কারণে রাজধানীতে ডিভোর্সের শীর্ষে নারীরা

January 11, 2018 6:12 pm0 commentsViews: 10
যে কারণে রাজধানীতে ডিভোর্সের শীর্ষে নারীরা

ডিভোর্সের শীর্ষে নারীরা- বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ছিলেন রোকেয়া ও আফজাল (ছদ্মনাম)। তাদের মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্কও। স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ভাল সরকারি চাকরি পেয়ে ঘর বাঁধবেন। বিসিএস-এ রোকেয়ার প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয়। কিন্তু আফজালের সেবার ভাগ্য খোলে নি। এরপরও রোকেয়ার উৎসাহে বিয়ে করেন তারা। দুঃসময়ে সঙ্গী ও নিজের সংসারের ভার একাই কাঁধে নেন রোকেয়া। এরপর আবার বিসিএস-এ বসেন আফজাল। পুলিশ ক্যাডারে চাকরিও পান। কিন্তু এবার পুড়ে রোকেয়ার ভাগ্য। তার সঙ্গে আর সংসার করতে চান না আফজাল। দুজনের সম্মতিতেই ইতি ঘটে একটি ভালবাসার সংসারের। শুধু রোকেয়া আর আফজাল নয়, ভালবাসার অনেক সংসার এখন মুহূর্তেই ভেঙে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীরা সামাজিকতা ও লোকলজ্জার চেয়ে নিজের আত্মসম্মানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর তাই সংসারে অশান্তি নিয়ে থাকার পরিবর্তে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তই বেশি নিচ্ছেন। জানা গেছে, ঢাকায় গত এক দশকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এক্ষেত্রে বিচ্ছেদের বেশি আবেদন করছেন শিক্ষিত ও সাবলম্বী নারীরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুই এলাকাতেই নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পুরুষের চেয়ে বেশি আবেদন করছেন।

জরিপের তথ্যে, বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করছেন ৭০ দশমিক ৮৫ ভাগ নারী আর পুরুষের হার মাত্র ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে যেখানে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল দশমিক ৬ জন। বর্তমানে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক এক জন। বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তারা হাজারে এক দশমিক ৭ জন বিচ্ছেদের আবেদন করেন। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫। রাজধানীর গত পাঁচ বছরের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত শালিসি পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ বছরে রাজধানীতে তালাকের মোট আবেদনের ৬৬ দশমিক ১৬ শতাংশ স্ত্রী এবং ৩৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ স্বামীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তালাকের নোটিস পাওয়া গেছে ১৯৮টি। এর মধ্যে নারীরা দিয়েছেন ১৪২টি নোটিস। উত্তর সিটি করপোরেশনও তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, নারীদের তালাক দেওয়ার হার পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। পেশাগত উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আগের চেয়ে বেশি সচেতন। নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে এখন আর আপস করছেন না। বরং অশান্তি এড়াতে বিচ্ছেদের আবেদন করছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগের কর্মকর্তা এস এম মাসুদুল হক বলেন, সামাজিক জটিলতার জন্য সমাজে বিচ্ছেদের ঘটনা এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সন্তানের মঙ্গল ও হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ রোধে বিচ্ছেদে যাওয়ার মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকায় একজন নারী এখন তার পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করতে পারছে। পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে অনেক নারী নিজের পেশা জীবনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর মনস্তাত্ত্ব্বিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ফলে নারী নিজেই এখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com