল ধারণা।

টেস্টটিউব বেবি সম্পর্কে ভুল ধারণা অনেক। টেস্টটিউব বেবিÑ এ শব্দগুলো থেকেই অনেকের মনে ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। এ কারণে অনেকেই মনে করেন, টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় টেস্টটিউবের মধ্যে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, টেস্টটিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া কোনো শিশু। কাজেই কৃত্রিম উপায়ে এভাবে সন্তান লাভে ধর্মীয় বাধা থাকতে পারে। কিন্তু টেস্টটিউব বেবির বিষয়টি মোটেও তা নয়। বিভিন্ন রোগের যেমন বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, এটিও তেমনি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।

টেস্টটিউব বেবি হচ্ছে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় সর্বজন স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিরও বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। এ কৌশলের একটি হচ্ছে আইভিএফ। এ পদ্ধতিতে দেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়েছে। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি সংক্ষেপে বলা হয় আইভিএফ। এ পদ্ধতিতে স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু ল্যাপারেস্কোপিক পদ্ধতিতে অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা হয়। তারপর সেটি প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়।

একই সময়ে স্বামীর অসংখ্য শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা থেকে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু। তার পর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণু ছেড়ে দেওয়া হয় নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে রাখা ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এ পেট্রিডিশটি তারপর সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের পরিবেশ অনুরূপ একটি ইনকিউবিটরে। ইনকিউবিটরের মধ্যে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রƒণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে। ভ্রƒণ সৃষ্টির পর সেটি একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে জরায়ুতে সংস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। জরায়ুতে ভ্রƒণ সংস্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পরই তা চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয়। কোনো টেস্টটিউবে এ শিশু বেড়ে ওঠে না।

স্বাভাবিক জন্ম নেওয়া প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর পুরোটাই সম্পন্ন হয় মায়ের ডিম্বনালি ও জরায়ুতে। আর টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে স্ত্রীর ডিম্বাণু ও স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে সেটি একটি বিশেষ পাত্রে রেখে বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় নিষিক্তের জন্য।

নিষিক্তকরণের পর সৃষ্ট ভ্রƒণ স্ত্রীর জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। সূচনার এ সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে শিশু একদম স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। একজন স্বাভাবিক গর্ভধারিণীর জরায়ুতে বেড়ে ওঠা শিশুর জীবন প্রণালির সঙ্গে টেস্টটিউব বেবির জীবন প্রণালির কোনো পার্থক্য নেই। এ নিয়ে অনাবশ্যক আগ্রহ সৃষ্টিরও কোনো সুযোগ নেই। রোগী রোগের চিকিৎসা করাবেন, এটাই স্বাভাবিক।

লেখক : স্বাস্থ্যবিষয়ক নিবন্ধকার

ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হসপিটাল, ঢাকা

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com