এলিয়েনের দেখা কেন পাচ্ছে না মানুষ?
মহাকাশের লক্ষ কোটি নক্ষত্রের মধ্যে পৃথিবীর মতো অসংখ্য বাসযোগ্য গ্রহ রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা এখন বিশ্বাস করেন। যদিও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে সেই বিশ্বাস এখনও ধারণার মধ্যেই রয়ে গেছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র দূরবীক্ষণ যন্ত্র কেপলার এখনও প্রতিবেশী নক্ষত্রমণ্ডলে পৃথিবী সদৃশ গ্রহের সন্ধান করে যাচ্ছে।
কেপলার এরই মধ্যে পৃথিবীর ন্যায় অনেক গ্রহের সন্ধানও দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো আলোর বিচ্ছুরণ দেখে ধারণা করা ফলাফল। যোগাযোগ প্রযুক্তি এখনও উন্নত না হওয়ায় সেই সব নক্ষত্রে পারি দেয়া অসম্ভব।
প্রশ্ন থেকে যায়, পৃথিবীর মানুষের সাধ্য না থাকলেও দূর মহাকাশে বসবাসকারী বুদ্ধিমান প্রাণীদের কি যোগাযোগের সেই যোগ্যতা নেই? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, মহাকাশের বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান এই সভ্যতার মানুষের দ্বারা সম্ভব হবে না। মার্কিন বিজ্ঞানী ইথান সিগালের মতে, সেক্ষেত্রে ভর, সময় ও গতিসুত্র আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা।
একাধারে বিজ্ঞানী, লেখক, গবেষক ও এলিয়েন বিশ্বাসী ইথান সিগাল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস’কে জানান, মহাকাশের একাধিক গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকলেও তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম নয়। আসলে মহাকাশের প্রকৃতিই এমন!
সিগাল বলেন, ভবিষ্যতের কোনো সভ্যতা যদি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেয় তবে কিছুই তারা পাবে না। তেমনই আমরাও যদি অদূর ভবিষ্যতে তাদের কোনো হদিশ পাই, পৌঁছানোর পর দেখবো সেখানে কোনো সভ্যতা টিকে নেই।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মহাকাশে সময় বিষয়টি অনেক জটিল। পৃথিবীর সূর্যের পাশে পদক্ষিণের সময় কিন্তু মহাকাশে এক নয়।
সিগালের দাবি, মহাকাশ যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে ঠিক তেমনই সময়ের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পরছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন রেডিও সংকেতের মাধ্যমে দূর মহাকাশের কোনো গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে আমাদের এখন যোগাযোগ হলো। মহাকাশে পাড়ি দেয়ার মতো আধুনিক যানও ধরুন আমাদের রয়েছে। কিন্তু তারপরও লক্ষ লক্ষ মাইল আলোকবর্ষ দূরের সেই গ্রহে গিয়ে দেখবেন সেই সভ্যতা আর নেই। কালের বিবর্তনে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। যার কারণ হচ্ছে, মহাকাশের প্রসার আর সময়ের তারতম্য।’
বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিকে ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জি আখ্যা দিয়ে নিজেদের অক্ষমতাকে ঢাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিগাল বলছেন, ডার্ক ম্যাটারকে মেনেই যদি এলিয়েনের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখেন তবে প্রমাণ এখনই পাবেন।
একই সঙ্গে সিগাল বলেন, আমাদের এই সৌরজগতের বয়স সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর। আমাদের খুব কাছের যে নক্ষত্র রয়েছে, সেটির দুরত্ব কিন্তু সাড়ে ৪ আলোক বর্ষ। পৃথিবীর স্বাভাবিক সময়ের হিসেবে তা বহু গুণ বেশি।
ফলে সেই সভ্যতার কোনো সংকেত যদি আজ আমরা পাই, তবে বুঝতে হবে তা পাঠানো হয়েছিল সাড়ে ৪ আলোকবর্ষ আগে। পৃথিবীর স্বাভাবিক সময়ের হিসেবে তা কোটি কোটি বছর।
সিগাল আরও বলেন, ধরুন সেই সংকেতের উত্তর যদি আমরা পাঠাই তবে সেটিও পৌঁছাতে একই সময় লেগে যাবে। তাহলে পূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দু’টি সভ্যতাকেই বিলিয়ন বিলিয়ন বছর টিকে থাকতে হবে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে যদি মহাকাশের প্রশস্ততাকে হিসেবে ধরা হয়, তবে দূর মহাকাশের বুদ্ধিমান জাতির সন্ধান পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ফলে দূর মহাকাশে হাজার হাজার বাসযোগ্য গ্রহ আর উন্নত সভ্যতা ছড়িয়ে থাকলেও আমাদের একাই বসবাস করতে হবে। কেননা, সময় আর স্থানের ক্ষেত্রে শুধু মানুষই নয়.. মহাকাশের প্রতিটি বুদ্ধিমান জাতিই অসহায়।
অবশ্য ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীর দেখার উৎসাহে পানি ঢাললেও আশার বাণীও শুনিয়েছেন সিগাল। বলেছেন, সরাসরি সাক্ষাত না হলেও সুদূর অতীতে কিংবা ভবিষ্যতে ভিনগ্রহীদের পৃথিবীতে আসার চিহ্ন মিলতে পারে। অন্য বাসযোগ্য গ্রহের ক্ষেত্রেও তাই।
এক্ষেত্রে সিগালের যুক্তি হচ্ছে, ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণী কিংবা তাদের পাঠানো নভোযান ভ্রমণ করে যাওয়ার বিলিয়ন বছর পর গড়িয়ে ওঠা কোনো সভ্যতা হয়তো সেই আলামত খুঁজে পাবে। কিন্তু তারা ভিনগ্রহীদের বিষয়ে কোনো ধারণা রাখবে কিনা সেটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন!