আমি হিজাব পরিধানে ভীত নইঃ সারাহ মুসা
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।। ২২ অক্টোবর,২০১৭
[But her headscarf can also arouse positive reactions. One day a woman came up to tell her: “‘Your scarf is beautiful’.”
-Daily Mail]
সারাহ মুসার জন্ম আমেরিকার ওহিও অঙ্গরাজ্যে। তিনি আজন্ম বসবাস সেখানেই। মা কোরিয়ান এবং বাবা ফিলিস্তিনি। তিনি যখন ১৭ বছর বয়সের একজন কিশোরী, তখনই তিনি মাথায় হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য তাঁর হিজাব পরিধানের সিদ্ধান্তে খ্রিস্টান মা কিছুটা মর্মাহত হয়েছিলেন। সেই কিশোরী সারাহ মুসা এখন ৩৩ বছর বয়সের একজন বুদ্ধীদিপ্ত রমণী। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের একটি তৈরি পোশাক হাউজের ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
কিন্তু সারাহ’র স্বপ্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে তার নিজস্ব লেবেল তৈরি করা। তার এ ‘বিনয়ী সুদর্শন ফ্যাশন’ ধর্মপ্রাণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য তৈরি হবে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান। তাঁর দশ বছরের কর্মজীবনে তিনি রালফ লরেন, আন্না সুয়ি, ক্যারোলিনা হেরেরার মত বিখ্যাত সব পোশাক হাউজে কাজ করেছেন। এখন তিনি ‘ক্লাব মোনাকো’তে সিনিয়র টেকনিক্যাল ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন।
মার্জিত এ তরুণী এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি সুন্দর পোশাক তৈরি করছি এবং নারীরা তা নির্বাচন করতে পারবে যে, কিভাবে তারা এটা পরবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বয়সে অধিকাংশ কিশোরীরা শুধু টাইট-ফিট পোশাক পরতে চান। বস্তুতপক্ষে, আমেরিকান হাইস্কুলের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে হিজাব পরিধান করা কোন রকমই সহজ ছিল না।’
সারাহ বলেন, ‘এ সব পোশাক হাউজগুলো আমাকে বলেছে, আপনাকে মেকআপ ব্যবহার করতে হবে। আপনাকে শরীর শরীর প্রদর্শন করতে হবে। চুলে কালার করতে হবে, আকর্ষণীয় হয়ে সাজতে হবে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। সেখানে এখনও এই বিলিয়ন ডলারের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ‘আপনি কখনই যথেষ্ট পারফেক্ট নন’।’ তিনি বলেন, ‘আমি হিজাব পরার মাধ্যমে আমি আমার ক্ষমতা প্রকাশ করতে পারি যে, আমি কি হতে চাই।’
রক্ষণশীল পোশাক কিংবা হিজাব পরা নিয়ে আমেরিকান সমাজে বির্তক থাকলেও বিশ্বের মুসলিম নারীদের অধিকাংশই এটা পরতে পছন্দ করেন বলে তিনি জোর দিয়ে বলেন।
২০ বছর বয়সে সারাহ মুসা তার নিজের ‘বিনয়ী ফ্যাশন’ লেবেল ‘হায়া’ চালু করেন। কিন্তু খুব শিগগিরই এটিকে এক পাশে রেখে তিনি তার অধ্যয়নে মনযোগ দেন।
শহরের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত ফ্যাশন হাউসে কিছুদিন কাজ করার আগে তিনি নিউইয়র্কের মর্যাদাপূর্ণ টেকনোলজি ফ্যাশন ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রি নেন।
কিন্তু তিনি এখনও তাঁর নিজস্ব লেবেল পুনরায় আরম্ভ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিন বছর আগে দেশব্যাপী ইসলামি পোশাক তৈরির একটি প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার লাভ করেন।
যদিও আমেরিকান সমাজের চেয়ে নিউইয়র্কের জনগণ ফ্যাশন শিল্পের ব্যাপারে অধিক উদারমনস্ক। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো হিজাবকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তিনি জানান, একবার এক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নিয়োগকারী তার মাথার হিজাবের কারণে তাঁকে বের করে দেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমভীতিতে হিজাব পরতে ভয় পান কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মূলতঃ হিজাব পরিধানে ভীত নই। বরং নিজের রাজ্য ওহিও এলে তো নিজেকে তারকা অনুভব করি।
কিন্তু তার মাথার হিজাবে কেউ কেউ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছে। তিনি জানান, একদিন একজন নারী তাঁর কাছে এসে বলেছিলেন, ‘তোমার হিজাব দেখতে খুব সুন্দর’।
But her headscarf can also arouse positive reactions. One day a woman came up to tell her: “‘Your scarf is beautiful’.”
-Daily Mail
সারাহ মূসা মনে করেন, তিনি তার এই ধ্যান ধারণাকে কাজে লাগিয়ে বৃহত্তর এই বহুজাতিক সোসাইটিতে সংখ্যালঘু মুসলমান এবং অন্য সকল সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে এবং জাতিগত ভেদাভেদ ও ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সৃজনশীল উপায় খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্ভাবিত ফ্যাশান ডিজাইন এক উপায় হতে পারে।
[ডেইলি মেইল অবলম্বনে