জেরুজালেম ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি, মুসলিম বিশ্বের উদ্বেগ!

December 5, 2017 11:06 pm0 commentsViews: 30
news-image
 রকিব মুহাম্মাদ ।।
জেরুজালেম কার?  ইসরাইল নাকি ফিলিস্তিনের!  এ প্রশ্ন সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ঝুলে আছে। ওই বছর ফিলিস্তিনের কাছ থেকে জেরুজালেম কেড়ে নেয় দখলদার ইসরাইল। তারা একে ঘোষণা দেয় ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে। ফিলিস্তিনও নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে জেরুজালেমকে।

কিন্তু এ সমস্যার সমাধান আর হয় নি। অনেকেই চেষ্টা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শক্তিধর প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তারা মুসলিম বিশ্বের চাপে তা রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি।

এবার শোনা যাচ্ছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর বুধবার পবিত্র নগরী জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা  করতে পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যদিও ওই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

গেলো বছর আমেরিকার নির্বাচনের আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিন ইয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে।

সে সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তার শাসনামলেই জেরুজালেমকে ইসরাইল রাষ্ট্রের অখণ্ড রাজধানী হিসেবে মর্যাদা দেবে আমেরিকা।এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য ট্রাম্প ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে এই ঘোষণা দিতে চলেছে বলে অনেকের ধারণা।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য বাধ্য করবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা হলে ‘পরিণাম গুরুতর’ হতে পারে।এমন সিদ্ধান্তে আরব ও মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিকে ট্রাম্পকে এমন ঘোষণা থেকে বিরত রাখতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত রবিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগানসহ অন্যান্য বিশ্বনেতাদের ফোন করেছেন তিনি।

তিনি ‘জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বা সেখানে আমেরিকান দূতাবাস স্থাপন করলে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে ধারণা দিতে’ আান্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন মাহমুদ আব্বাসের উপদেষ্টা মাজেদি আল-খালিদি।

আব্বাসের উপদেষ্টা মাজেদি আল খালেদি জানিয়েছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস সেখানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে যে ঝুঁকি তৈরি হবে তা ব্যাখ্যা করতে বিশ্ব নেতাদের ফোন করেছিলেন আব্বাস। যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিলে তা ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে ফিলিস্তিনি নেতারা আগেই সতর্ক করেছেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের  আরেক মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনার জানান, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য সমানভাবে ভয়ঙ্কর।

ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এমন সিদ্ধান্ত ইসরাইল আর ফিলিস্তিনকে দুটি আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পথে আরো বাধা সৃষ্টি করবে বলে ফিলিস্তিনের নেতারা আগেই সতর্ক করেছেন।

জেরুজালেমের ওপর যে কোন ধরনের আঘাত আসলে তা হবে আগুন নিয়ে খেলার শামিল বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন (পিএলও)।

শনিবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুসলিম-খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ভূমিকে কেবল ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দিলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

সবশেষ আজ মঙ্গলবার আঙ্কারায় দলীয় অনুষ্ঠানের ভাষণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হুশিয়ার করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগান বলেন, পবিত্র জেরুজালেম শহরকে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা হলে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব আমরা।  তিনি বলেন, ‘মিস্টার ট্রাম্প, জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য রেড লাইন।’

ট্রাম্প এমন সিদ্ধান্ত নিলে পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের শীর্ষ বৈঠকের আহ্বান জানানো হবে বলে ঘোষণা দেন ওআইসির বর্তমান সভাপতি এরদোগান।

এছাড়া তুরস্ক ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়টি বিবেচনা করবে বলেও জানিয়ে দেন এরদোগান।

প্রসঙ্গত,  জেরুজালেম ইহুদি, ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের জন্য পবিত্র স্থান। ১৯৬৭ র মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরাইল। ১৯৮০ সাল থেকে তারা নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে আসছে।

আন্তর্জাতিক আইনে এ এলাকাকে দখল হওয়া অঞ্চল বলে অভিহিত করা হয়। অবিভক্ত জেরুজালেমকে স্থায়ী রাজধানী হিসেবে চায় ইসরাইল। পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায় ফিলিস্তিনিরা।

১৯৪৮’র পর থেকে আলোচনার মাধ্যমে জেরুজালেম দ্বন্দ্বের সমাধানের কথা বলে এসেছে সব মার্কিন প্রশাসন। তবে তাদের আলোচনায় প্রভাব পড়তে পারে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ দেশটির প্রশাসন।

সূত্রঃ আওয়ার ইসলাম।।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com