এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভারত
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ওমর ফারুক।
[কিন্তু সে বান্ধব নীতিটা যদি দেশের স্বার্থ পনর আনা জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু বন্ধু রাষ্ট্রের মন ভাল রাখার জন্য হয়, সেটি কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এসব বিষয়ে যখনই প্রশ্ন আসে, ভারত তখন বাংলাদেশকে ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার কথা বলে ব্লাকমেইল করতে প্রয়াসী হয়। অথচ ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল, সেটি আামদের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ হলেও ভারত বা পাকিস্তানের কাছে তা ছিল মূলতঃ এশিয়ার দুই বৈরী রাষ্ট্র – পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ। দু’দেশের সরকারি ও বিভিন্ন লেখকদের প্রকাশিত লেখাগুলো পাঠ করলে তা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়।]
ভারতের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বরাবরই খুব একটা ভাল নয়। দেশটির নেতাদের বক্তব্য বিবৃতি শুনলে অনেকই মনে করে বসবে, এ দেশটি আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ এসব পরাশক্তির মতই বোধ হয় উদীয়মান এক পরাশক্তিতে রুপান্তরিত হতে চলেছে। পরাশক্তিদের তালিকায় পৌঁছাতে আর বোধ হয় অল্প বাকী। আসলে বাস্তবতা কিন্তু তা নয়। দেশটিতে রয়েছে এখনও ব্যাপক খাদ্য সমস্যা, কন্যা ভ্রুণ হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচারের মত ব্যাপক ভাবে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ক্রমান্বয়েই বৃদ্ধি, ধর্ম, জাত, বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণি বৈষম্য, ভিন্ন মতাবলম্বী গণ মাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানি, হত্যা ও নির্যাতন, জনগণের বিশাল অংশের পরিবেশসম্মত শৌচাগারের অভাব, প্রভৃতি এর জ্বলন্ত উদাহরণ। শাসক ও জনগণের বিশাল এক অংশের রেসিস্ট মানসিকতার ফলে প্রতিবেশি দেশেগুলোর সাথে উষ্ণ সম্পর্কের ঘাটতিও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। এ সব বিষয় বিবেচনায় আনলে বর্তমান বিশ্বে কথিত যে মোড়ল রাষ্ট্রীয় ধ্যান-ধারণা ও উদার রাষ্ট্র ব্যবস্থার চিন্তা ও দর্শন ভারতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর সাথে কোন ভাবেই খাপ খায় না। বিশেষ করে মোদীর শাসনামলে ভারত নিজেদের গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী চিন্তা ও চেতনায় পুষ্ট একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালালেও খোদ বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের বৃহত্তর জনগণই শুধু নয়, সেখানকার শাসক শ্রেণিও ভারতের একতরফা স্বার্থ আদায়ের নীতিকে মেনে নিতে পারছে না কোন ভাবেই। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্ক তলানিতে অবস্থান করছে। একই রকম শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের সাথেও। বাংলাদেশের সাথে ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি অনেকটা ব্লাকমেইল করে টিকিয়ে রাখতে চাইছে বলে অনেক ভূ-রাজনীতিক বিশেষজ্ঞের ধারণা। ভারত বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় এবং এ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় ক্ষমতাশীন এবং এমন কি বিরোধীদলীয় নেতারা সব সময় সরব ও সরস বক্তব্য দিয়ে আসছে। অবশ্য এরপরও মাঝেমাঝে মুখ ফসকে কোন কোন ভারতীয় ক্ষমতাশীন ব্যক্তি ও নেতাদের কাছ থেকে তীব্র উষ্মাও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঠাওর করা যায়। আর সে সময় দেশপ্রেমিক সচেতন জনগণ ভারতের বন্ধুত্বের দাবীটি সম্পর্কে আরও বেশি অনুধাবন করতে সমর্থ হয়। ভারত এক তরফাভাবে সব সুবিধা বাংলদেশ থেকে ক্রমাগত ভাবে আদায় করে নিতে বদ্ধপরিকর হলেও বাংলাদেশকে সামান্যটুকুও, তাদের কণা পরিমান অসুবিধা হলেও, দিতে দ্বিধা বোধ করে। সেখানে শুরু হয় কূটনীতি। সে সমস্যা সুরাহা হতে পারছে না রাজ্য সরকারের কারণে, বা অমুকের কারণে, এভাবে বোলচাল শুরু করা হয়। বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের দ্বিপাক্ষিক সমস্যার অন্ত নেই। বাংলাদেশ যত ধরনের সরকারই এসেছে, আমার অবজার্ভেশন হল, সব সরকারই চেয়েছে একটি বৃহৎ প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সাথে যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অটুট থাকে। সেই মুজিব শাসন থেকে শুরু করে জিয়া, এরশাদ বেগম জিয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার আমলের সে কাল এবং একাল, সব কালেই ভারতকে উষ্কিয়ে কেউ কোন তৎপরতা দেখায় নি। আমি মনে করি, সরকারের এ ভারত বান্ধব নীতি নিয়ে সমালোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু সে বান্ধব নীতিটা যদি দেশের স্বার্থ পনর আনা জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু বন্ধু রাষ্ট্রের মন ভাল রাখার জন্য হয়, সেটি কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। এসব বিষয়ে যখনই প্রশ্ন আসে, ভারত তখন বাংলাদেশকে ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতার কথা বলে ব্লাকমেইল করতে প্রয়াসী হয়। অথচ ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল, সেটি আামদের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ হলেও ভারত বা পাকিস্তানের কাছে তা ছিল মূলতঃ এশিয়ার দুই বৈরী রাষ্ট্র – পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ। দু’দেশের সরকারি ও বিভিন্ন লেখকদের প্রকাশিত লেখাগুলো পাঠ করলে তা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়।
তার ওপর আবার সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতেও মুখ পুড়েছে ভারতের। দুর্নীতিদমন বিষয়ক বিশ্ব নাগরিক সংস্থা টিএই-এর দাবি, এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হল ভারত।
ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী দুর্নীতি, ঘুষ দেয়ায় প্রথম ভারত। কাদের পিছনে ফেলে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে ভারত? ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এমনকী মিয়ানমারও দুর্নীতির নিরিখে ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। ফোর্বসের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে শতকরা ৬৯% কাজের ক্ষেত্রেই ঘুষ দিতে হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিচয়পত্র, পুলিশ-সহ প্রতি ছ’টির মধ্যে পাঁচটি পরিষেবা পেতে হলে ভারতে ঘুষ দিতে হয় বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ভারতের চেয়ে সামান্য ভাল অবস্থায় রয়েছে ভিয়েতনাম। সে দেশে কোন কার্যসিদ্ধির ক্ষেত্রে শতকরা ৬৫% ঘুষ দিতে হয়।
আশার খবর একটাই। ফোর্বসের প্রতিবেদন বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন মোদি, বলছে সমীক্ষা। ভারতের প্রায় ৫৩% মানুষ বিশ্বাস করেন, মোদিই পারবেন ভারতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। ৬৩% দেশবাসী মনে করেন, সাধারণ মানুষের জীবনে যদি ফারাক আনতে পারেন, তাহলে মোদিই পারবেন। যদিও ফোর্বসের তালিকা বলছে, ভারতের দশা পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ। ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ১৬টিরও বেশি দেশের ২০ হাজার মানুষের উপর চালানো হয় এই সমীক্ষা।