কতিপয় এনজিও রোহিঙ্গাদের খ্রিষ্টান বানানোর প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেঃ শানে রেসালাত সম্মেলনে বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, কতিপয়এনজিও মানবিক সাহায্যের নাম করে রোহিঙ্গাদের খ্রিষ্টান বানানোর সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছে। এসব এনজিওর কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ করারও তারা দাবী জানান। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত শানে রেসালত সম্মেলনে গত ২৯ জানুয়ারি, রোববার, সমাপনী দিনে প্রধান আলোচক হিসেবে মসজিদে আকসার ইমাম ড শাইখ ওমর ইয়াকুব আব্বাসী বলেন, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। রাত-দিনের বিবর্তনে রয়েছে বুদ্ধিমানদের অনেক নিদর্শন।
তিনি বলেন, আল্লাহর এমন মখলুকাতও আছে যারা হাজার হাজার বছর ধরে তাসবিহ আর সিজদা করার পরেও বলে আল্লাহ, আমরা তো কিছুই করতে পারলাম না। তিনি বলেন, আমরা নামাজ রোজা হজ্ব ইত্যাদি ইবাদত করার পর গোনাহর কাজও করে থাকি। আবার তাওবা-ইস্তেগফারও করে থাকি।
নবী-রাসূলরা মাসুম হওয়ার পরেও আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইবাদত করতেন এবং এস্তেগফার করতেন। নবীজী বলতেন, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলেই তো বেশি শুকর গুজার হব। আমাদেরও বেশি বেশি ইবাদত এস্তেগফার করা দরকার।
তিনি বলেন, মা-বাবার সেবা করে তাদের দোয়া নিতে হবে। আল্লাহর রহমত পেতে হবে। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের কুরআন সুন্নার জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নবীজী মক্কা ও মদিনাতে ২৩ বছর ইসলামের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আলেম ওলামাদের নিকট থেকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করার পরার্মশ দেন উপস্থিত সবাইকে।
মুসলমানদের দ্বীনের প্রচার করতে হব। সাহাবায়ে কেরামদের মত দ্বীনের তাবলীগ করতে হবে। রাসূলের সাহাবাগণ দ্বীনের দাওয়াত না পৌঁছালে বাংলাদেশও ইসলাম আসত না। তিনি বিশ্বব্যাপী দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো আহবান জানান। তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইহুদিমুক্ত করতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলামদের ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক। এই মুসজিদকে ইহুদিদের কবলমুক্ত করতে হবে।
আল্লামা আব্বাসী রাত ১০টার দিকে মঞ্চে ওঠেন। আরবী ভাষায় খুতবায় তিনি আলোচনা শুরু করেন। বাংলায় ভাষান্তর করেন একজন আলেম।
শানে রেসালত সম্মেলনের বিশেষ আলোচক ঢাকা জামেয়া কাসেমিয়া মিরপুরের মুহতামিম মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব বলেছেন, রাষ্ট্রের শান্তিও নিরাপত্তার জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ওলামায়ে কেরামদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ পর্যন্ত কোন অপরাধের সাথে আলেম জড়িত থাকার প্রমাণ নেই। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাজনীতির সাথে কোন সম্পর্ক না রেখে আলেমসমাজ দেশপ্রেমিক নাগরিকের পরিচয় দিচ্ছে। ইসলাম ও দেশের স্বার্থে আলেমসমাজ যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
সম্মেলনে পৃথক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা আবুল হাসান, সহ সভাপতি মাওলানা মোস্তাক আহমদ, মাওলানা হাফেজ ছালামত উল্লাহ, চকরিয়া ফাশিয়াখালী মাদরাসার পরিচালক আবদুল মান্নান।
বয়ান করেন ঢাকা রাসুলবাগ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুজিবুর রহমান, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগের মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা গাজি ইয়াকুব ওসমানী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক ইসলামাবাদী, রহমানিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা কলিম উল্লাহ, রামুর জোয়ারিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা এজাজুল করিম, ধলিছড়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা রমজান আলী, চিরিঙ্গা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সরওয়ার আলম কুতুবী, রামু জোয়ারিয়া নালা মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফেজ আবদুল হক।
জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াছিন হাবিবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঐতিহাসিক এ শানে রেসালত সম্মেলনে জেলার শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা শেখ সুলাইমান, মাওলানা মছরুর আহমদ, মাওলানা নাজির হোসাইন, মাওলানা আব্দুল গফুর, মাওলানা আনওয়ারুল আলম, হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের ছিলেন, মাওলানা নুরুল আলম আল মামুন, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আ. হ. ম নুরুল কবির হিলালী, মাওলানা আব্দুর রহীম ফারুকী, মাওলানা কেফায়ত উল্লাহ, মাওলানা আব্দুচ্ছালাম কুদছী, মাওলানা হাফেজ মুবিনুল হক, মাওলানা এহতেশামুল হক,মাওলানা আমিনুল হক, মাওলানা সায়েম হোসেন চৌধুরী, মাওলানা নুরুল হক চকোরী, মাওলানা খালেদ সাইফী, মাওলানা হাফেজ হেলাল উদ্দীন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাইফী, মাওলানা জামাল উদ্দিন তৌহিদ, মাওলানা জাহেদ, মাওলানা হাফিজ উদ্দীন প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মাওলানা সোহাইল, মাওলানা হুমায়ুন কবির।
দেশ ও জাতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলন শেষ হয়।