জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার হওয়া তিনজনই মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।।
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৯
নরসিংদীর মাধবদী ও শেখেরচরের দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্দেহভাজন চার জঙ্গির মধ্যে তিনজনই মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম
বুধবার (১৭ অক্টোবর) জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে মাধবদী বাজার বড় মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি আস্তানা নিলুফা ভিলার দুই নারী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের নাম ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মারিয়া ওরফে মৌ (২৪) ও খাদিজা আক্তার ওরফে মেঘনা (২৫)। তাদেরকে মাধবদী থানায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন বিবাহিত আর অপরজন অবিবাহিত। তারা রাজধানীর মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল।
এর আগে গত মঙ্গলবার নরসিংদীর শেখেরচর ভগিরথপুর এলাকার জঙ্গি আস্তানায় নিহত দু’জনেরও নাম-পরিচয় প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রকাশ করা হয়। এরা হলেন, আবু আব্দুল্লাহ আল বাঙ্গালী (২৬) ও আকলিমা আক্তার মনি (২০)। এরা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। আবু আব্দুল্লাহ আল বাঙ্গালী নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধান ছিলেন। আর আকলিমা আক্তার মনি মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী।
পুলিশের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব সন্দেহভাজন চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। সেই চার নারী জঙ্গির মধ্যে মৌ ও মেঘলা ছিলেন। পরে কয়েক মাস কারাবন্দি থাকার পর তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হিজরত করেছিলেন।
পুলিশ আরও জানায়, দুই নারী জঙ্গি এক সময়ে মিরপুরের জনতা হাউজিং এলাকায় থাকতেন। মৌসুমী ওরফে মৌ মিরপুরের ইসলামীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে। এরপর ২০১২ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। মেডিকেল ও ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফার্মগেটের ইউসিসি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। ২০১৩ সালে সে মানারাত ইউনিভার্সিটিতে ফার্মাসি বিভাগে অনার্স প্রথমবর্ষে ভর্তি হয়।
এছাড়া জনতা হাউজিংয়েরই একটি বাড়ির পঞ্চমতলায় এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট হিসেবে থাকতেন খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘলা। তিনি ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। ওই বছরই রোকনুজ্জামান নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তিনিও বর্তমানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
মনিরুল ইসলাম জঙ্গিদের পরিচয় জানিয়ে বলেন, কি কারণে জঙ্গিরা এই এলাকায় আস্তানা গেড়েছিল এবং তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী ছিল তা তদন্ত করে বের করা হবে। আত্মসমপর্ণকৃত দু’জনের বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হবে।
নরসিংদীতে জঙ্গি অভিযান সমাপ্ত, ২ নারীর আত্মসমর্পণ
বুধবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
বেলা ৩টার দিকে মাধবদী বাজার বড় মসজিদের সামনে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে সোয়াটকে লক্ষ্য করে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির একপর্যায়ে দুই নারী আত্মসমর্পণ করেন। মাধবদী থানায় ওই দুই জঙ্গির নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ভবনের ভেতরে আর কোনো জঙ্গি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় বলেও জানান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযান শেষে জঙ্গি আস্তানার ভেতরে থাকা বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটায় সোয়াট।
এর আগে সকাল থেকে অভিযানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ড্রোনের মাধ্যমে মাধবদী পৌর এলাকার নিলুফা ভিলায় জঙ্গিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ঘিরে রাখা বাড়ির ভেতর থাকা ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণেরও অনুরোধ জানায় পুলিশ।
অভিযানের আগেই ওই বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়। পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এছাড়া সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। মাইকিং করে মহল্লার সবাইকে বাড়ির বাইরে ও ছাদে যেতে নিষেধ করা হয় এবং বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়। এলাকার সব দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ‘মিততাহুল জান্নাহ মহিলা মাদ্রাসা’ নামের একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। নিলুফা ভিলার ওই ফ্ল্যাটটি গত ৬ মাস আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার এলাকার বাসিন্দা হাফিজ ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি ভাড়া নেন। গত সোমবার রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে ভেতর থেকে লাইট বন্ধ করে দেন ঘরের সদস্যরা। এতে সন্দেহ ঘণীভূত হলে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুর এলাকার এক পাঁচতলা বাড়িতে সকাল ১০টা থেকে ছয় ঘণ্টার ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’ বা জটিল গেরো নামে অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযান শেষে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ এক নারী ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ