ঢাকা থেকে সানজিদা আহমদ।।
বাংলাদেশে চাইনিজ খেতে ভালবাসে না এমন নাগরিক বোধ হয় খুব কমই। এ চাইনিজ প্রীতির কারণে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই নয়, দেশের ছোট বড় প্রায় শহরের অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠেছে নানান নামে নানান সাজে বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তরাঁ। নিয়মিত এ খাবার খেতে অভ্যস্ত হলেও আসলে চাইনিজ খাবার ঠিক কেমন, তার স্বাদই বা কেমন, কী ভাবে খাওয়া হয়— এ সবের প্রায় কিছুই জানি না আমরা অনেকই। জেনে নিন চাইনিজ খাবার সম্পর্কে এমনই কিছু অজানা কথা।
চাইনিজ রেস্তরাঁয় খেতে গেলে আমরা স্যুপ দিয়ে খাওয়া শুরু করি। আমাদের অনেকই আবার দেখি চা্িনিজ রেস্টুেরেন্টের স্যুপটা খেতে ভীষণ মজা পান। প্রায়ই চায়নিজ খেতে ইচ্ছুক এমন কিছু তরুণ তরুণীকে প্রশ্ন করে জানা যায়, তারা নিরিবিলি পরিবেশ খুজতে চাইনিজ রেস্টুরেন্টকে বেছে নেন। তাছাড়া এদের মধ্যে অনেকই আছে, তারা অন্য খাবারের চেয়েও চাইনিজ রেস্তরার স্যুপটা খেতে ভীষণ পছন্দ করেন। তবে চাইনিজদের কাছেও কিন্তু স্যুপ অ্যাপিটাইজার নয়। স্যুপ তারা মেইন কোর্স হিসেবেই বেশি খেয়ে থাকে।
যদি ভেবে থাকেন চাইনিজ খাবারের মধ্যে নিরামিষ খাওয়ার বেশি সুযোগ নেই, তা হলে ভুল ভাবছেন। কারণ চাইনিজরা পশ্চিমাদের তুলনায় অনেক বেশি প্রকার সব্জি খেতে অভ্যস্ত। চীনে তো তিতা শশা, বিভিন্ন রকম শাক সব্জি’র ফলন প্রচুর।এসবই তারা রান্নায় ব্যবহার করে থাকে।
চাইনিজরা সব খাবারই কিন্তু বাইট সাইজ তৈরি করেন অর্থাৎ এক কামড়ে খাওয়া যায়, সেভাবে তৈরি করেন। সেজন্য তারা খেতে গেলে চপস্টিক ব্যবহার করে । খাবার এমন ভাবে তৈরি করে যাতে সহজেই চপস্টিক দিয়ে খাওয়া যায়। চীনারা ছুরি বা কাঁটা ব্যবহার করেন না। তাদের কাছে ওগুলো অস্ত্র। সেটির বদলে তারা বাঁশের টিকন কাঠি ব্যবহার করেন।
চীনারা চাল ও ময়দার পার্থক্য নিয়ে খুব সচেতন। এ বিষয়ে চায়নিজ বান্ধবীর সাথে আলাপ করে জানতে পারি, উত্তর চীনে শীত বেশি। তাই ওই অঞ্চলের মানুষরা ডাম্পলিং, নুডলস সবই তৈরি করেন ময়দা দিয়ে। অন্য দিকে দক্ষিণ চিনে শীত কম। সেই অঞ্চলের মানুষরা মূলতঃ চাল দিয়ে তৈরি করেন তাদের মিল।
আমরা রেস্তরাঁয় গিয়ে বোনলেস চাইনিজ খাবার অর্ডার করলেও প্রকৃতপক্ষে চীনারা কিছু ফেলেন না। মাংস হাঁড়সমেত খাওয়ারই রেওয়াজ রয়েছে চীনা নাগরিকদের। তােই এমন ভাবে রান্না করা হয়, যাতে হাঁড় নরম হয়ে যায় ও তা মজা করে চিবিয়ে খাওয়া যায়। সব্জি রান্নার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনেকই অনিক সেদ্ধ করে রান্না করে ফেলেন। চাইনিজ বা অন্য জাতির লোকেরা তা করে না। আদা সেদ্ধ সব্জি বা কাঁচা সব্জি খেতে তারা সাচ্ছন্দ বোধ করে। এমন কি আমি মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গপুর সফরে গিয়েও তা দেখেছি।
সারা বিশ্বের চাইনিজ রেস্তরাঁয় খাবারের পর ফরচুন কুকি দেওয়া হয়। শুধু চীনে দেওয়া হয় না। কারণ চাইনিজরা ফরচুন কুকি কী তা জানেন না। ১৯৯০ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ফরচুন কুকির চল শুরু হয়।
চাইনিজ খাবারের প্রচুর ফ্লেভার রয়েছে। চাইনিজ মেডিসিন অনুযায়ী যে কোনও খাবের মিষ্টি, টক, নোনতা, তেতো ও ঝাল এই পাঁচ স্বাদের সমতা থাকা প্রয়োজন। সিজুয়ান চাইনিজে যেমন ঝালের মাত্রা বেশি, তেমনই আবার ক্যান্টোনিজ খাবারে ঝাল, মশলার মাত্রা একেবারেই কম।
চীনে একই খাবার নানা ভাবে তৈরি করা হয়। চিকেন স্টিমড, ফ্রায়েড, স্টার ফ্রায়েড, পিকলড ইন ব্রাইন, ডিপ ফ্রায়েড, রোস্টেড, সঁতে নানা রকম ভাবে রান্না করা হয়।
[বিদেশি পত্রিকায়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।]