কিশোর বিদ্রোহ’! যা দেখার নয়- তাই দেখলাম!
গোলাম মাওলা রনি
প্রথম দৃশ্যটি ছিল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারে অভূতপূর্ব। ভদ্রলোক বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বিরাট এক বিলাসবহুল জীবন। আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে তিনি মোবাইল টিপছিলেন। হঠাৎ একদল স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরী তার গাড়ি থামাল। একজন কিশোরী গাড়ির ড্রাইভারের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইল। কিশোরীটি একাই তদারকি করছিল। কারণ, তার অন্য খুদে সহকর্মীরা খানিকটা দূরে গিয়ে অন্য গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি করছিল। ড্রাইভার কিশোরীটির একাকিত্বের সুযাগ নিলো এবং ভাবলেশহীনভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নানা কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করে দেয়। কিশোরীটি ড্রাইভারের কথাবার্তায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তার মতো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আইন মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করতে থাকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিব সাহেব গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মেয়েটিকে কাছে ডেকে নিলেন এবং এক হাতে মোবাইল টিপতে টিপতে মুচকি মুচকি হেসে কিসব যেন তাচ্ছিল্যভরে বলতে আরম্ভ করলেন। বিষয়টি পথচারী এক ভদ্রমহিলার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তিনি এগিয়ে এসে প্রথমেই সচিবের ভাবভঙ্গি ও মিটি মিটি হাসির প্রতিবাদ করে বললেন, একজন কিশোরীর সাথে আপনার অমন আচরণ অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে। ভদ্রমহিলা সচিবের পরিচয় জানতে চাইলেন এবং তিনি কেন কিশোরীর দাবি মোতাবেক গাড়ির কাগজপত্র না দিয়ে উল্টো মেয়েটির সাথে অশালীন আচরণ করছেন, এর ব্যাখ্যা চাইলেন। সচিব নিজের পরিচয় দিয়ে ভদ্রমহিলার মনে ভয় ধরানোর জন্য ধমকের সুরে বললেন- আপনি কে! আপনার পরিচয় কী? ভদ্রমহিলা বেশ দৃঢ়তার সাথে বললেন- আমি একজন মা। আমার সন্তানের বয়সী একটি মেয়ের সাথে আপনি অশালীন আচরণ করবেন, আর আমি বসে থাকব? তারপর তিনি আরো যা বললেন এবং করলেন সেই দৃশ্য ইউটিউবে দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলাম।
ভদ্রমহিলা সচিবকে রীতিমতো জেরার সুরে বললেন, আপনি অফিস টাইমে অফিস ফাঁকি দিয়ে এ দিকে কেন এসেছেন? সচিব মহোদয় এবার সত্যিই বেকায়দায় পড়ে গেলেন। তিনি কাঁচুমাচু করে বললেন, তার মেয়ে আইডিয়ালে পড়ে, তিনি মেয়েকে নিতে এসেছেন। ভদ্রমহিলা তার অভিব্যক্তির মাধ্যমে সচিবের মনে এই ভয় ঢুকিয়ে দিলেন যে, অফিস সময়ে সরকারি কাজ ফাঁকি দিয়ে এবং সরকারি গাড়ি, তেল, ড্রাইভার ব্যবহার করে তার মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্কুলপড়–য়া মেয়ের আনা-নেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকবেন- এটা খুবই নি¤œমানের মানসিকতা এবং চিন্তাচেতনার দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভদ্রমহিলা বেশ দৃঢ়তার সাথে বললেন, আপনার ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, গাড়িরও কাগজপত্র নেই, আপনি অফিস টাইমে বাইরে! নিশ্চয়ই আপনি ঘুষখোর এবং মেয়েকে ডোনেশন দিয়ে আইডিয়ালে ভর্তি করিয়েছেন। সচিব কাতরকণ্ঠে বললেন, নাহ! আমার মেয়ে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে। ভদ্রমহিলা নাছোড়বান্দার মতো পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার মেয়ে কোন ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। সচিব বললেন, সপ্তম শ্রেণীতে।
বিষয়টি যদি উল্লিখিত স্থানে থেমে যেত, তাহলে আমার মতো আরো অনেক কথিত শিক্ষিত, ভদ্র ও সমাজের হর্তাকর্তা দাবিকারীরা কিছুটা হলেও মুখরক্ষা করতে পারত। কিন্তু ভদ্রমহিলা সেটা করতে দিলেন না। তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, আপনি একটা মিথ্যুক! আইডিয়ালে সপ্তম শ্রেণীতে কোনো ভর্তি পরীক্ষা হয় না। আপনি ঘুষ দিয়ে অথবা প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে ভর্তি করিয়ে আইডিয়ালের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। আপনার মেয়েটিকে চিনে রাখা দরকার- ওর নাম কী! রোল নম্বর কত! মহিলার কথায় সচিব রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মুখের মানচিত্র এমন বানিয়ে ফেললেন, যা দেখে ইউটিউবের দর্শকেরা ব্যাপক বিনোদন পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
এবার প্রথম দৃশ্যের চেয়েও রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাময় এবং বিনোদন জগতের আগামীর ইতিহাসে মাইলফলক স্থাপনকারী, আরেকটি দৃশ্য আপনাদের নিকট উপস্থাপন করব। দৃশ্যটি দেখেছি ফেসবুকে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার আগে সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলা আবশ্যক, যা কিনা প্রথম ও দ্বিতীয় দৃশ্যের মতো শত সহস্র ভিডিও দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে। আমাদের দেশ এই সময়ে এসে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তা বাংলাদেশ তো নয়ই; বিশ্বের অন্য কোনো দেশে অতীতকালে ঘটেছে- এমন কোনো নজির ইতিহাসে লিখিত নেই। এমনকি শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি করা নানা অবাস্তব অথচ বিনোদনে ভরপুর কার্টুন বা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রেও এমন কোনো কাহিনী আজ অবধি কেউ সংযুক্ত করেনি। একটি রাষ্ট্রের বালক-বালিকা এবং কিশোর-কিশোরীরা প্রচলিত অন্যায়-অবিচার-অনিয়ম ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে গত কয়েক দিনে যে উদাহরণ সৃষ্টি করল তা শুধু দেশবাসীকে নয়, পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।
রাজধানীর ঢাকার একটি স্কুলের একজন ছাত্রী ও একজন ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দু’টি ত্রুটিপূর্ণ লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস নিয়ে অদক্ষ দু’জন ড্রাইভার ঢাকার সদাব্যস্ত এয়ারপোর্ট রোডে বেপরোয়াভাবে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটায়। একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথের ওপর উঠে গিয়ে দু’জন ছাত্রছাত্রীকে চাপা দিয়ে সাথে সাথেই মেরে ফেলে এবং অনেককে আহত করে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং আগামী দিনে এসব ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়ে ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে আসে। তারা প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে স্কুল ড্রেস পরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশি এবং গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে।
আমাদের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং কোনো পক্ষের নেতৃত্বদান অথবা উসকানি ছাড়া অতি অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশের গণপরিবহন চলাচল, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনায় এমন দক্ষতা দেখাতে আরম্ভ করে যা পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এক বিব্রতকর, অস্বস্তিকর এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলে। তারা আমলা-কামলা, ভিআইপি-সিআইপি, মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ-দারোগা থেকে শুরু করে আর্মি-বিজিবি প্রভৃতি সবার যানবাহন থামিয়ে ড্রাইভার ও গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশি আরম্ভ করে দেয়। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশের রাস্তাঘাটে প্রথম দৃশ্যের মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটতে থাকে। কিশোর-কিশোরীদের ভয়ে রাস্তা থেকে লাইসেন্সহীন গাড়ি উধাও হয়ে যায় এবং ভুয়া ড্রাইভারেরা আদিকালের মতো রাস্তায় গাড়ি চালানোর সাহস হারিয়ে ফেলে। সরকারি-বেসরকারি সব গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি ট্রফিক আইন মেনে রাস্তায় চলাচল শুরু করে এবং কিশোর-কিশোরীদের তল্লাশির মুখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শনে সচেতন হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের সরকার, রাজপথের রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক- সবাই মিলে দশ মুখে কিশোর-কিশোরীদের প্রশংসা আরম্ভ করেন। তাদের বলতে থাকেন, তোমরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছ। তোমাদের দেখানো পথে আমরা চলব এবং তোমরা যে দাবিনামা পেশ করেছ, তা-ও মেনে নেব। কিন্তু কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন মহলের প্রশংসায় অভিভূত না হয়ে আপন কর্মে অটল থাকলে সরকার প্রমাদ গুনতে আরম্ভ করে। বিশেষ করে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে ছাত্ররা যে জোর দাবি পেশ করেছে, তা কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না বলে স্বয়ং মন্ত্রী যেমন সাফ জানিয়ে দেন, তেমনি তার দল ও সরকার সমবেতভাবে মন্ত্রীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্য দিকে, বেশির ভাগ মিডিয়া, সামাজিক মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সুশীলসমাজ এবং সাধারণ নাগরিক এককণ্ঠে সমবেত আওয়াজ তুলে ওই মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি যত জোরালো ও কঠোর হতে থাকে ঠিক তার সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারও কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানে চলে যায়।
এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকেরা পুলিশের সহায়তা নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরকার এসব সমালোচনার সাথে বিরোধী দল তথা ‘জামায়াত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদলের সংযোগ ও চক্রান্ত’ দেখতে পায়। অন্য দিকে, তারা ছাত্রছাত্রীদের সাথে সংঘর্ষ আর হতাহতের ঘটনাকে গুজব বলে প্রচার করতে থাকে এবং এ জন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোকে বিশেষত ফেসবুককে দায়ী করে তা বন্ধ অথবা নিদেনপক্ষে অকার্যকর করার চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সারা দেশে ইন্টারনেটের গতি এমনভাবে কমিয়ে দেয় যাতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। অন্য দিকে, তারা দিনের বেশির ভাগ সময় মোবাইল কোম্পানির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে রাখে।
গুজব ছড়ানোর অভিযোগে সরকার দু’জন অভিনেত্রী, একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার করে এবং বিএনপির মির্জা ফখরুল, রিজভী আহমেদ প্রমুখের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সরকারি দলের কিছু ক্যাডার পুলিশের সহায়তায় দেশের নামকরা দু’টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। অন্য দিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং ব্যাপক লাঠি চার্জ করে পুরো পরিস্থিতিকে জটিল বানিয়ে ফেলে। সরকার তার অতীত অভিজ্ঞতা এবং কঠোর বলপ্রয়োগ-মামলা-হামলা গ্রেফতার করার দক্ষতা দ্বারা পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে উদ্ভূত সমস্যা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলেও সব পক্ষই নিদারুণ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
মেয়াদের একদম শেষ সময়ে এসে সরকার যেমন নিজেদের কোনোভাবেই দুর্বল দেখাতে চাচ্ছে না, ঠিক তেমনি একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোও সাধ্যমতো আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল তাদের অনুকূলে আনার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবে- এটাই স্বাভাবিক। কাজেই নিয়তির অপার মহিমায় একেবারে বজ্রপাতের মতো হাজির হওয়া ‘ঐতিহাসিক কিশোর বিদ্রোহ’ নিয়ে এই সময় যা ঘটছে তা নিয়ে যে যাই বলুক- আমি কিন্তু খুব একটা আশ্চর্য হইনি। তবে এই বিদ্রোহের ফলে আমাদের রাষ্ট্র, নাগরিক জীবনের ক্ষত, বিভিন্ন সংস্থা ও পক্ষের যে নৈতিক মনোবল ভেঙে পড়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের পর্দার অন্তরালের আসল রূপ বেরিয়ে পড়ছে তা নিয়ে কিন্তু কেউ উচ্চবাচ্য করছে না। রাজনীতিবিদ ও পুলিশসহ ক্ষমতাবান শ্রেণীর লোকজন নিজেদের অন্যায়, অনিয়ম, অপকর্ম ইত্যাদির জন্য যেভাবে হাতেনাতে ধরা খেয়ে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন তা আমরা এর আগে কেউ কল্পনাও করিনি। ফলে আগামী দিনে হয়তো কিশোর বিদ্রোহ থাকবে না, তবে তারা যে প্রথা চালু করে গেল তা ঠিকই অব্যাহত থাকবে।
এবার দ্বিতীয় দৃশ্যের কাহিনী বর্ণনা করে নিবন্ধের ইতি টানব। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনরত কিশোর-কিশোরীরা একজন পরিচিত মুখের সংসদ সদস্যের গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইল। ড্রাইভার যথারীতি তাচ্ছিল্যের সাথে কিশোর-কিশোরীদের উদ্দেশে তার মালিকের পরিচয় পেশ করল। আন্দোলনকারীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সদলবলে পুরো গাড়ি ঘেরাও করে সংসদ সদস্যকে গাড়ি থেকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। তারা সংসদ সদস্যকে অকৃত্রিম ভাষায়, রসালো বাক্যে এবং তির্যক মন্তব্যে জর্জরিত করে যা বলল তার মর্মার্থ হলো- ‘আমরা এমন সংসদ সদস্য চাই না যিনি নিজে আইন তৈরি করবে, অথচ আইন মানবেন না। যিনি ভুয়া ভোটের মাধ্যমে ভুয়া সংসদ সদস্য এবং ভুয়া গাড়ি ও ভুয়া ড্রাইভার নিয়ে রাজপথে দম্ভ করে বেড়াবেন।’ তারা সংসদ সদস্যকে গাড়ি রেখে হেঁটে স্থান ত্যাগ করতে বলে।
আন্দোলনকারীদের চাপে সংসদ সদস্য যখন তার গাড়ি রেখে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার রাজপথে হাঁটছিলেন, তখন শত শত আন্দোলনকারী তালি বাজিয়ে তার পিছু নিয়ে ‘ভুয়া! ভুয়া! ভুয়া!’ স্লোগান তুলে তাকে বহু দূর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল।