চাচির পরকীয়া দেখে ফেলায় কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যা!

October 29, 2017 10:05 pm0 commentsViews: 37
চাচির পরকীয়া দেখে ফেলায় কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যা!

চাচির পরকী দেখে ফেলায়- নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় চাচির পরকীয়া দেখে ফেলায় মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে এক কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কিশোরী মারা যায়।

নিহত কিশোরীর নাম আজিজা খাতুন (১৩)। সে শিবপুরের খৈনকুট গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি পোলট্রি ফার্মে কাজ করেন।

এই ঘটনায় রাত ১১টায় শিবপুর থানায় মামলা করেন আজিজার বাবা। এতে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে আজিজার চাচি বিউটি বেগমকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিউটির মা সানোয়ারা বেগম, চাচাতো ভাই রুবেল ও ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগম।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিউটির স্বামী সালাম মিয়া তিন মাস আগে মালয়েশিয়া যান। এরপর বিউটি এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি কিশোরী আজিজা তার চাচির পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলে। এ জন্য বেশ কিছুদিন ধরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বিউটি।

এ জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই রুবেল, মা সানোয়ারা বেগম ও ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগমকে ডেকে আনেন। পরে মোবাইল ফোন চুরির নাটক সাজিয়ে আজিজা সেটি চুরি করে বলে অপবাদ দেন। এরপর শুক্রবার বিউটিকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-মুখ বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন।

মামলার আগে নিহত আজিজার ভাই সুজন জানান, কয়েকদিন আগে তাঁর চাচির একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় আজিজাকে সন্দেহ করেন তাঁরা। সেই সময় এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন তাঁরা।

আজিজার মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘চুরির তিনদিন পরে আইয়্যা কইতাছে আমার দুই মাইয়্যা বলে মোবাইল লইয়্যাছে। এডা কইতাছে চাচার হুউরি (শাশুড়ি) আইয়্যা। পরে কইতাছে কবিরাজে বলে নাম কইয়্যা দিছে। পরে আমার দেওরের (দেবর) শাশুড়ি কয় আমার জিয়েরে (আজিজা) আগুন দিয়া পুড়ে হালাইবো।

কালকে আমার জিয়া পাতা আনতো গেছে ইশকুলের মাঠোত। আমার জিয়ারে হেন থেকে লইয়্যা গেছে। দেড়টা বাজে মুয়ো (মুখ) ধরে সিএনজিতে করে লইয়্যা গেছে গা। সারাদিন রাইখ্যা নয়ডা বাজে আমার জিয়েরে এহানে আইন্যা আগুন লাগাইয়্যা পুড়াইছে। মুখ বাইন্দা পরে পেট্রল ঢালছে।’

আজিজার বোন মাফিয়া বলে, ‘হেরা কইছে আমরা দুই বোনেই চুরি করছি, হেয় খাড়ইলছে, আমি আনছি। এডার লাইগ্যা আমার আব্বারে কইছে। পরে তার (চাচার) শাশুড়ি আইস্যা কইতাছে এক ঘণ্টার ভিত্তে মোবাইল বার (বের) করে দিত্যাম। না হলে খবর লইব, আগুন লাগাইয়্যা দিব।’আরেক বোন মারুফা বলে, ‘যারা মোবাইল চুরির অপবাদে আমার বোনেরে মারছে তাদের বিচার চাই, হের বেশি কিছু চাই না। ফাঁসি চাই।’

আজিজার ভাই সুজন জানান, আজিজার শরীরে আগুন দেওয়ার পর তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে আগুন নেভায়। ততক্ষণে আজিজার শরীরের অনেকখানি পুড়ে ঝলসে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে আজিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ সকালে সেখানে আজিজার মৃত্যু হয়।

আজিজার বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, পোড়ানোর পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আজিজা তাঁর সঙ্গে কথা বলে। আজিজা বলে, ‘বাবা, খুব ব্যথা। অসহ্য যন্ত্রণা। আমি তো চুরি করি নাই। চাচি, চাচির ভাইসহ চারজন আমার মুখ ও হাত বাইন্ধ্যা হেঁচড়াইয়া নিয়া যায়। এরপর কেরোসিন ঢাইল্যা আগুন ধরাইয়া দেয়। বাবা আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি তো মোবাইল চুরি করি নাই।’

এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আবদুস সাত্তার।

খৈনকুট গ্রামের লোকজন জানান, একটি মেয়েকে যারা এভাবে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা শিবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান বলেন, নিহত আজিজার শরীরের দুই জায়গায় পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে। কিন্তু কে আগুন দিয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তিনজন লোক আগুনে পুড়তে দেখেছেন, কিন্তু তাঁরা সে সময় ঘটনাস্থলে আর কাউকে দেখেননি।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান বলেন, কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com