কিছু মানুষ শারীরিক সুখের জন্য ভালবাসাকে বিসর্জন দেয়, আবার কেউ ভালবাসার জন্য তার দেহকে বিসর্জন দেয়।

April 27, 2018 11:40 pm0 commentsViews: 52

জীবনে প্রথম বার, জীবনে প্রথম বার, একেবারেই প্রথমবার বেশ্যাপাড়ায় পা দিচ্ছে ইফতি। শরীর ভার লাগছে। ২৮ বছর বয়সী একজন সুদর্শন পুরুষ তার যৌবন কালে কখনও এই নিষিদ্ধ পাড়ায় আসার প্রয়োজন ভাবে নি। কিন্তু আজ যেন তার বুক কাঁপছে। লাল নীল বাহারি বাতিতে আলোকিত একটা এলাকা। এখানে সেখানে রাত কাটানোর জন্য আগ্রহী নারীরা দাঁড়িয়ে আছে। একজন লোক তাকে এক ঘরে নিয়ে গেল। মনে হচ্ছিল কেউ গোসল করছে ভেতরে। পানি ঢালার শব্দ হচ্ছে। এখানের ঠিকানাটা ইফতিকে তার এক বন্ধু দিয়েছে। সে চায় নি। বন্ধুটিই তাকে দিয়েছে, তাও অনেক আগে। যখন তার প্রয়োজনও ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যে বাথরুম থেকে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হল এক ১৯ কি ২০ বছরের এক উর্বসী নারী। ঐ বাহারি আলোতে বোঝা যাচ্ছিল, গোসলের পর মেয়েটাকে কোন নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ে নয়, বরং সামাজের প্রচলিত ভদ্র সমাজের মেয়েদের চেয়েও সুন্দর দেখাচ্ছিল।

ইফতি একটু অবাক হল। মেয়েটাই প্রথম কথা বলল,  আপনি চাইলে হাত পা ধুয়ে নিতে পারেন। ইফতি বলল, ’না ঠিক আছে। আপনি বসুন।’

এই ঘরে যে আপনাকে দিয়ে গিয়েছে, সে বোধ হয় জানত না যে, আমি গোসল করছি, তাই আগেই নিয়ে এসেছে। একটু সাজগোজ করার সময়ও পাই নি। হুম। একটু সময় দিলে আমিও সেজে নিতাম।

’সাজাটা কি খুব জরুরী?’  –বলল ইফতি।

আপনার তাড়া থাকলে সাজাটা জরুরী না।

’তাহলে সাজতে হবে না।’ ইফতি পুনশ্চ বলল।

মাথার তোয়ালে টা খুলে শরীর থেকে শাড়ির আঁচল সড়িয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে গেলো।

ইফতি মুহূর্তে ঘাড় নিচু করে তাকিয়ে রইল মাটিতে। নিজের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সে এর আগে কখনই করে নি। মেয়েটা তার পাশে এসে বসল। ঘাড়ের ফাঁকে চুলে হাত দিয়ে মেয়েটি যখনই পাশে আসতে নিল ইফতি বলল – আপনার নাম কি? – প্রথম কেউ নাম জিজ্ঞেস করল স্যার।

সবাই তো অন্য কিছুই জিজ্ঞেস করে। – আমি করলাম। কোন সমস্যা নাম বললে? – না সমস্যা নাই। – আপনাকে আমার এত পাশাপাশি বসতে হবে না। আপনি চাইলে সরে গিয়ে বসতে পারেন। খুব উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়েটা বলল – স্যার কোন সমস্যা? আমি কি একটু গায়ে পারফিউম দিবো? আমার গায়ে কি গন্ধ? – না না এমন কিছু না।

আপনাকে প্রতিদিন যা করতে হয় আজ তা না করলেও চলবে আমার সাথে। – কেন স্যার? – কারণ আমার এসব কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। ফোনের রিং বেজে উঠলো। ইফতি পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করল।

– হুম বলো শুনছি। অনেক্ষণ চুপ থাকার পর সে আবার বললো। – আচ্ছা ঠিকাছে। আল্লাহ হাফেজ। ইফতির চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল সে এখনি মরে যাবে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তার ইচ্ছা করছে তার মৃত মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।

আজ মায়ের কথা খুব বেশি মনে হচ্ছে তার। মেয়েটা ইফতির এই অসহায় চেহারা দেখে বলল – -স্যার আপনি ঠিক আছেন? কে ফোন দিসিল? – আমার স্ত্রী। – ওহ স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো? – হুম বলেন।

– স্যার আমি বিবাহিত পুরুষের সাথে কোন ব্যবসা করি না। – মানে? – মানে স্যার আপনি চলে যান। বিবাহিত পুরুষদের ঘরে স্ত্রী আছে তার বিনোদনের জন্য। তাদের এখানে আসার প্রয়োজন পরে না।

– হাহাহাহাহাহা আপনি নিজেই তো খারাপ কাজ করছেন …। এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে? – জ্বী আমি খারাপ কাজ করছি। কিন্তু, বিবাহিত পুরুষ এর সাথে আমি ব্যবসা করি না বললাম তো।

– আপনি যা ভাবছেন তা ভুল ভাবছেন। আমি আপনাকে স্পর্শও করবো না। একটু কথা বলতে তো পারি ? নাকি? – কথা বলতে পারেন কিন্তু আপনার সাথে কথা বললে আমার আজকের ধান্দার কি হবে? আমার ঘরের চালচুলার কি হবে? – ঐটার ব্যবস্থা হয়েই যাবে।

– হবে না স্যার। আকাশ থেকে টাকা পড়ে না। – আপনি কিন্তু এখনো আপনার নাম বলেন নাই। – আমার নাম তনু। – এই পেশায় আছেন কতদিন? – ৩ বছর। – ভালো লাগে এই কাজ? – হাহাহাহাহা। – হাসছেন যে? – এমনেই স্যার।

– এখানেই থাকেন? – না স্যার এখানে থাকি না। মোহাম্মদপুর বস্তিতে থাকি। – একা থাকেন? – এত প্রশ্ন করতেছেন কেন স্যার? আপনি কি পুলিশ? – না পুলিশ না। কেন? – পুলিশরা অনেক প্রশ্ন করে।

আমি তো খারাপ কাজ করি তাই ভয় করে। – না আমি পুলিশ না। বাসায় কি একা থাকো? – না আমার স্বামীও থাকে। – হাহাহা কিছুক্ষণ আগে বললা বিবাহিত পুরুষের সাথে ব্যবসা করো না।

তুমি নিজেই তো বিবাহিতা। লজ্জা করে না ঘরে স্বামী রেখে এই কাজ করতে? ছি এইধরনের মহিলাদের আমি ঘৃনা করি। তনু কিছুই বলল না। ইফতি লাফ দিয়ে খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো ।

মানিব্যাগ থেকে ১০০০ টাকার একটা নোট বের করে তনুর দিকে ছুড়ে মারলো আর বের হয়ে গেলো। সে বের হওয়ার পর তনুও টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলো। চোখ টা জ্বল জ্বল করছিলো, বোধহয় চোখে পানি ছিলো।

ইফতি সেখান থেকে বের হয়ে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে শুরু করল। তার মেয়ে মানুষের প্রতি খুব বাজে ধারণা। সব মেয়ে মানুষই খারাপ। কেউই ভাল না। বিশ্রী এরা। এইত আজ সন্ধ্যায় যখন ইফতি বাসায় ফিরল, তার স্ত্রী তাকে মুখের উপর বলেই দিল “ আমি তোমার সাথে ভাল নেই।

শারিরীক দিক দিয়ে তুমি অক্ষম। তোমার সাথে আমার আর বাস করা সম্ভব না………” কথাগুলো কোথায় যেন বিঁধছিলো ইফতির। ওদের বিয়েটা হয়েছিল প্রেম করে। বেশ অনেকদিন যাবৎ ইফতির স্ত্রীর (সীমানা) সম্পর্ক চলছে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্রের সাথে।

ইফতি জানতে পেরে তাকে সেখান থেকে ফেরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু আজ যা শুনল এর পর ইফতির আত্মসম্মানে খুব লেগেছিল। তার পুরুষত্বকে নিয়ে পর্যন্ত আজ কথা বলে ফেলল। সেই রাগ নিয়েই সে আজ এখানে এসেছিল।

এখানে আসার পরও সীমানাই তাকে ফোন করে বলেছিল “ সে চলে যাচ্ছে। তাকে যেন আর ফিরানোর চেষ্টা না করা হয় এবং অতি দ্রুত সে ডিভোরস লেটার পাঠিয়ে দিবে”। ইফতির কাছে দুনিয়ার প্রতিটা মেয়ে খারাপ। তারা শুধু শারীরিক সুখের পাগল।

হঠাৎ তার মনে হলো তনুর কথা। নীতিমূলক কথা বলা একটা বেশ্যাকে মানায় না। সে বেশ্যা ………। কোন উপদেষ্টা না। তাই তাকে আরো দুইটা কথা শোনানোর জন্য ইফতি আবার ফিরে গেল তনুর ঘরের দিকে, সেখানে সে নাই। বেরিয়ে গিয়েছে।

যেই লোকটা তাকে এই ঘরে এনেছিল, ইফতি তার কাছ থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে তনুর বাসার ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হল। বেশ দূরে বাসা। ইফতি সিএনজি নিল। ৪০ মিনিটের মাথায় সে পৌঁছাল তনুর ঠিকানায়।

ঠিকানা অনুযায়ী বস্তির একটা ভাঙ্গাচুড়া ঘরের মধ্যে একটা অসুস্থ লোক শুয়ে আছে। তনু তখনো বাসায় পৌঁছায় নি। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে এতটুকুই দেখা সম্ভব হয়েছে। এর দুইটা কারণ হতে পারে।

১। সে সিএনজি তে এসেছে তাই আগে পৌঁছে গিয়েছে। তনু এখনও রাস্তায় জ্যাম এ পড়েছে।

২। তার ব্যবসার সময় এটা। হতে পারে সে ইফতির দেওয়া ১০০০ টাকায় সন্তুষ্ট নয় তাই সে তার ধান্দায় আবার লেগে গিয়েছে। ইফতি ২ নাম্বার কারণটাই ধরে নিল কারণ , সে এখন আর কাউকেই বিশ্বাস করে না। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ইফতি খেয়াল করলো কেউ আসছে।

সে একটু সরে দূরে গিয়ে দাড়ালো। তনু তার ঘরে ঢুকছে। তার হাতে বাজারের ব্যাগ। তার মানে বাসায় দেরী করে ফেরার কারণ সে বাজার করেছে। ঘরে ঢুকেই সে অসুস্থ লোকটার পাশে বসল। তার মাথায় হাত দিল। লোকটা চোখ খুলে বলল – আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসছ? – হুম।

তোমার জন্য আজকে একটা নতুন শার্ট কিনছি। – কেন টাকা খরচ কর? আমি শার্ট দিয়া কি করব? বাঁচবই কতদিন আমি বৌ? – একদম ফালতু কথা বলবা না। প্রতিদিন একই কথা বল। আমার ভাল লাগে না এসব শুনতে। তনু কান্না শুরু করল।

তার স্বামী তার চোখ মুছে দিচ্ছে। – বৌ গো কাইন্দো না। আমার জন্য তুমি যা করতেছ, তা আর কেউ করে কিনা আমার জানা নাই। আমার চিকিৎসার টাকার জন্য প্রতিদিন নিজেরে শেষ করতেছ।

আমি যদি উইঠা দাঁড়াইতে পারতাম, তাহলে আল্লাহর কসম আমি তোমার এই কষ্ট সহ্য করার চেয়ে নিজে বিষ খায়া মইরা যাওয়াটা শান্তির মনে করতাম। তুমি আমার জন্য প্রতিদিন আর কত কষ্ট করবা বৌ? আমারে এক কৌটা বিষ আইনা দেও।

আমি খায়া মইরা থাকি। – তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে এমনে বইলো না। তুমি সুস্থ হয়ে যাইবা। তনু খুব সুন্দরী এক মেয়ে। তার বিয়ে হয়েছে অনেক ছোট থাকতে। ৪ বছরের সংসার। স্বামী ছিলেন রিক্সা চালক। আড়াই বছর আগের কথা তনু ঘরে রান্না করছিলো। হঠাৎ দুইটা পুলিশ এসে বলল “ আপনার স্বামীর দুই পা বাসে কাটা পড়ছে” …………।

চুলায় রান্না রেখেই তনু রওনা হল হাসপাতালের দিকে। আহা কি কষ্টে ধরফর করছিল কাঞ্চন মিয়া ( তনুর স্বামী)। সে থেকে ঘরে শোয়া । খুব উন্নত চিকিৎসা করতে পারে নি বলে কাটা অংশ থেকে ক্যান্সার হয়ে গিয়েছে। ঘরে পড়া স্বামীর চিকিৎসা আর সংসার কে ছেড়ে তনু যায় নি।

অশিক্ষিত মানুষ চাইলেই তো আর ভালো কোথাও চাকরি করতে পারবে না। তাই সে প্রথমে গার্মেন্টসে কাজ করতো , এরপর মানুষের বাসায় ……। কিন্তু কোথাও ই তার কাজ করা জুটে নি। সবার চোখ ছিল তার ভরা যৌবনের শরীর আর সুশ্রী চেহারার দিকে।

যেহেতু খেটে খেতে গিয়েও তার শরীর বারবার তাকে বিপদে ফেলেছে তার চেয়ে তার কাছে শরীরের ব্যবসা করাই শ্রেয় মনে হয়েছে। স্বামীর সুস্থতা তার সবচেয়ে বড় চাওয়া। কত কষ্ট হয় তার প্রতিদিন এভাবে নতুন নতুন মানুষের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে তবুও সে হার মানছে না।

তনু কাঞ্চন মিয়াকে অনেক বেশি ভালবাসে। তনু কাঞ্চন মিয়ার বুকে মাথা রেখে কান্না করছে। ঘটে যাওয়া সবটুকু দৃশ্য ইফতি নিজ চোখে দেখে চোখের গোড়ায় ভেজা অনুভব করল। সে সেখান থেকে চলে গেল। একটি সিগারেট ধরিয়ে অজানা গন্তব্যে রওনা হল।

আজ সে বাসায় যাবে না। পরদিন একই সময় ইফতি গেল তনুর সাথে দেখা করতে। তনু তাকে দেখেই বলে উঠল – স্যার চলে যান। – কেন? – এমনেই স্যার। চলে যান আপনি। – আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে এসেছি। – করেন।

– আচ্ছা তনু শারীরিক সুখ কি অনেক বড় ব্যাপার? এতেই কি সব সুখ? – স্যার শারীরিক তৃপ্তিই যদি সবকিছু হইত তাহলে বেশ্যারা থাকতো সবচেয়ে সুখী। ভালবাসা ছাড়া স্পর্শ শুধু বাণিজ্য স্যার। এইটা শুধুই পাপ।

যেমন আমি করছি। – আপনি পাপ করছেন না তনু। আসি আমি। ভাল থাকবেন। ইফতি একটা সিগারেট ধরিয়ে বের হয়ে গেল। দুনিয়ায় কিছু মানুষ শারীরিক সুখের জন্য ভালবাসাকে বিসর্জন দেয়, আবার কেউ ভালবাসার জন্য তার দেহকে বিসর্জন দেয়।

মাস ছয় পরে ইফতি একদিন তনুর খোঁজ নিতে এসে শুনল, আরও দু’ মাস আগে থেকে সে এই কাজ করছে না । তনুর বাসার দিকে গিয়ে ইফতি জানতে পারল, কাঞ্চন মিয়া মারা গিয়েছে।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com