এখন সর্বশেষ খোদ দেশের মানচিত্রটাই ধর্ষিত হতে চলেছে।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক। স্থানীয় সময়ঃ ২ এপ্রিল ২০১৮ রাত ১১টা।।
দেশে এখন শুধু ধর্ষণ সংক্রান্ত খবরই। কখনও শুনবেন নারী ধর্ষিতা, কখনও শুনবেন ব্যাংকের মূলধন ধর্ষিত। কখনও শুনবেন বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রাস্তায় ধর্ষিত। ইত্যাদি ইত্যাদি। সিলেট থেকে আমার এক ভক্ত পাঠক সেদিন ইনবক্সে লিখল, স্যার, আপনি শুধু নারীবিষয়ক এত পোস্ট দেন কেন? আপনার স্ট্যাটাসের সাথে সেটি কেমন যেন বেমানান। আমি, তাকে বললাম, সারা দেশই ধর্ষিত। সেগুলোর হয়ত রকমফের আলাদা। দশে চলছে, ধর্ষণেরই মহোৎসব। আমি একজন সংস্কারক কর্মী হিসেবে কী লিখব বল! বিবেকের তাড়নায় আমাকে ইসলামি সাহিত্য ও অন্যান্য পড়াশোনার ক্ষতি করেও এসব নিয়ে লিখতে হয়। এবার ধর্ষণ সংক্রান্ত একটু অল্প কথায় পরিসংখ্যান দিব। চমকে উঠবেন না। দিন দিন ধর্ষণসহ নারীর উপর সহিংসতা বেড়েই চলছে। এবং এটা থামবে না। বরং উৎসাহিত করা হয়। কেননা চরিত্রবান নাগরিক যে সব সংগঠন তৈরি করে, তাদের উপরই বরং যত গোস্বা। কেননা চরিত্রবান নাগরিক সৃষ্টি হলে তারা স্বৈরাচার মেনে নেব না। দুঃশাসন মেনে নেবে না। গোমূত্র পান করবে না। এজন্য নিরীহ ইমানদার ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করে, এমন সব নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে নিরিবিলি ঘুমিয়ে কিংবা উঠে বসে দিন কাটালেও কোন কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিনোদন প্রিয় নারী ও পুরুষদের বিনা বাধায় আপকর্ম অব্যাহত ভাবে চালিযে যেতে বরংয় স্পন্সর করা হয়। অপরদিকে যেসব নারী কোরআনের ক্লাশ করে। হিজাব মেনে চলে, তাদের ইয়াবা রপ্তানি ও আমদানি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। জেলে পুরে দেওয়া হয়। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে কয়েুকজন পর্দানশীন নারীকে কোরআন ক্লাশ থেকে গ্রেফতার করে পরবর্তীতে ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য ব্যবসায় জড়িত বলে মামলা ও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন দেশপ্রেমিক নাগরিকদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার, নির্যাতন, খুন ও গুম হচ্ছে। কে রাখে এত হিসাব। সংবাদ মাধ্যমগুলো কোন খবর প্রকাশের রেওয়াজ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদর্শ ও ইমানদার মা বোনদের গ্রেফতার এজন্য করা হয়, কেননা সেসব মা বোনরা পরিবারে চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করবে। আর সেসব চরিত্রবান সন্তানরা তো নিশ্চয়ই ধর্ষক ও প্রতারকদের দল করবে না। সেজন্য এ সব নারীদর ওপর সম্প্রতি বেশি নির্যাতন ও অত্যাচারের খড়গ চালােনো হচ্ছে। অনেকটা মিশরীয রাজা ফেরাউনের মত। থাক আমি এত কথা আর না বাড়িয়ে এবার একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দেই। তারপর আপনারা যদি ঘুমিয়ে থাকতে চান, নাকে একটু তেল বেশি করে দিয়ে ঘুমুতে থাকুন।
শিশু ধর্ষণঃ
২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল= ১৩০১টি
শুধুমাএ ২০১৬ সালেঃ ০১. শিশু ধর্ষণ= ৫২১টি
০২. গণধর্ষণ= ১৬৯টি
০৩. ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা= ৯৩
০৪. আত্মহত্যা = ৩২
০৫. ধর্ষণ চেষ্টা থেকে পলায়ন= ১৬৫
(সূত্রঃ বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন)
২০১৭ সালঃ
ধর্ষণ: ৮৯৩টি
হত্যা= ৪৭টি
আত্নহত্যা= ১১টি
(সূত্রঃ আইন ও শালিশ কেন্দ্র)
২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল:
ধর্ষণ কেস গ্রহণ= ১৭২৮৯টি
নারী=১৩৮৬১
শিশু=৩৫২৮
এবার আসি একটু বিচার এর দিকে
রায়প্রাপ্ত= ৩৪৩০
অভিযুক্ত= ৬৭৩
দন্ডপ্রাপ্ত = ৫৭৬
যাবজ্জীবন =৮০
মৃত্যু দন্ড= ১৭
( জাতীয় সংসদ অধিবেশন, তারিখঃ ১৯.২.১৮)
*গত ২.৫ বছরে ৮ হাজার ধর্ষণ,মামলা মাত্র ৩.৫% এবং বিচার মাত্র ১%!!!
*গড়ে প্রতি মাসে ২৮ জন শিশু হত্যা ও ৪৯ জন শিশু ধর্ষিত হচ্ছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত অধিকাংশই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে বা শাস্তিহ্রাস করছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাশীন দলের কোন না অঙ্গ সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট ।
এখন আপনি রাস্তায় নামে আন্দোলনে শরীক হবেন, প্রতিবাদ করবেন নিজ অবস্থান থেকে, নাকি আপনার প্রিয়জন, আত্নীয় কেউ হায়নার ছোবল খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন??? সেটা আপনার বিবেচনার বিষয়। তবে অবস্থা ভয়াবহ।
এরা যেভাবে বসেছে, তারা ব্যাংকসহ সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ধর্ষণ করে শেষ করবে। শিক্ষািব্যবস্থা ধর্ষণ করে শেষ করবে, সংস্কৃতি তারা ইতোমধ্যে ধর্ষণ সম্পন্ন করে সেরেছে। আদালতও ধর্ষণ সম্পন্ন করে সুরাহা করে দিয়েছে। নির্বাহী বিভাগ তো সেই কত আগেই ধর্ষণ শেষ করে প্রেগনেন্ট করে সেরেছে। এখন সর্বশেষ মানচিত্রটাই ধর্ষিত হতে চলেছে।