ইউরোপে ক্রমবর্ধনশীল মুসলিম জনগোষ্ঠী।।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ওমর ফারুক।। স্থানীয় সময়ঃ ২ ডিসেম্বর ২০১৮ রাত ১১টা।
পাশ্চাত্যে ইসলামবিদ্বেষীরা একের পর এক নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে পশ্চিমা জনমতকে নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, ইউরোপের রিফিউজি সংকট এবং প্যারিস থেকে ব্রাসেলস পর্যন্ত একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে প্রোপাগান্ডার নতুন নতুন অস্ত্র ও রসদ তুলে দিচ্ছে। প্রায় দেড় দশক আগে আমেরিকায় নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী বিমান হামলার দায় আল-কায়েদার ওপর চাপানোর সূত্র ধরে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের শায়েস্তা করতে যেসব অজুহাত সৃষ্টি করা হয়েছিল তার প্রায় সবই পরবর্তীতে মিথ্যা ও ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। ইরাকে ন্যাটো বিমান হামলার আগে সেখানে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের মজুদ থাকার মিথ্যা প্রচারণা চালান হয়েছিল। আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব কায়েমের আগেও সেখানে আল-কায়েদার ঘাঁটি থাকার কথা বলা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণা আরও সুসংগঠিত রুপ লাভ করেছে। সর্বোপরি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা এবং ইরানে ক্ষমতাশীন ইসলামি সরকারের বিরুদ্ধে অনুচর নিয়োগ করে একটি বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি এবং সরকার উৎখাতের জন্য জোর তৎপরতা সমগ্র মুসলিম বিশ্বই নয়, সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন সংকটের মুখোমুখি করে তুলেছে। উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক সংকট মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সাহসের অভাব ও হতাশা শেষাবধি মুসলিম বিশ্বের দিকে সেই জিঘাংসাকে চরিতার্থ করার প্রবৃত্তি যেন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হয়েছে। সৌদি আরবের নতুন যুবরাজকে ভয় ও ক্ষমতার মসনদে শক্তি ও সাহস যোগানোর অঙ্গিকার দিয়ে ইসরাইল ও সৌদি জোটকে গোপনে শক্তিশালী করা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এত ব্যাপক প্রপাগাণ্ডা স্বত্বেও ইসলামের প্রসার ও সম্প্রসারণ যেন আরও বেশি গতি পাচ্ছে। সে কথাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ২০৭০ সালে অনুসারীর সংখ্যায় বিশ্বের অন্য সব ধর্মকে ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ অর্থাৎ ৫৩ বছর পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি থাকবে মুসলমান৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আরো যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে, তা হলে, ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ এ সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাড়বে ৭৩ শতাংশ৷ ফলে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০৭০ নাগাদ সারা বিশ্বে মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷
ফ্রান্সঃ ২০১৬ সালের ঐ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান৷ বর্তমানে সেখানে ৫৭ লাখ ২০ হাজার মুসলমান বাস করছেন৷
জার্মিানিঃ জার্মানিতে ২০১৬ সালে মুসলমানদের মোট সংখ্যা ছিল ৪৯ লাখ ৫০ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১ ভাগ৷
যুক্তরাজ্যঃ যুক্তরাজ্যে ৪১ লাখ ৩০ হাজার মুসলমানের বাস, যা মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৩ ভাগ৷
ইতালিঃ এই দেশটিতে ২৮ লাখ ৭০ হাজার মুসলমানের বাস, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৮ ভাগ।
নেদারল্যান্ডঃ নেদারল্যান্ডসে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ ১০ হাজার, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার দশমিক ভাগ।
স্পেনঃ স্পেনে বর্তমানে ১১ লাখ ৮০ হাজার মুসলমানের বাস, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৬ ভাগ৷
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মঃ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ২০৭০ সালে অনুসারীর সংখ্যায় বিশ্বের অন্য সব ধর্মকে ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ অর্থাৎ ৫৩ বছর পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি থাকবে মুসলমান৷ দেখুন ছবিঘরে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আরেও যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে, তা হলে ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ এ সময়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাড়বে ৭৩ শতাংশ৷ ফলে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০৭০ নাগাদ সারা বিশ্বে মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷
জন্মহার বেশিঃ ২০১০ সালে সারা বিশ্বে মোট ২১৭ কোটি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করত৷ তারপরই ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা৷ তখন বিশ্বে মোট ১৬০ কোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল৷ কিন্তু পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, ৫ দশক পর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পিছনে ফেলে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হয়ে যাবে মুসলমান৷
জন্মহার বেশিঃ কেন এত দ্রুত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বাড়বে? বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের জন্মহার বেশি আর মূলত এ কারণেই সংখ্যায় সব ধর্মকে পিছনে ফেলবে তারা৷ মুসলমানদের শিশু জন্মহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ আর খ্রিষ্টানদের ২ দশমিক ৭ শতাংশ৷
নাস্তিকের হার কমবেঃ পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে নাস্তিক অনেক কমবে৷ এখন যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ নাস্তিক, সেখানে ২০৫০ নাগাদ তা কমে হবে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ৷
তরুণ অনুসারী বেশি
অন্য সব ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের তরুণ অনুসারী বেশি৷ এ মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে৷ অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ ইসলাম ধর্মবলম্বীর বয়স ১৫ বছরের কম৷ তার মানে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বেশি দিন সন্তান জন্ম দেয়ার সুযোগও বেশি৷ (চলবে)
ড. ওমর ফারুক।। লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সামাজিক গবেষক এবং পরিব্রাজক। ইংরেজি সাাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট এডিটর, নিউইয়র্ক ভিত্তিক নিউজ পোর্টালঃ dailydhakapost.com এর এডিটর ইন চিফ এবং নিহাল পাবলিকেশনের স্বত্তাধিকারী। এ পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যাঃ ত্রিশটির বেশি।