ইয়াবা একটি অভিশাপের নাম।
By Sonamoni Chakraborty from Kolkata, India.
একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানব জাতি এক ভয়ানক সংকটে নিপতিত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক, বলতে গেলে মানব জীবনের সকল সেক্টরেই একটা দ্বন্ধ প্রকট রুপ লাভ করেছে। এসব কিছুকে মানুষ মারার কল বললেও অত্যুক্তি হবে না।
প্রত্যেকটা দেশের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে যে শক্তিটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটি হচ্ছে যুবসমাজ।
বাংলাদেশেরও আছে সেই সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল যুব শক্তির মত বিশাল মানব সম্পদ। কিন্তু আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল্যবান এ মানব সম্পদেক যথাযথ ভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। এ জনশক্তিকে নৈতিক ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়ে যথাযতভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি।
অতীতে একটা দেশ অন্য দেশের স্বার্থের বিরূদ্ধে গেলে যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করে প্রতিশোধ গ্রহণ করার রেওয়াজ থাকলেও হালে প্রতিশোধ গ্রহণের সেই পদ্ধতি বদলে গেছে।
মূলত আধুনিক বিশ্বে কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অর্থনৈতিক কারণে সরাসরি যুদ্ধ ব্যতীত এক দেশ অন্য দেশের বিরূদ্ধে প্রতিশোধ নেয় একটু ভিন্ন ভাবে। তা হতে পারে সাংস্কৃতিক,সন্ত্রাসী, মরণঘাতক মাদক আগ্রাসন ছড়িয়ে দিয়ে।
..আমরা জাতি হিসাবে খুবই আরামপ্রিয়! তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই খুব কম! নিজ দেশের এগিয়ে যাওয়া ও অবক্ষয় নিরোধ সম্পর্কে চিন্তা, গবেষণা করিও কম।
প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশও আজ জর্জরিত অনেক সমস্যায়। আর এর অন্যতম কয়েকটা সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা।
ইয়বা তৈরির মুল রাসায়নিক উপদান এম্পিটামিন থেকে মেথএম্পিটামিন প্রথম তৈরি হয় ১৯১৯ সালে জাপানে।
যদিও এই দুই রাসায়নিক উপদান মেথএম্পিটামিন ও এম্পিটামিন নাকের ছিদ্র খোলা রাখার ঔষধ (Nasal Decongestant) এবং ব্রংকিয়াল ইনহেলার হিসাবে ব্যাবহার করা হত।..
…দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান তাদের সৈনিকদের শ্রান্তির, যুদ্ধক্ষেত্রে জাগিয়ে রাখা সহ মানষিক ভাবে উৎফুল্ল রাখা এবং শত্রুপক্ষের উপর হামলা করা আত্ত্বঘাতি সৈন্যদল তৈরি করার জন্য সৈন্যদের ইয়াবা সেবন করতে দেওয়া হত।
১৯৫০ সালের দিকে ইয়াবা সাধারণ জনগণের নাগালে আসার পর ইয়াবার ক্ষতির রহস্য ক্রমান্বয়ে উন্মেচিত হয়। এরপর জনগণকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য পশ্চিমা বিশ্বে মরণ নেশা ইয়বাকে নিষিদ্ধ করে।
পরবর্তীতে আনুমানিক ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারের (বার্মা) থাইল্যান্ড সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মাধ্যমে থাইল্যান্ডে ও ছড়িয়ে পড়ে ইয়াবা।
বাংলাদেশে ইয়াবার প্রথম আবির্ভাব হয় ১৯৯৭ সালে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার(বার্মা) সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে সারা দেশ সয়লাব হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ও ২০১৫ সাল পুর্ববর্তী সময়ে রাজধানী শহর ঢাকায় বেশ কিছু ইয়াবা কারখানার সন্ধান পায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, যেগুলোর মালিক ছিল প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সন্তানেরা।
প্রথমদিকে ইয়াবার মূল্য চড়াও হলেও এখন সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেকের ক্রয়সীমার নাগালে। সহজে প্রতীয়মান হয় সহজলভ্য হওয়ার কারণে এই মরণ নেশা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় এবং শহর থেকে গ্রাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।
আওয়ামীলীগ এর সাংসদ বদি এবং তার পরিবার ইয়াবা ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রক। আর রোহিঙ্গারা ইয়াবার কেরিয়ার হিসাবে বিশেষ ভাবে কাজ করে। আরও জানা যায়, ঢাকার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রক মায়া চৌধুরীর পুত্র রনি চৌধুরী।
এখন সময় এসেছে, এ বিষয়ে গণ সচেতনতা তৈরি ও জাতিকে এ মরণঘাতী ড্রাগ থেকে রক্ষা করতে হবেই।
লেখক পরিচিতিঃ সোনামণি চক্রবর্তী একজন প্রথিতযশা ব্লগার ও মুক্তবুদ্ধি চর্চায় নিবেদিত মানবাধিকার কর্মী।