ইরানে বিক্ষোভকারীদের বড় অস্ত্র সোশ্যাল মিডিয়া

January 1, 2018 1:23 pm0 commentsViews: 25
ইরানছবির কপিরাইটঃ GETTY IMAGES
[ইরানে বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।]
ইরানের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরো বিক্ষোভ ও মৃত্যুর খবর আসছে। সরকারি সংবাদ মাধ্যমেই এখন বলা হচ্ছে, কয়েকদিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছে।

এসব মৃত্যু কোথায় বা কিভাবে ঘটেছে তা রাষ্ট্রীয় টিভিতে বলা হয় নি।

তবে প্রেসিডেন্ট রুহানি জনগণকে শান্তি রক্ষার আহ্বান জানানো সত্বেও বিভিন্ন সূত্র থেকে সহিংসতার খবর আসছে। রোববার রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় ইজেহ শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। পশ্চিম ইরানের দোরুদে বিক্ষোভকারীরা একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি ছিনিয়ে করে নেয় এবং তারপর তা অন্য দুটি গাড়িতে আঘাত করে। এতে দু’জন নিহত হয়।

দোরুদ শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিনের সহিংসতায় দু’জন গুলিতে মারা যায়, এবং তারা সহিংসতার জন্য উগ্রপন্থী সুন্নি মুসলিম ‘তকফিরি’ গোষ্ঠীকে দায়ী করেন।

এ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ টেলিগ্রাম বা ইন্সটাগ্রামের মত সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

গত রোববার ইরানের খোরামাবাদ, যানজান ও আহভাজ শহরে মিছিল থেকে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির পদত্যাগ ও তাঁর ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়েছে।

আবহার শহরে বিক্ষোভকারীরা দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির ছবি-ওলা সুবিশাল ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

আটত্রিশ বছর আগে ইরানে যে ইসলামিক বিপ্লব হয়েছিল, তার পর সে দেশে গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ-র বিরুদ্ধে এ ধরনের বিক্ষোভ প্রায় নজিরবিহীন বলা চলে।

বিবিসি পার্সিয়ান বিভাগের বিশ্লেষক কাসরা নাজি বলছেন, ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত তরুণ ও পুরুষ এ বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে মোল্লাতন্ত্র উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন।

তাদের এ বিক্ষোভ ইরানের ছোট ছোট শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং ক্রমশ আরও ব্যাপক আকার নিতে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করছেন।

এদিকে ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চলতে থাকলে, শক্ত হাতে তা দমন করা হবে এমন হুশিয়ারি দিয়েছে দেশটির বিপ্লবী বাহিনী।

দেশটিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনমান নিম্নমুখী হয়েছে, এমন অভিযোগে তৃতীয় দিনের মত ইরানের বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ চলছে।

বিক্ষোভ করতে গিয়ে তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে
ছবির কপিরাইটঃ ইপিএ
[বিক্ষোভ করতে গিয়ে তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।]

বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার অভিযোগ করেছেন, বিক্ষোভকারীরা দ্রব্যমূল্যের বাইরে রাজনৈতিক ইস্যুতে স্লোগান দিচ্ছে এবং তারা সরকারী সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।

ইরানের এক সংবাদ সংস্থাকে ব্রিগেডিয়ার ইসমাইল কাওসারি বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা যদি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদেই রাস্তায় নামত, তাহলে তারা সরকার বিরোধী স্লোগান দিত না।

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়েছেন, আইন ভঙ্গকারী এবং সরকারি সম্পদ ধংসকারীদের পরে জবাবদিহি করতে হবে, এবং আজকের বিক্ষোভের জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে।

২০০৯ সালে সংস্কারের দাবির ব্যাপক বিক্ষোভের পর এ প্রথম দেশটিতে এরকম বড় প্রতিবাদ হচ্ছে।

শুক্রবার দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে অন্য শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হচ্ছে।

ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনস গার্ড বা বিপ্লবী বাহিনীর সঙ্গে আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ, এবং এই বাহিনী দেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা চালু রাখতে বদ্ধ পরিকর।

মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও তা এখন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।

গতকালও ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নির্দেশে কোন বিক্ষোভে অংশ না নেয়ার জন্য জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, এই বিক্ষোভ অবৈধ।

কিন্তু শনিবার সামাজিক মাধ্যমের অজ্ঞাতপরিচয় পোস্ট থেকে ইরান জুড়ে আরো বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভে অংশ নেয়।

শনিবার রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম দাবি করে, সরকারের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করছে।

গতকাল সরকারের সমর্থকরা শনিবার মাঠে নেমেছে এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলে দাবি করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ সরকারের পক্ষে মিছিলে যোগ দিয়েছে।

২০০৯ সালের ব্যাপক বিক্ষোভও ইরানের সরকার কঠোরভাবে দমন করেছিল।

ইরানে বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রতিবাদী কর্মসূচিগুলো ছড়িয়ে দেবার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে।

গত বৃহস্পতিবার উত্তর পূর্বের মাশা্দ শহর থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ গত চার-পাঁচদিনে অনেকগুলো শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হবার খবর দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি। জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন তা রাজনৈতিক চেহারা নিয়েছে এবং এগুলো থেকে ধর্মীয় নেতা-নিয়ন্ত্রিত সরকারকে উৎখাতের ডাকও দেয়া হচ্ছে।

বিক্ষোভকারীরা এ প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে মূলত টেলিগ্রাম এবং ইনস্টাগ্রাম এ দুটি সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

বিশেষ করে টেলিগ্রাম ইরানে খুবই জনপ্রিয়। দেশটির জনসংখ্যা ৮ কোটি এবং তার মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি টেলিগ্রামে সক্রিয়।

 

ইরানছবির কপিরাইটঃ GETTY IMAGES
[ইরানে খুবই জনপ্রিয় টেলিগ্রাম]

ইরানের কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় এ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে, কিন্তু তার পরও গত ক’দিন ধরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে এক শহর থেকে আরেকটিতে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরিব বলেছে, ‘সাময়িক’ এই বিধিনিষেধ শান্তি বজায় রাখার জন্য দরকার।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি নতুন এক ভাষণে বলেছেন, সরকারবিরোধী এসব বিক্ষোভ ‘কিছুই নয়।’ তিনি বলেন, সমালোচনা এবং প্রতিবাদ তাদের জন্য কোন হুমকি নয় বরং সুযোগ – এবং আইনভঙ্গকারীদের মোকাবিলা করা হবে।

ইরানে মিডিয়ার ওপর সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বিক্ষোভ ও সহিংসতার থবরগুলো মূলত বের হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়েই।

ইরানছবির কপিরাইটঃ GETTY IMAGES
[ইরানের বিক্ষোভকারীরা প্রধানত টেলিগ্রাম ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছে]

এদিকে  বিক্ষোভকারীরা প্রধানত তরুণ এবং তারা বিশেষ করে টেলিগ্রাম ও ইন্সটাগ্রামের মত প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।

টেলিগ্রামের প্রধান নির্বাহী পাভেল দুরোভ টুইট করেছেন যে তার কোম্পানি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিতে অস্বীকার করার পরই ইরানি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়।

ইরানছবির কপিরাইটঃ টুইটার
[টুইটারে পাভেল দুরোভের বার্তা]

মি. দুরোভ টেলিগ্রামে এক পোস্ট দিয়ে জানান, বিদেশভিত্তিক একটি বড় সরকারবিরোধী চ্যানেল আমাদনিউজকে পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানানোর পর টেলিগ্রাম নিজেই শনিবার ব্লক করে দেয়।

তিনি বলেন তাদের লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের জন্য একটি নতুন শান্তিপূর্ণ চ্যানেল খোলা হয়েছে- তবে এতে ঢোকার ওপর এখন বিধিনিষেধ আছে।

ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রী মোহাম্ম-জাভেদ আজারি জাহরোমি এর আগে অভিযোগ করেন যে ‘আমাদনিউজের মতো’ চ্যানেলগুলো সশস্ত্র অভ্যুত্থান, সামাজিক অস্থিরতা ও পেট্রোল বোমা ব্যবহারের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।

সূত্রঃ বিবিসি

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com