আমরা হয় বিজয়ী হই, না হয় পবিত্র শাহদাতঃ ওমর মুখতার

October 20, 2017 7:41 pm0 commentsViews: 144

ড. ওমর ফারুক।। নিউইয়র্ক, তারিখঃ ২০ অক্টোবর ২০১৭।

১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগের কথা।  দখলদার ইতালিয় সেনাদের হাতে লিবিয়ার কিংবদন্তীতুল্য সংগ্রামী নেতা ওমর আল মুখতার শাহাদাত বরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। আজ ঝঞ্ছা বিক্ষুব্দ পৃথিবীতে ওমর মুখতারের বর্ণাঢ্য সংগ্রামী  জীবন নিয়ে আলোচনা ও তাঁর অসীম সাহসিকতাপূর্ণ বাণী স্মরণ করা খুব জরুরী।

মুখতারের নেতৃত্বে ২৩ বছর ধরে ইতালিয় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছিল  লিবিয়ার মুজাহিদরা।

অথচ এই বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সংগ্রামী নেতার শৈশবাস্থা ছিল বড় অসহায়।  কৈশোর জীবনের শুরু হয় ইয়াতিম অবস্থায়  শারিফ আল গ্বারিয়ানি নামের এক ব্যক্তিত্বের দত্তক পুত্র হিসেবে। শারিফ আল গ্বারিয়ানি ছিলেন সেনুসসি সুফি নামের এক ধর্মীয়-রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী।

ওমর মুখতার জাগবুবে সেনুসসি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক দশক সময় পড়াশুনা করেছিলেন । তিনি ছিলেন কুরআন-বিশেষজ্ঞ। মুখতার ১৮৯৯ সালে  দখলদার ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শাদে গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন রাবিহ আজ জুবাইর।

১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে অটোম্যান তুর্কি সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইতালির যুদ্ধের সময় ইতালির নৌবাহিনী লিবিয়ার উপকূলে হানা দেয় । সে সময় লিবিয়া ছিল তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীন। ইতালিয়রা লিবিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তুর্কি সেনারা ও তাদের লিবিয় সহযোগীরা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে উপকূল ছেড়ে পেছনের দিকে সরে আসেন।

ইতালিয় হানাদার বাহিনী তিন দিন ধরে ত্রিপলি ও বেনগাজিতে বোমা বর্ষণ করে।

লিবিয়ার সাইরেনাইকা অঞ্চলের জনগণ ওমর মুখতারের নেতৃত্বে একের পর এক প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। মরুভূমির লড়াইয়ে অভিজ্ঞ ওমর মুখতার হয়ে ওঠেন ইতালিয় সেনাদের জন্য চক্ষুশূল। অবশেষে  ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক অতর্কিত হামলায় আহত ও বন্দি হন ওমর মুখতার। বন্দী করা হলেও ওমর মুখতারকে নিয়ে তাদের ভয়ানক আতঙ্ক ছিল। অবশেষে  ৫ দিন পর আতঙ্কগ্রস্ত ইতালিয় দখলদাররা তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে শহীদ করে।

ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, ওমর মুখতার সারা বিশ্বের দখলদার মানুষের কাছে মরুর সিংহ নামে খ্যাত ও আতঙ্কের কারণ ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডের  পূর্বমূহুর্তে ওমর মুখতারকে মুসোলিনির ইটালিয়ান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল, ”তুমি কি জান, তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?”

ওমর মুখতার পরিষ্কার ভাবে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জবাবে বলেছিলেন, হ্যাঁ।

এ জবাবের উত্তর পাওয়ার পর সে অফিসার বলল, তুমি যা করেছ তার জন্য তুমি কী অনুতপ্ত?

ওমর মুখতার বললেন, প্রশ্নই হয় না, আমি আমার দেশ আর মানুষের জন্য লড়েছি।

সেনা আদালতের বিচারক তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার মত লোকের এমন পরিণতি দেখে আমি দুঃখিত ।

ওমর মুখতার বললেনঃ “কিন্তু এটাই তো জীবন শেষ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে এভাবে বীরের মত শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।”

এরপর বিচারক প্রস্তাব দিল তাঁকে একটা শর্তে মুক্ত করে দেয়া হবে, যদি তিনি মুজাহিদদের কাছে চিঠি লেখেন যাতে মুজাহিদরা ইটালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে । ওমর মুখতার বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেনঃ

“যেই শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে আমি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেই যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। সেই আঙ্গুল দিয়ে অসত্য কোন কথা লিখতে পারব না। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় বিজয় লাভ করি, অথবা  শাহাদাতের  পেয়ালা পান করি।”

মহান আল্লাহ ওমর মুখতারকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে স্থান করে দিন। ‪আমীন।#

[পার্সটুডে এর প্রতিবেদন অবলম্বনে]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com