‘কিছু শিক্ষার্থী উগ্র ড্রেসআপে চলাফেরা করেন যা শালীন মেয়েদের বিব্রত করে’

January 12, 2018 12:47 am0 commentsViews: 13

আগস্ট ২৪, ২০১৭ঃ

news-image

হলের অভ্যন্তরে মেয়েদের সালোয়ারের উপর গেঞ্জি পরাকে নিষিদ্ধ করে তোপের মুখে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ।বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারে নি কথিত প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীদের অশালীন পোশাক নিষিদ্ধ করে হল কর্তৃপক্ষ এক নোটিশ দিয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘অশালীন পোশাক’ কখনই পরিধান করা যাবে না, আর পরিধান করলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে’ মর্মে একটি নোটিশ হলের দেয়ালে সাঁটানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ধারার শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপ “অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” নাজমুন তৃষা নামের এক শিক্ষার্থী নোটিশের প্রতিবাদ করে মুক্তভাবে পোশাক পরিধান করার অধিকার চেয়ে স্ট্যাটাস দেন। এতে করে গ্রুপে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। শিক্ষার্থীদের একাংশ এই নোটিশকে নারী স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বলে প্রতিবাদ জানান। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে হলের ভেতর মেয়েদের সংযতভাবে চলাফেরার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। শিক্ষার্থীদের এ আলোচনা সমালোচনার মাঝে বৃহস্পতিবার হল কর্তৃপক্ষ কোনো নোটিশ জারি করে নি বলে দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট। প্রভোস্ট ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান বলেন, ‘যে নোটিশটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেটি হল কর্তৃপক্ষের নোটিশ নয়। এটা কিভাবে হল জানতে তদন্ত শুরু করেছি আমরা।’

তবে দ্বিতীয় আরেকটি নোটিশ “সকল ছাত্রীকে জানানো যাচ্ছে যে, হলের কক্ষ, বারান্দা, বাথরুম ও ব্যক্তিগত এলাকা ব্যতিত অত্র অফিস এলাকায়/হল অফিসে কোন কাজের জন্য যথাযথ পোষাক পরিধান করতে হবে। হলের ভাবমূর্তি রক্ষা করবার দায়িত্ব সকলের।”

এ নোটিশটি হল কর্তৃপক্ষের বলে নিশ্চিত করেছেন হলের প্রভোস্ট। ফেসবুকে বুধবার প্রকাশিত নোটিশ এবং বৃহস্পতিবারের নোটিশ, দুটোতেই নিচে লেখা হয়েছে আদেশক্রমে হল কর্তৃপক্ষ।

দু’টি নোটিশেই ছিল না কোন সিল-স্বাক্ষর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট ড. সাবিতা বলেন, ‘এ সব সাধারণ নোটিশে আমার স্বাক্ষর বা সিল দেয়া হয় না। হল কর্তৃপক্ষই লেখা হয়। সব হলেই এটা করা হয়।’

হল কর্তৃপক্ষ কেন হঠাৎ ছাত্রীদের পোশাকে বিধিনিষেধ জারি করে নোটিশ টাঙিয়ে দিল, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত ২৩ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’

তবে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কী সেটা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “মেয়েদের হল, মেয়েদের কথাত সংবাদ মাধ্যমে বলা সেন্সিটিভ।”

তবে অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, হলের অভ্যন্তরে মেয়েরা একটু খোলামেলা থাকতেই পছন্দ করেন। তাই তারা এরকম পোশাক পরিধান করেন। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী উগ্র ড্রেসআপে চলাফেরা করেন, যা শুধু হলের ক্যান্টিন বয়, পুরুষ স্টাফই নয় বরং অনেক শালীন মেয়েদেরও বিব্রত করে, তবে এমন ধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।

হল কর্মচারিদের ভাষ্যমতে, ছাত্রীদের হলের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি পুরুষ। এ রকম পোশাক পরিধানের ফলে তাদের লজ্জায় পড়তে হয়।

হলের পূর্বের নোটিশের বিরুদ্ধে অবস্থান করা ছাত্রীরা জানিয়েছেন, আমাদের এখন হলের মাঝেও পরাধীন করা হচ্ছে। আমরা কি বুঝি না, শালীনতা কি? হল প্রশাসনের এটি একটি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা, যদিও এটা মেয়েদের হল।

এ পোশাকে যদি কোন পুরুষ কর্মচারি-কর্মকর্তার সমস্যা হয়, তাহলে তাদের ছাত্র হলে স্থানান্তর করা হউক। আর হলের সকল পদে নারীদের নিয়োগ দেয়া হউক। এতে নারীদের কর্মসংস্থানও হবে, আমাদের স্বাধীনতাও থাকবে।

এদিকে এ নোটিশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তর্ক বিতর্ক।

নোটিশ বাতিল করে নতুন করে দেয়া নোটিশেও কারো স্বাক্ষর নেই। তাই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘আগের নোটিশও হল কর্তৃপক্ষই দিয়েছে, এখনকারটাও হল কর্তৃপক্ষই দিয়েছে, চাপে পরে তারা দ্বিতীয় নোটিশ দেয়’।

তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মতে, “ক্যাম্পাসে ইস্যু তৈরি করার জন্য বাম ও প্রগতিশীল দাবিদার বিভিন্ন দলের সমর্থকরা এ নোটিশ বানিয়ে তা তাদের নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক গ্রুপ ‘অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ পোস্ট করেছেন। যাতে ক্যাম্পাসে অরাজকতা তৈরি করা যায়।

”পুনরায় দেয়া নোটিশ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আগেরটি কোন ষড়যন্ত্র ছিল না। হল কর্তৃপক্ষই নোটিশ দিয়েছে”।

কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের প্রাধ্যক্ষ ডঃ সাবিতা রিজওয়ানা রহমান ম্যাম হলের সাংগঠনিক দিক থেকে অনেক সচেতন এবং হলের প্রত্যেক মেয়ের সুবিধা অসুবিধা সব সময় সমাধান করে থাকেন…’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল হলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থে বা যারা নোটিশ বদলে দিয়েছেন এবং ফেসবুকে ভাইরাল করে হলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন… তাদের ব্যাপারে আমারা সোচ্চার থাকব… এবং হল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ তাদের অপকর্মের জন্য দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক…’

প্রসঙ্গত ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কাছে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর এ হলের যাত্রা শুরু হয়। আবাসিক ছাত্রীরা হলে ঢোকেন ২০১৩ সালে। বর্তমানে হলের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা দুই হাজার এবং অনাবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ৩ হাজার ৩০০।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলটি উদ্বোধন করেছিলেন। আর নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর সমতা প্রতিষ্ঠায় সারা জীবন কাজ করা কবি সুফিয়া কামালের নামে হলটির নামকরণ করা হয়েছে।

সূত্রঃ আওয়ার ইসলাম।

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com