ইজতিহাদ সম্পর্কে শায়েখ উসাইমিন (রহঃ)।।

April 20, 2018 8:24 pm0 commentsViews: 30

ইজতিহাদ ” সম্পর্কে শায়েখ উসাইমিন (রহঃ) এর মূল্যবান ফতওয়াঃ

প্রবাদ আছেঃ ’হাতি-ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়া বলে কত জল।’

আরব বিশ্বের অন্যতম আলেম সালাফিদের মান্যবর শায়েখ উসাইমিন (রহঃ) তাঁর  লেখা ‘ফতওয়া আরকানুল ইসলাম’ এর মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মধ্যে ইজতেহাদি বিষয় নিয়ে নিম্নরূপ মতামত রাখেনঃ
“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মাঝে কোন ইজতেহাদি বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তাদের মধ্যে এই মতবিরোধ পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ এবং শত্রুতার ভয়ঙ্কর রুপ সৃষ্টি করে না, বরং তারা বিশ্বাস করে যে, তারা পরস্পরের ভাই। যদিও তাদের মাঝে এই মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি তাদের একজন এমন ইমামের পিছনেও নামাজ আদায় করে থাকে, তার দৃষ্টিতে সেই ইমাম অযু বিহীন। আর ইমাম বিশ্বাস করে যে, সে অযু অবস্থায় রয়েছে। উদাহরণস্বরপ বলা যায় যে,আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোকেরা উটের গোশত খেয়ে ওজু করে নি, এমন ইমামের পিছনেও নামাজ আদায় করে থাকে। ইমাম মনে করে যে, উটের গোশত খেলে অজু ভঙ্গ হয় না। আর মুক্তাদি মনে করে যে, অজু ভেঙ্গে যায়। তা সত্বেও তিনি মনে করেন, উক্ত ইমামের পিছনে নামায আদায় করা জায়েজ আছে। এমনটি তারা এ জন্যই করেন যে, ইজতেহাদের কারণে যে মতভেদ সৃষ্টি হয়, তা আসলে প্রকৃত পক্ষে মতভেদ নয়। কেননা প্রত্যেকেই আপন আপন দলীলের অনুসরণ করে থাকে। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের কোন দ্বীনি ভাই দলীলের অনুসরণ করতে গিয়ে যদি কোন আমলে তাদের বিরোধিতা করেন, প্রকৃত পক্ষে তারা বিরোধিতা করেন নি; বরং তাদের অনুরূপই করেছেন। কারণ তারাও দলীলের অনুসরণ করার প্রতি আহবান জানান। যেখানেই তা পাওয়া যাক না কেন।

অধিকাংশ আলেমের কাছে এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, রসূল (সঃ) এর যুগে ছাহাবীগণের মধ্যে এ রকম অনেক বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। তিনি কাউকে ধমক দেন নি বা কারও উপর কঠোরতা আরোপ করেন নি। আল্লাহর রসূল(সঃ) যখন খন্দকের যুদ্ধ হতে ফেরত আসলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) এসে অঙ্গীকার ভঙ্গকারী বনু কুরায়যায় অভিযান পরিচালনার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। রসূল(সঃ) ছাহাবীদেরকে বললেন, যে তোমাদের কেউ যেন বনু কুরায়যায় না গিয়ে আসরের সলাত আদায় না করে। (বুখারী- কিতাবুল খাওফ অধ্যায়)।

সাহাবীগণ এ কথা শুনে মদিনা হতে বের হয়ে বনু কুরায়যার দিকে রওয়ানা দিলেন।পথিমধ্যে আসরের সলাতের সময় হয়ে গেল। তাদের কেউ সলাত না  আদায় করেই বনু কুরায়যায় পৌঁছে গেলেন। এদিকে সলাতের সময় শেষ হয়ে গেল। তারা বললেনঃ রসূল(সঃ) বলেছেন, আসরের সলাত অবশ্যই বনু কুরায়যায় গিয়ে আদায় করতে হবে। তাদের কেউ উক্ত সলাত ঠিক সময় আদায় করে নিল। তাদের কথা হল, রসূল (সঃ) আমাদেরকে তাড়াতাড়ি বের হতে বলেছেন। তার কথার অর্থ এটা নয় যে, আমরা সময় মত সলাত আদায় করে না পিছিয়ে নিব। এরাই সঠিক ছিল।

বড়ই মেহেরবানির কথা হল, আল্লাহর রসূল (সঃ) দু’দলের কাউকেই ধমক দেন নি বা কটাক্ষ করেন নি। সাহাবীগণও একজন অন্যজনের সাথে শত্রুতা পোষণ করেন নি বা রসূল(সঃ) এর বক্তব্য বুঝার ক্ষেত্রে ভিন্নমত হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় নি।
এই হাদিসটি বুঝতে গিয়ে যে মতভেদের সূচনা হয়েছিল, তার কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা বা দলাদলি সৃষ্টি হয় নি।আজকে কত সামান্য বিষয় নিয়ে এক দল আরেক দলে দলাদলি হচ্ছে।  এ জন্য আমি মনে করি, সুন্নি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিৎ। তাদের মাঝে যেন কোন দলাদলি সৃষ্টি না হয়। শরিয়তি কোন বিষয় নিয়ে পরষ্পরে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করবে, একে অপরকে শত্রু মনে করবে এবং ইজিতেহাদী মাসয়ালায় মতভেদ হওয়ার কারণে একজন অপরকে ঘৃণা করবে। এটা ঠিক নয়। দলীলের ভিত্তিতে ইজতেহাদি কোন মাসয়ালায় মতভেদ হওয়া সত্ত্বেও,আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুবই প্রয়োজন।  কারণ ইসলাম ও মুসলমানদের প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য শত্রুরা চায় যে, মুসলমানরা পরস্পরে বিভক্ত হোক।”
এই হল উসাইমিন (রহঃ) এর মতামত, যা তিনি সূরা আন আ’ম এর ১৫৯ নম্বর আয়াতের পরে এই মতামত উল্লেখ করেছেন।

তার এই বক্তব্য থেকে বুঝা গেল যে, ইজতেহাদি বিষয়ে মতবিরোধ আসলেই কোন মতভেদ নয় এবং এই মতভেদ কোন দলাদলিও নয়। আর এই ইজিতেহাদি বিষয় নিয়েই মাযহাবের সৃষ্টি। এক ইমাম সাহেব ইজিতেহাদ করে যে মাসয়ালা দিয়েছেন, অন্য ইমাম ভিন্ন মাসয়ালা দিয়েছেন। কেউ এক ইমামের মাসয়ালার উপর আমল করছেন এবং অন্যটাকেও সঠিক মনে করছেন। এজন্য বলা হয়, চার ইমামই সঠিক। সবাই সবাইকে হক মনে করে। এ নিয়ে মাযহাবের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। হানাফি মাযহাবের অনুসারীগণ হাম্বেলি মাযহাদের ইমামের পিছনে সলাত আদায় করছেন, তদ্রূপ তারাও করছেন এবং হক মনে করেন। এভাবেই এক মাযহাবের অনুসারীগণ অন্য মাযহাবের ইমানের পিছনে নিঃসঙ্কোচে  সলাত আদায় করে থাকেন। কাজেই উসাইমিন (রহঃ) এর মতে এটা কোন দলাদলি নয় বা ইসলামে বিভক্তিও নয়। সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারি। কাজেই সালাফিদের মতে, মাযহাব ইসলামে কোন দলাদলি নয় যেহেতু একে অন্যকে হক মনে করে এবং শত্রুতা পোষণ করে না।

এবার দেখি আমাদের দেশের আহলে হাদিস দাবীদারদের যারা নিজেরের সালাফিদের অনুসারী দাবী করে তাদের মনমানসিকতাঃ
তাদের মতামত হল, মাযহাব ইসলামকে চার ভাগে বিভক্ত করেছে। অথচ তারা নিজেদেরকে ১৬৪ দলের ও বেশি দলে বিভক্ত। ইদানিং আরও কয়েকটি সৃষ্টি হয়েছে। এদের কথা হল, মাসয়ালা যে কোন একটি সঠিক অন্যটি ভুল। যে কোন একটি সুন্নত, বিপরীতটা ভুল। এ জন্য তারা বিপরীত পক্ষের দলিলকে ঢালাওভাবে জাল-জয়িফ বলে বিস্তর অভিযোগ করে সময় কাটায় ও আত্মতৃপ্তি পায়। ফলে দেখা যায়, অনেক সহিহ হাদিসকে এরা জয়িফ বলে দেয়। যেমনটি পাবেন মুরাদ বিন আমজাদের লেখা, প্রচলিত ১০০ ভুল কিতাবে এবং মুজাফফর বিন মুহসিনের জাল হাদিসের কবলে রসূল (সঃ) এর নামাজ বইয়ে।যেখানে উনি নিজেই অনেক জাল হাদিস এনেছেন, যা তার রেফারেন্সে নেই। এমনকি এঁরা ছাহাবীদের আমল ও ইজমাকেও অস্বীকার করেন এবং এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে যুক্তি দিয়ে জাল জয়িফ প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে। যার জন্য হাদিস অনুযায়ী এরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হতে বহিস্কৃত একটি দল। এরা নিজেদেরকে সালাফিদের অনুসারী দাবী করে, যা তাদের মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে আকাশ পাতাল তফাৎ। যার প্রমাণ এখানেই পাওয়া গেল। কোন বড় সালাফি আলেম মাযহাব মানাকে ইসলামে বিভক্তি বা মানা যাবে না এ ধরনের কোন বক্তব্য বলেন নাই বরং তারা এটাকেও হক মনে করেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী মনে করেন, যা তাদের ফতোয়া দ্বারা সুস্পষ্ট। বড় বড় আলেমগণ, ইমাম মুহাদ্দিসগণ প্রত্যেকে কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কারণ পরিপূর্ণ ইলেম ছাড়া নিজে কুরআন হাদিস ইজতেহাদ করতে গেলে পদস্খলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে।

যা আজকের কথিত আহলে হাদিসদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে প্রায় নাস্তিকের মত ধ্যান ধারণার।মিথ্যচার করতে, হাদিস জাল জয়িফ বানাতে এদের ও এদের শায়েখের অন্তর কাঁপে না। কিন্ত ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদিসরা মাযহাব নিয়ে যে পরিমাণ ফেতনাবাজি করে উম্মতের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক। ঢালাওভাবে শিরিক বিদআত বলে ফতওয়া দিয়ে দিচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে।ইংরেজদের যে আশা যে মুসলমান বিভক্ত হয়ে পরস্পরের শত্রু হয়ে যাক, এরা তা পুরাটাই বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা এসব ফেতনা থেকে মুসলমানদের হেফাযত করুন এবং মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন।আমীন। —

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com