খাশোগিকে টুকরো টুকরো করে সৌদির ‘কসাই’ খ্যাত সালাহ
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বলছে, ‘২০০৪ সালে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব গ্ল্যাসগোতে প্যাথলজি বিষয়ে পড়াশোনা করেন সালাহ মুহাম্মদ। ফরেনসিক এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত সৌদি এই চিকিৎসক কীভাবে ময়নাতদন্ত করতে হয় তা শিখেছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গত ২ অক্টোবর খাশোগি নিখোঁজের দিনে তাকে ইস্তান্বুলে বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। সাংবাদিক খাশোগির অ্যাপল ব্র্যান্ডের ঘড়িতে হত্যার অডিও রেকর্ড রয়েছে। এতে খাশোগি হত্যার ঘটনার সঙ্গে সালাহ মুহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
সাত মিনিটের ওই অডিও রেকর্ডে খাশোগিকে নৃশংসভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যার নেতৃত্বে সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবাইগির কণ্ঠ শোনা যায়।
একটি টেবিলের ওপর খাশোগিকে নেয়ার পর কিলিং স্কোয়াডের অন্য সদস্যদের কানে হেডফোন দেয়ার নির্দেশ দেন তুবাইগি। তুরস্কের একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত তুবাইগি খাশোগিকে হত্যার সময় অন্যদের বলেন, ‘আমি যখন এই কাজটি করি, তখন গান শুনি।’
অডিও রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর খাশোগিকে টেনে-হেঁচড়ে পাশের একটি কক্ষে নেয়া হয়; যেখানে তার দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়। টুকরো টুকরো করার আগে তার শরীরে অজ্ঞাত একটি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়, এতে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
ইস্তান্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ২ অক্টোবর সালাহ আল তুবাইগিকে দেখা যায়। আর এই বিষয়টি অত্যন্ত জোরালো করে তুলেছে যে, সাংবাদিক খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তুবাইগি তার অ্যাকাউন্টে সৌদি সায়েন্টিফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক ও সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যারে উদ্দেশ্যে ২ অক্টোবর রিয়াদ থেকে ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং স্কোয়াড তুরস্কে পৌঁছায় বলে দাবি করেছে আঙ্কারা। সন্দেহভাজন এই ১৫ ঘাতকের ছবিও প্রকাশ করেছে তুর্কি গণমাধ্যম। তবে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের কোনো মন্তব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বুধবার মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ জনের কিলিং স্কোয়াডের মধ্যে অন্তত ৯ জন সৌদি নিরাপত্তাবাহিনী, সেনাবাহিনী অথবা দেশটির অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সদস্য।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ফেস শনাক্তকারী সফটওয়্যার, সৌদি আরবের মোবাইল ফোন নম্বরের তথ্য-উপাত্ত ও ফাঁস হওয়া সৌদি বিভিন্ন নথি-পত্র, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমের সহায়তায় ঘাতকদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবাইগি। ছবি : সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া, ২ অক্টোবর ২০১৮।
সন্দেহভাজন ঘাতকদের একজন মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেব। ২০০৭ সালে লন্ডনে নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসে কূটনৈতিক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সম্প্রতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মাদ্রিদ থেকে প্যারিস সফরের সময় তার বডিগার্ড হিসেবে দেখা গেছে মুতরেবকে। যুবরাজের সঙ্গে বিমানে উঠতে এবং নামতে দেখা যায় মুতরেব। এ ঘটনার ছবি আছে তাদের কাছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাস্টন, বোস্টন ও জাতিসংঘের সদর দফতরে সফরের সময়ও যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দেখা যায় মুতরেবকে। মার্কিন এই দৈনিক বলছে, অন্য তিন সন্দেহভাজন হলেন আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ আল-হাসায়ি, থার গালিব আল-হার্বি ও মোহাম্মদ সাদ আলজাহরানি। এই তিনজনই সৌদি যুবরাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষবাহিনীর সদস্য।
এদিকে, বৃহস্পতিবার তুরস্কের দৈনিক ইয়েনি সাফাক এক প্রতিবেদনে বলছে, খাশোগি নিখোঁজের দিনে তুরস্কে উড়ে যাওয়া সৌদি আরবের ১৫ সদস্যের ‘কিলিং স্কোয়াড’র এক সদস্য রিয়াদে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সৌদি রয়্যাল এয়ার ফোর্সের লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার এ কর্মকর্তার দুর্ঘটনায় প্রাণহানি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
সূত্র : ডেইলি মেইল, মিডল ইস্ট আই।