কোন মুখে জামায়াতকে স্বাধীনতা বিরোধী বলছেন!
বয়স এবং রাজনীতির শেষ প্রান্তে এসে আবারও ধরা খেলেন নামসর্বস্ব যুক্তফ্রন্ট ও সাইনবোর্ডধারী রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় উপহারও গ্রহণ করেছেন। তখন কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও দলটির নেতারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল না। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকেই তিনি জামায়াত বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
সম্প্রতি দেশের ছোট বড় সব রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দু:শাসন, খুন-গুম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে তখনই বি. চৌধুরী কথিত স্বাধীনতা বিরোধী তসবিহ নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বিএনপিকে কঠিন শর্ত দিলেন, জাতীয় ঐক্যে আসতে হলে জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে। জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী।
বি. চৌধুরীর এবং তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরীর এসব বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই অতীতে জামায়াতে সঙ্গে চৌধুরী পরিবারের সম্পর্কেও বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ করে বোমা ফাটালেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। গত সপ্তাহে যমুনা টেলিভিশনের টকশো ২৪ঘণ্টা’র আলোচনায় বি. চৌধুরীর দলের মহাসচিব যে একজন স্বাধীনতা বিরোধী সেটা প্রকাশ করে দিলেন।
মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মেজর মান্নান পাকিস্তানি আর্মির কমান্ডো অফিসার ছিল। তাদের গুলিতেই শমসের মবিন চৌধুরী আহত হয়েছেন। আমি তাকে ইন্টারভিউ করেছি, সে বলেছে- তার নেতৃত্বে আনোয়ারায় একটি কমান্ডো বাহিনী নেমেছে, নেমেই এলোপাতাড়ি গুলি কইরা মানুষজন মারছে। পরে সে চলে যায় পাকিস্তানে, রিপ্যাট্রিয়ট হয়ে ফিরে এসেছে। বঙ্গবন্ধু তারে আর চাকরিতে পুনর্বাসন করেনাই। এই হলো মেজর মান্নান। যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধী বলবো না, স্বাধীনতাবিরোধী। সেই হচ্ছে দলের সেক্রেটারি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বাঙালি যে ৮০ জন সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল, তিনি তাদেরই একজন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তিনিও আত্মসমর্পণ করেন আর এরপর যুদ্ধবন্দী হিসেবে ভারতে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে পাকিস্তানে যান। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকেই অবসরে যান মান্নান।
এসব তথ্য প্রকাশের পরও বি. চৌধুরী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির নেতাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে কটাক্ষ করে যাচ্ছেন। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অকাতরে জীবন দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, এরপর বি. চৌধুরী বলছেন জামায়াত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
অথচ বি.চৌধুরী নিজেও এমন একজন স্বাধীনতা বিরোধীর আশ্রয়দাতা, যিনি সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। যার গুলিতে অনেক বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।
এখন অনেকেই বলছেন, বি. চৌধুরী নিজের ঘরে স্বাধীনতা বিরোধীকে আশ্রয় দিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। তার যদি ন্যূনতম লজ্জা থাকত, তাহলে জামায়াতকে আর স্বাধীনতা বিরোধী বলে গালি দিতে না। সূত্রঃ অ্যানালাইসিস বিডি