‘ঘরে ঘরে ব্লাউজ কে দিয়েছে’ সে নিয়ে অঞ্জনার আরও যত বিতিকিচ্ছার কথা।।
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক।। স্থানীয় সময়ঃ ২৪ ডিসেম্রব ২০১৮ রাত আটটা।
বেসরকারি একটি টিভি টকশোতে উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে ‘ব্লাউজের’ প্রসঙ্গ টেনে আলোচনা, সমালোচনা ও হাসি ঠাট্টার খোরাক হয়েছেন ঢাকাইয়া ছবির নাচুনেওয়ালী রমণী অঞ্জনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে রম্যরচনা, গান, কবিতা ও ছড়া হয়, ফেসবুকে অনবরত ট্রোল হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে। সমালোচনা হচ্ছে। তবুও ভাগ্য ভাল যে, এক উপায়ে অঞ্জনা পঞ্জনাও ছবির জগতের বাইরে এসে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের কলমের খোঁচায় বারংবার উচ্চারিত হচ্ছেন। সেও বা কম কিসের? নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে এখন তুমুল ব্যস্ত তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার জনৈক সাংবাদিকের সাথে তার কিছুটা আলাপ হয়। সে আলাপ আমার নজরে আসে, সে নিয়ে মূলত এ লেখা আমার। তখন অঞ্জনা কিশোরগঞ্জের পথে। সে সময় এ আলোচনা হয়।
যাই হোক আমার তো মনে হয়, তখনও তিনি হাসিনার দেওয়া ব্লাউজ পরেই নিশ্চয়ই নির্বাচনী প্রচারে যাচ্ছেন। ব্লাউজ’ প্রসঙ্গে টানতেই তিনি উক্ত সাংবাদিককে বললেন, ‘টকশোতে বলতে গিয়ে আমি বাক্যটা শেষ করতে পারি নি। এ জন্য কারও যদি বুঝতে অসুবিধা হয়, তার জন্য আমি দুঃখিত।’
সম্প্রতি টিভি টকশোতে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে অঞ্জনা সুলতানা বলেন, ‘কয়জন, কয়জন আছে, এই যে কাপড়, গার্মেন্টেসের কাপড়। যেভাবেই হোক। আজকাল গ্রামেগঞ্জে কিন্তু ব্লাউজ ছাড়া কেউ থাকে না। এটা কার উদ্যোগ? কার সফলতা? এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা। কেউ কিন্তু, ব্লাউজ ছাড়া কেউ থাকে না।’
তার এই বক্তব্যের ক্লিপিং ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিতর্ক জমেছে তা থেকেই।
অঞ্জনা বললেন, ‘আমি তো ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগের কথা বলতে চেয়েছি। গ্রামেগঞ্জে শুটিংয়ে যেতাম। দেখতাম নিম্নবিত্ত নারীরা একটা শাড়ি প্যাঁচিয়ে শুটিং দেখতে আসছেন। তাদের শরীরে কোনো ব্লাউজ ছিল না। জানতে চাইলে বলত, টাকার অভাবে ব্লাউজ কিনতে পারে না। অনেক কষ্ট-ক্লেশে একটা সময় তাদের দিন কেটেছে। এখন তো আর সেই অবস্থা নেই…।
বলতে বলতে গাড়ির চালককে পথ চেনাতে সময় চেয়ে নিলেন। তারপর আবারও বললেন, ‘টাকার অভাবে কেউ ব্লাউজ কিনতে পারে না-এখন এমন কাউকে আপনি খুঁজেই পাবেন না। এটা তো আসলে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার এই উদাহরণ। সেই কথাই বলতে চেয়েছি। অথচ মানুষ ভুল বুঝছে।’
সিনেমায় নাচে অঞ্জনার কাছাকাছি আসতে পারেন নি কেউ। তাকে নিয়ে গান হয়েছে। ‘নাচো নাচো গো অঞ্জনা, নাচো কোমর দোলাইয়া’। সেই গানেও নেচেছেন তিনি। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সিনেমায় অভিনয় করছেন। ৩৫০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে অঞ্জনা আছেন ভাল ভাবেই। নাচ গান ও ছবি নিয়ে কিছু একটা করতে পারলেও এবারই তিনি নৌকায় উঠতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন। রাজনীতির জ্ঞান ও সমসাময়িক পরিস্থিতির জ্ঞানের অপরিপক্কতাই যে তার এ রকম অদ্ভুত দালালি করার উক্তির জন্য দায়ী, তা আর কারোরই বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তার এ রকম উক্তর সাথে প্রধানমন্ত্রী এবং ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লগের অনেক নেতা নেত্রীর উক্তিসমূহের যথেষ্ঠ মিল আছে। এই যেমন, হর হামেশাই শুনতে পাবেনঃ ঘরে ঘরে চাকরি কে দিয়েছে? বছর বছর পদ্মা ব্রিজ কে তৈরি করেছে? দশ টাকা সের দরে চাউল কে করেছে? ইত্যাদি। তার সেই জ্ঞানও নেই যে, গ্রামের মানুষের সেই দরিদ্র অবস্থা কখন ছিল? সেও তো ছিল ‘৭৫ পূর্ব সময় পর্য ন্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এরপর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এবং সে অবদান তো জিয়ারই। এখন তো আবার সেই বিকাশমান অর্থনীতি থুবড়ে পড়েছে। সব লুটপাট হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভুয়া কথা যদি এমন সব সেক্টরের লোকজনও তাদের সেই জগতের বাইরে এসে বলতেই থাকে, তা এ জাতির জন্য লজ্জাজনকই।