পাকিস্তানকে চার টুকরা করার খায়েশ এবার ভারতেরঃ

অপমানের প্রতিশোধ চাইলেন সুব্রহ্মণ্যন স্বামী। কুলভূষণ যাদবের মা এবং স্ত্রীকে যে ধরনের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে পাকিস্তানে, তার একমাত্র প্রতিশোধ পাকিস্তানকে ভেঙে চার টুকরো করে দেওয়া। এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য এই মুহূর্ত থেকেই প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত বলেও সুব্রহ্মণ্যন স্বামীর মত।

‘‘খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে…। পাকিস্তানকে ভেঙে চার টুকরো করে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার সময়টা এ বার এসে গিয়েছে।’’ সংবাদমাধ্যমে গত ২৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, এমনই মন্তব্য করেছেন সুব্রহ্মণ্যন স্বামী। উল্লেখ্য ভারত ও পাকিস্তান পারমানবিক অস্ত্র এর অধিকারী দক্ষিণ এশিয়ায় চির বৈরী দু’টি শক্তিশালী রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন মুক্ত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পর থেকেই এ দুটি দেশের বৈরিতা সব সময়ই ‘অব্যাহত ছিল। পাকিস্তানের সাথে ভারতের একাধিক যুদ্ধও সংগঠিত হয়েছিল। বিশেষ করে ধর্মীয় ইস্যুতে দাঙ্গা অভিবক্ত ভারত বর্ষে নিত্য নৈমত্যিক ব্যাপার ছিল । যে বিষয়টিকে সমাজ চিন্তক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীদের ভাবিয়ে তুলেছিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যিনি আজীবন সেকুলার চিন্তা ও ধ্যান ধারণায় বেড়ে উঠেছিলেন এবং কংগ্রেসের মত সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনিও শেষাবধি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে এগিয়ে আসতে বাধ্য হন।  শুধু তাই নয়, আলাদা হয়েও এ অঞ্চলে শান্তি মিলে নি। পরপর একাধিক বার দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। তারমধ্যে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ ও করুণ। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারত ৬ শ ট্রাংক নিয়ে এক রাতের শেষ প্রহরে পাকিস্তানে অতর্কিত হামলা চালায় এবং তাদের প্রত্যাশা ছিল সকালের নাশ্তা তাদের ফৌজরা পাকিস্তানের সীমান্ত শহর লাহোরে গিয়ে করবে। সেবার পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম, উভয় অঞ্চলে সীমান্তে মোতায়েনকৃত অকুতোভয় সৈনিকরা ভারতীয় সে অিতর্কিত হামলা রুখে দেয়। সকালের নাশতা খাওয়ার বরাত আর ভারতীয় সেনাদের লাহোর গিয়ে করা হয়ে ওঠে নি। সে বার বিশেষ করে বাঙালি সৈনিকরা পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অত্যন্ত সাহসিকতা পূর্ণ আক্রমণ চালিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় ভারতীয় হামলা রুখে দেয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিাঞ্চল আলাদা দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পূর্বাঞ্চলীয় অংশটির নতুন নাম হয় বাংলাদেশ। সেটি বাংলাদেশিদের জন্য একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ  হলেও ভারত সেটিকে  চির বৈরী দু’ রাষ্ট্র- পাকিস্তান ও ভারতের   দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিতেই বেশি তৎপর।

ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মী কুলভূষণ যাদবকে চরবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান। কুলভূষণ যে ভারতের গুপ্তচর নন, সে কথা নয়াদিল্লী বারবার জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সে কথা মানতে নারাজ। সে দেশের সামরিক আদালত কুলভূষণ যাদবকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং মৃত্যুদণ্ডের সাজাও ঘোষণা করেছে।

বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী।

পাকিস্তানে বন্দি কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল নয়াদিল্লী। ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধিকে দেখা করতে দেওয়া হোক বন্দি ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে,  এমন আবেদনও জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু সে আবেদন পাকিস্তান খারিজ করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কুলভূষণের  মা অবন্তীকে এবং স্ত্রী চেতনকুলকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয় পাকিস্তান। গত ২৫ ডিসেম্বর, সোমবার, সেই সাক্ষাৎ হয়। সোমবার পাকিস্তান থেকে ফিরেই বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কুলভূষণের মা ও স্ত্রী। পাকিস্তানে গিয়ে তাঁদের কেমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে, সে কথা সুষমাকে জানিয়েছিলেন তাঁরা। তার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার সরব হয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অসৌজন্য এবং চরম অভব্যতার অভিযোগ তুলে ঘটনার কড়া নিন্দা করা হয়।

মা ও স্ত্রীয়ের সঙ্গে কুলভূষণের ‘সাক্ষাৎ’ পর্ব ঠিক কেমন ছিল, বিদেশ মন্ত্রক সে তথ্য প্রকাশ্যে আনার পরেই সরব হন সুব্রহ্মণ্যন স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘কুলভূষণের মা এবং স্ত্রীয়ের সঙ্গে যে আচরণ পাকিস্তানে করা হয়েছে, তা অনেকটা মহাভারতে বর্ণিত দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মত।’’ এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই হবে— দাবি করেন বিজেপি সাংসদ। পাকিস্তানকে ‘ঈর্ষাপরায়ণ’ এবং ‘প্রতিশোধ পরায়ণ’ দেশ বলে আখ্যা দেন তিনি। পাকিস্তান সংক্রান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সে দেশকে একাধিক খণ্ডে ভেঙে দেওয়াই একমাত্র পথ বলে সুব্রহ্মণ্যন মন্তব্য করেন। অবিলম্বে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করা উচিত ভারতের। মঙ্গলবার এমন কথাও বিজেপি সাংসদ বলেছেন।

[বিদেশি গণ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অবলম্বনে।]

ড. ওমর ফারুক।। লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সামাজিক গবেষক এবং পরিব্রাজক। ইংরেজি সাাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট এডিটর, নিউইয়র্ক ভিত্তিক নিউজ পোর্টালঃ dailydhakapost.com এর এডিটর ইন চিফ এবং নিহাল পাবলিকেশনের স্বত্তাধিকারী। এ পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যাঃ ত্রিশটির বেশি।