আরব লীগের বৈঠক শেষে ইরান বিরোধী কড়া বিবৃতি।
সৌদি আরবের অনুরোধে গত ১৯ নভেম্বর (রোববার) মিশরের রাজধানী কায়রোয় আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। লেবানন ও ইরাকসহ কয়েকটি আরব দেশ কায়রোর ইরান বিরোধী বৈঠকে যোগ দেয়নি। আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে ইরান বিরোধী বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীতে হস্তক্ষেপের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে রিয়াদে যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল তা ইরানে তৈরি হয়েছে।
সৌদি প্রচেষ্টায় এমন সময় আরব লীগ এই দাবি করল যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল শনিবার পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ইরানের হাত রয়েছে বলে সৌদি আরব যে দাবি করছে তার সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।
ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মের বিপরীতে ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির সংমিশ্রণের অধীন রয়ে গেছে, যা প্রায়ই পশ্চিমা পর্যবেক্ষকদেরকে বিভ্রান্ত করে। কারণ তারা অন্যের আচরণ বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সহনশীলতার চাপকে সংরক্ষণ করতে চায়।
৩২ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দেশটির নতুন অভ্যুত্থানে বাহ্যত দুর্নীতির অভিযোগে এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকজন রাজপুত্রসহ দুই শতাধিকেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের মন্ত্রীদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির বিপুল তেল সম্পদ বিশ্ব জ্বালানির দামের গতিতে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন করতে মার্কিন প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দামের ওঠানামা পারস্য উপসাগরীয় তেল রপ্তানিকারকদের মূল্যের কাঠামোকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে এবং এজন্য আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত প্রিন্সদের এটি নতুন করে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। খুব শিগগিরই দেশটিতে আরো অনেক পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রিন্স সালমান ইতোমধ্যেই অনেকের ডানা ছেঁটে দিয়েছেন এবং অনেককে তলোয়ারের নিচে রেখেছেন। রাজকীয় পরিবারের আকঁড়ে ধরা ক্ষমতা সৌদি আরবের ভয়ঙ্কর এবং নিষ্ঠুর ধর্মীয় পুলিশ বাহিনী জনগণের ওপর তা প্রয়োগ করছে।
এই ক্ষমতা অতীতেও প্রয়োগ করা হয়েছে। সৌদি মুসলিম ও পারস্য উপসাগরীয় আরব স্যাটেলাইট রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহের কোনো ইঙ্গিত পেলেই তাদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সাদ হারিরির পদত্যাগ এবং জীবন বাঁচানোর জন্য প্রথমে সৌদি আরব এবং তারপর ফ্রান্স গমন ইসলামের মধ্যে এই নতুন বাস্তবতার সুস্পষ্ঠ প্রকাশ ঘটিয়েছে।
সাদ হারিরি ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম প্রধানমন্ত্রী। লেবাননের দীর্ঘস্থায়ী প্রথার অধীনে দেশটির প্রেসিডেন্ট একজন ম্যারোনাইট ক্যাথলিক খ্রিস্টান এবং সংসদের স্পিকার হচ্ছেন একজন শিয়া। তেহরানের মোল্লাদের সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা বৃদ্ধি এখন ফর্মুলাটিকে উল্টে দিয়েছে।
দুর্নীতি নির্মূল করতে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বিন সালমান ইসরাইলের সঙ্গে একটি গোপন জোট তৈরি করেছেন। ইসরাইল ইতোমধ্যে লেবাননকে বদলে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গাদি ইসেঙ্কট একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘লেবানন থেকে ইরান পর্যন্ত একটি শিয়া ক্রিসেন্ট তৈরির মাধ্যমে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চায় এবং তারপর তারা উপসাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত অগ্রসর হতে চাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি যাতে না ঘটে সেজন্য আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে এই অঞ্চলের একটি নতুন আন্তর্জাতিক জোট গঠনের সুযোগ রয়েছে এবং ইরানের হুমকি থামাতে একটি সমন্বিত কৌশলগত পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন হলে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করতে প্রস্তুত আছি।’
মাত্র কয়েক মাস আগেও একটি সৌদি-ইসরাইল জোট গঠন ছিল একটি অকল্পনীয় ঘটনা। কিন্তু প্রিন্স সালমানের মত স্বৈরাচারী ক্ষমতা যা পরিবারিক ব্যবসা, ইসলাম এবং এই অঞ্চলের রাজনীতিকে পৃথিবী কাঁপানো পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করছে।
[ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে]