জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের বিতর্কিত ঘোষণা
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক। স্থানীয় সময়ঃ ৬ ডিসেম্বর রাত নয়টা।
কথা রাখতে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বিতর্কিত শহর জেরুসালেমকে ইসরা্লইর রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়, ‘‘বাস্তবকে স্বীকার করাই ভাল।’’
বছর খানেক আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হয়ে এলে জেরুসালেমকেই ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। তেল আভিভ থেকে সরিয়ে নেবেন মার্কিন দূতাবাসও। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, দূতাবাস স্থানান্তরের আগেই আজ সেই ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকার পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের আমেরিকান নীতিকেই বদলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট আরও ঘোষণা করেছেন যে, আমেরিকান দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেটি অপসারনে কিছু সময় লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অবশ্য েএ রকম ঘোষণার সাথে সাথে ট্রাম্প এও বলে আশ্বস্ত করতে চাইলেন যে, এই সিদ্ধান্তের মানে এই নয় যে, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে।
তিনি বলেছেন, দীর্ঘ দিনের ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সংঘাতের অবসান ঘটাতে আমেরিকা দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত, যদি উভয় পক্ষ সেটাই চায়।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একজন মুখপাত্র সাবধান করে দেন যে এই সিদ্ধান্ত এলাকার জন্য “বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনবে।”
অন্যদিকে ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
কিন্তু এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানিয়ে প্যালেস্টাইনের নেতা মাহমুদ আব্বাস এটিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আর হামাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এই সিদ্ধান্ত এতদ অঞ্চলে ‘নরকের দ্বার খুলে দেবে’।
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বলেছেন, এই ঘোষণা ‘সারা পৃথিবীর মুসলিমদের ঘোরতর ভাবে প্ররোচিত করবে’।
এই ঘোষণার প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই গাজায় এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনসুলেটের সামনে মিছিল হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তটিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘ভীষণ উদ্বেগের মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন না করে বলেছেন, সে অঞ্চলে শান্তি আনয়নের পথে এটি কোনো উপকারী পদক্ষেপ হবে না।
এছাড়া ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কূটনীতিক ফেদেরিকা মোগেরিনি-ও বিষয়টিকে উদ্বেগের বলে মনে করছেন।
U.S. President Donald Trump would effectively be making a declaration of war if he recognizes Jerusalem as Israel’s capital, the Palestinians’ chief representative to Britain said on Wednesday.
“If he says what he is intending to say about Jerusalem being the capital of Israel, it means a kiss of death to the two-state solution,” Manuel Hassassian said in a BBC radio interview.
“He is declaring war in the Middle East, he is declaring war against 1.5 billion Muslims (and) hundreds of millions of Christians that are not going to accept the holy shrines to be totally under the hegemony of Israel,” Hassassian added.
read more: https://www.haaretz.com/middle-east-news/palestinians/1.827152
এদিকে আমেরিকার ঘোষণার পরপরই প্যালেস্টাইনে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ জমছে গোটা আরব দুনিয়ায়। এমনকী আমেরিকার ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবও বলছে, ‘‘প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের কাছেই এক চরম উস্কানি।’’
ট্রাম্পের তাই এমন উল্টো পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত, পশ্চিম এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়াকে একেবারে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে কূটনীতিক মহল। তা হলে কি ফের রক্তে ভাসবে গাজা ও পশ্চিম ভূখণ্ড? হোয়াইট হাউসের দাবি, ইজরায়েলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া নয়, প্রেসিডেন্ট ঐতিহাসিক বাস্তবটাকেই স্বীকৃতি দিলেন মাত্র। মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনও বলেছেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রের প্রেসি়ডেন্ট এখনও আগের মতোই দায়বদ্ধ।’’ টিলারসন জানিয়েছেন, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাল ট্রাম্প নিজে থেকেই ফোন করে কথা বলেছেন প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে।
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি কেউই। ফলে অস্বস্তি থাকছেই। ইরান, তুরস্ক, ফ্রান্স, জর্ডন, মরক্কো ও মিশরের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ফোন কথা বলেছেন আব্বাস। পাশে থাকার ব্যাপারে তাঁদের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছেন। আমেরিকার এই ‘চক্রান্ত’ মেনে নেওয়া হবে না বলে তোপ দেগেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এর প্রতিবাদে গোটা মুসলিম দুনিয়াকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোগান আগামী ১৩ ডিসেম্বর থেকে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’-এর শীর্ষ বৈঠক ডেকেছেন। ট্রাম্পকে এ ধরনের ঘোষণা না-করার অনুরোধ জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও।
ট্রাম্প যে এমন একটা কিছু করতে পারেন, কয়েক দিন ধরেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অভিন্ন জেরুসালেমকে চিরদিনই নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে এসেছে ইজরায়েল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল যে ভাবে পূর্ব জেরুসালেমের দখল নেয়, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্যালেস্তাইনের। সেখানে ইহুদিদের কয়েক ডজন ‘অবৈধ’ বসতি সত্ত্বেও, এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ প্যালেস্তাইনিরাই। বরাবর তারা বলে আসছে, পূর্ব জেরুসালেমই হবে স্বাধীন প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রের রাজধানী। তাদের আশঙ্কা, গোটা জেরুসালেমটাই ইজরায়েলের নামে করে দিয়ে আমেরিকা এখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাটাই নস্যাৎ করে দিতে চাইছে।
কিন্তু দূতাবাস সরানোর কী হবে? হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, ট্রাম্প আজ হয়তু এ নিয়েও নির্দেশ জারি করতে পারেন। ১৯৯৩ সালে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, তাকে সম্মান জানাতেই এত দিন সব দেশ তেল আভিভেই নিজেদের দূতাবাস রেখেছে। ব্যতিক্রম নয় আমেরিকাও। সেখান থেকে দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়া হবে না বলে প্রতি ছ’মাস অন্তর সম্মতি জানিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। এ দফায় ট্রাম্পের সইয়ের তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে দু’দিন আগে। তাই দূতাবাস আদৌ তেল আভিভে থাকবে কি না, তা নিয়ে দ্বন্ধ তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণা হলেও, তা কার্যকর হতে হতে অন্তত বছর চারেক লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় যে নতুন ভাবে হিংসার সম্ভাবনা তৈরি হল তা মেনে নিচ্ছেন কূটনীতিকেরা। সিরিয়ার পরিস্থিতির ফলে ওই অঞ্চল অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। এই ঘোষণার ফলে ফিলিস্তিনেও এখন আগুন জ্বলতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে তুরস্ক ও ইরান এ ঘোষণার ফলে ট্রাম্প মূলত মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে হুমকি দিয়েছে।