আল লু’লু ওয়াল মারজানঃ ইমান কী এবং তার বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা।
১/১. ৫ ইমান কী এবং তার বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনসমক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, (কিয়ামাতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করবেন এবং তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করবেন না, সলাত প্রতিষ্ঠা করবেন, ফারয যাকাত আদায় করবেন এবং রমাযান-এর সিয়ামব্রত পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহ্র ‘‘ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিয়ামাত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নন। তবে আমি আপনাকে কিয়ামাতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামাতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানে না।’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্রই নিকট……।’ (সূরা লুক্বমানঃ ৩৪) এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল (আঃ)। লোকেদেরকে তাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।’ (বুখারী পর্ব ২ : /৩৭ হাঃ ৫০, ৪৭৭৭, মুসলিম ১/১ হাঃ ৯) ।। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১/৩.৬ সলাতের বর্ণনা যা ইসলামের অন্যতম রুকন।
তালহাহ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক নাজদবাসী আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল। তাঁর মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তাঁর কথার মৃদু আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কী বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে তিনি নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত’। তিনি বললেন, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরও সলাত আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আর রমাযানের সওম।’ তিনি বললেন, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সওম আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।’ বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট যাকাতের কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘আমার ওপর এছাড়া আরো আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না; তবে নফল হিসেবে দিতে পার।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘সেই ব্যক্তি এই ব’লে চলে গেলেন, ‘আল্লাহ্র শপথ! আমি এর চেয়ে অধিকও করব না এবং কমও করব না।’ তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সে কৃতকার্য হবে, যদি সত্য ব’লে থাকে।’ (বুখারী পর্ব ২ : /৩৪ হাঃ ৪৬, মুসলিম ১/২ হাঃ ১১), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১/৫.৭ ঈমানের বর্ণনা যার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবূ আইউব আনসারী থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বললঃ তাঁর কী হয়েছে? তাঁর কী হয়েছে? আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাঁর একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শারীক করবে না, সলাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। একে ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সওয়ারীর উপর ছিলেন। (বুখারী ৭৮/১০ হাঃ ৫৯৮৩, মুসলিম কিতাবুস সলাত হাঃ ৪৬৪), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১/৫.৮ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক বেদুইন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যদি আমি তা সম্পাদন করি, তবে জান্নাতে প্রবেশ করব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে, আর তার সাথে অপর কোন কিছু শরীক করবে না। ফারয সালাত আদায় করবে, ফারয যাকাত প্রদান করবে, রমাযান মাসে সিয়াম পালন করবে। সে বলল, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তার শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে বেশি করব না। যখন সে ফিরে গেল, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন জান্নাতী ব্যক্তিকে দেখতে পছন্দ করে, সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১ হাঃ ১৩৯৭, মুসলিম ১/৪, হাঃ ১৪), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১.৬.৯ নাবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান। ২. সলাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সওমব্রত পালন করা। (বুখারী পর্ব ২ : /২ হাঃ ৮, মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১/১০.২০ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা মু‘আয (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে সওয়ারীতে ছিলেন, তখন তিনি তাকে ডাকলেন, হে মু‘আয ইবনু জাবাল! মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সার্বিক সহযোগিতা ও খিদমাতে হাযির আছি। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, আমি হাযির, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ এবং প্রস্তুত।’ তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয। তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্ এবং প্রস্তুত’। এরূপ তিনবার করলেন। অতঃপর বললেনঃ যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র রাসূল’- তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি মানুষকে এ খবর দেব না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করবে।’ মু‘আয (রাঃ) (জীবন ভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ্ না হয়। (বুখারী পর্ব ৩ : /৪৯ হাঃ ১২৮, মুসলিম ১/১০, হাঃ ৩২), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১/১২. ঈমানের শাখা-প্রশাখা।
১/১২.২১ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা রয়েছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী পর্ব ২ : /৩ হাঃ ৯, মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১/১২.২২ আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য নসীহাত করছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। (বুখারী পর্ব ২ : /১৬ হাঃ ২৪, মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৬), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস