খালেদাকে নিয়ে যত ভাবনা সরকারের নীতি নির্ধারকদের।

April 3, 2018 10:32 pm0 commentsViews: 21

নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।  জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, সরকারের মূল টার্গেট হল, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে যে করেই হোক বাদ দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এজন্য বিএনপিতে কিছু নেতাকে পোষণ করাও আছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে নেতাদের সম্পর্কে বলত, খালেদার কাছে পৃষ্ঠপোষকতা মিলে নাকি তাদের। অর্থাৎ এসব নেতারা বরাবরই বিএনপি করলেও মনে মগজে যেন তেন করে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনই মুখ্য। প্রয়োজনে ভারতীয় দালালির সনদে স্বাক্ষরেও তাদের আপত্তি নেই। অথচ ভারত ভাল করেই জানে, খালেদা যত মিটিং করুক না কেন, দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসলে খালেদা সেক্ষেত্রে অনঢ়। সেজন্য বারবারই একটি পঁচা জনসমর্থনহীন সরকারকেই শেষাবধি মেনে নিতে হচ্ছে। ভারত জানে, এত বড় ছাড় এ সরকার ছাড়া আর কোন সরকার দেবে না। এত কিছুর পরও ভারত কিন্তু চায়, যত বড় দালাল হোক না কেন, তার যেন ন্যূনতম গ্রহণ যোগ্যতা থাকে। বর্তমান সরকার সব ধরনের ক্রেডিবিলিটি হারিয়ে ফেলেছে বলেই মত প্রকাশ করলেন ভারতীয় এক সাংবাদিক।

সরকার এখন অনেকটা দিশেহারা। চাঁদপুরে জনসভায় জন সমাগমে এত অর্থ বিলিয়ে দিয়েও জনগণের স্বল্প উপস্থিতিতে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল বড় ধরনের চিন্তায় পড়েছে বলে সরকারি দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।

এতদসত্ত্বেও দিন যত যাচ্ছে সরকারের সেই টার্গেটই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। সরকার এবার আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে না। সরকারের টার্গেট আগামীতে বিএনপিকে বিরোধীদলের আসনে বসানো। যদিও ২০১৪ জানুয়ারির মত ভোটের বাক্স কুকুর বিড়াল দিয়ে সিল মেরে ভরেও পূরণ না হলেও সিল ছাড়া ব্যালট দিয়ে পূরণ করে হলেও ভোট গণণায় সরকারি দলকে জয়ী ঘোষণা করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবুও  এক্ষেত্রে তাদের সামনে বড় বাধা ছিল খালেদা জিয়া। কারণ, খালেদা জিয়া মাঠে থাকলে শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। আবার দেশি-বিদেশি চাপের কারণে বিএনপিকে বাদ দিয়েও আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন হবে। তাছাড়া লজ্জা শরম বলে কি পৃথিবীতে একদমই কিছু নেই! আর বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের চেষ্টা করলেও খালেদা জিয়া এবার বড় আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুুতি নিয়েছিলেন। সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও ভোটগ্রহণ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হবে না। এসব বিবেচনা করেই কথিত দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অ্যানালাইসিস বিডির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখাও সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। সামান্য ২ কোটি টাকার ভিত্তিহীন একটি মামলায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে কারাবন্দি করায় সর্বমহলেই সমালোচনা হচ্ছে। এর জামিন দেয়ার পরও এটাকে কৌশলে আটকে দেয়ায় সমালোচনা আরও বাড়ছে। জানা গেছে, এসব নিয়ে সরকার দেশে ও বিদেশে এখন চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে কয়েক দফা প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। তবে, খালেদা জিয়া এসব প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না। এসবই অ্যানালাইসিস বিডি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও এসেছে।  সরকার মনে করছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হলে হিতে বিপরীতই হতে পারে। বিএনপি এটাকে ইস্যু বানিয়ে প্রতিদিন আন্দোলনের হুমকি দেবে। খালেদা জিয়া ইস্যুতে প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করবে। সেজন্য সরকার বিএনপিকে কোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে দেয় না। সরকার চেয়েছিল, বিএনপি যদি একটু মারমুখো কর্মসূচি নেয়, তাহলে তাদের পক্ষে বিরোধীদলকে আরও নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানোর সুযোগ থাকত। যদিও অনেকই বলছে, যেখানে লিফলেট বিলি করতে গিয়ে সিনয়ির নেতাদের পর্যন্ত জঘন্যভাবে টেনে হিঁছড়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সক্রিয় নেতা ও কর্মীদের কোন কারণ ছারড়াই গ্রেফতার, রিমান্ড ও হত্যা করা হচ্ছে। সেখানে বিরোধী;দলের ওপর আর সহিংসতার মাত্রার শেষ সীমা বলে তো বাকীই থাকল না।

এতকিছুর পরও খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও তার প্রতি মানুষের সমর্থন ও সহমর্মিতা দিনদিন আরও বাড়ছে। এতে করে সরকারের ভাবমর্যাদা তো এমনিতেই নেই, তবুও কিছু যদি সামান্য ছিটেফোটা থেকে থাকে, তা আরও নষ্ট হবে। এছাড়া খালেদা জিয়া এমনিতেই অসুস্থ। কারাগারের প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে মানবিক কারণেই তাকে মুক্তি দিতে হবে।

কিন্তু খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে সরকারের টার্গেট বাস্তবায়ন হবে না। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে বিএনপি নির্বাচনেও আসবে না এবং সরকার চাইলেও বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করা। যেহেতু দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে রাখা কঠিন হবে, তাই চিকিৎসার কথা বলে তাকে দেশের বাইরে পাঠানোই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ কারণে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সরকার কৌশলে সামনে নিয়ে এসেছে। এনিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও সরকার বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

যদি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান, তাহলে আগামী নির্বাচনের আগে তাকে আর দেশে ফিরতে দেবে না সরকার। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মাইনাস করেই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় সরকার।

[ অ্যানালাইসিস বিডিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য নিয়ে লিখিত।]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com