চার বছরের ছাত্রীকে দু’জন শিক্ষক মিলে যৌন হেনস্থা
১ ডিসেম্বর ২০১৭।।
এক জন নয়, স্কুলে দুই পিটি শিক্ষক মিলে ‘যৌন নির্যাতন’ করেছে চার বছরের ছাত্রীকে! অভিযুক্তকে সনাক্ত করতে ছাত্রীটিকে পাঁচ শিক্ষকের ছবি দেখানো হয়। দুই শিক্ষকের দিকে আঙুল তুলেছে সে।
নিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই চিহ্নিত করা হয়েছিল একজনকে। তাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পরে বিকেলে অভিযুক্ত আর এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রানিকুঠির জি ডি বিড়লা স্কুল। ঘটনাটি গত ৩০ নভেম্বর, বৃহস্পতিবারের। ছাত্রীটির পরিবার জানিয়েছে, ওই দিন স্কুল ছুটির পর মেয়ে বাড়িতে ফিরে কান্নাকাটি শুরু করে। ভয়ে, আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিল সে। প্রথম দিকে কিছু বলতেই চাইছিল না।
মেয়ে কেন এমন করছে বুঝতে গিয়েই মা দেখেন, তার ফ্রকে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে পারিবারিক চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যান তিনি। পরীক্ষা করে দেখে চিকিত্সকই জানান, মেয়েটির উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম করে ওই ছাত্রী। ছাত্রীর বাবা যাদবপুর থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পিটি শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তদন্তে নেমে উঠে আসে নতুন তথ্য। ধৃত শিক্ষকই শুধু নয়, আরও এক শিক্ষক এই ঘটনায় জড়িত! তেমনটাই দাবি করেছে ছাত্রীটির পরিবারও।
মেয়েটিকে গতকালই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ এবং ফরেন্সিক বিভাগের তিন চিকিত্সককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। সমস্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ছাত্রীটির স্কুলের ইউনিফর্মটিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এ দিন তার মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়। তার প্রাথমিক রিপোর্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের তরফ থেকে জানানো হয়, মেডিক্যাল রিপোর্টে নির্যাতন হয়েছে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত বিকেলের আগে আসেনি।
এ দিন সকালে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই অন্য পড়ুয়াদের অভিভাবকরা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে ঘটনাস্থলে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা ছুটে আসেন। অভিভাবকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমেই গোটা ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়ার এবং ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিভাবকদের অভিযোগ। এত নামী একটা স্কুল, যেখানে এত টাকা খরচ করে বাচ্চাদের পড়তে পাঠানো হয়, সেই স্কুলে এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা।
সকালে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর স্কুলের অধ্যক্ষার বক্তব্য ছিল— বৃহস্পতিবার লোয়ার নার্সারিতে পিটির কোনও ক্লাস ছিল না। তবে যেহেতু ছাত্রীটি এমন অভিযোগ তুলেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু ঘটনা যে ঘটেছিল, তা মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে আসার পর পরিষ্কার।
তিন বছর আগেও এই স্কুলে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ তখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্বরোচিত কাজ। একটি বেসরকারি স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে। পিটি টিচার জড়িত বলে জানা গিয়েছে। আমাদের বোর্ডের স্কুল নয়। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কঠোর শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিন বছর আগেও ওই স্কুলে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি। এত নামী স্কুলে নিরাপত্তা এমন কেন হবে, আমরা সেটা দেখার দায়িত্ব নিচ্ছি।”
সূত্রঃ আনন্দবাজার ও অন্যান্য।