আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি জামাত ইসলামির
কোলকাতা২৪ এভা্ে িনিউজ ছাপলঃ
বিশেষ প্রতিবেদন: রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতা ছড়ানোর পরিকল্পনা করার অভিযোগে শীর্ষ জামাত নেতৃত্বকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এমন অবস্থায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই লড়াই করতে চায় জামাত ইসলামি বাংলাদেশ৷
১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শুরু হয়৷ এই সময় জামাত ইসলামির নেতৃত্বে গণহত্যা চালানোর হয়েছিল৷ স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি-র সঙ্গে জোট করে সরকার পরিচালনা করেছে জামাত৷ পরে আওয়ামি লিগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে যুদ্ধপরাধ মামলায় জামাতের সর্বচ্চো নেতৃত্বের বেশিরভাগের ফাঁসি হয়৷ ফলে এই মুহূর্তে নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে জামাত ইসলামি বাংলাদেশ৷
সূত্রের খবর, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে মরিয়া জামাত৷ এর জন্য সংগঠনটির দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে লড়াই চালাতে মরিয়া৷ উগ্র আন্দোলন ও জ্বালাও-পোড়াও নীতির জেরে সংগঠন যে জনসমর্থন হারাচ্ছে তাও বুঝতে পারছে নেতৃত্ব৷
সম্প্রতি জামাত জামাতের আমির (প্রধান) মকবুল আহমাদ সহ সংগঠনের ১৯ জন শীর্ষ নেতাকে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত চালানোর অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়৷ আদালতের নির্দেশে তারা পুলিশি হেফাজতে৷ সূত্রের খবর, জেরার মুখে বন্দি জামাত নেতৃত্ব বাংলাদেশ জুড়ে দুর্গা পূজা ও মহরমের সময় নাশকতার পরিকল্পনা স্বীকার করে নেয়৷ এই তথ্য সামনে আসতেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, গোপন বৈঠকে জামাতের পরবর্তী প্রধান (ভারপ্রাপ্ত আমির) নির্বাচিত করা হয়েছে, অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে৷ ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বে এসেছে এটিএম মাসুম৷
গোয়েন্দা বিভাগের ধারণা, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এই দুই নেতার নির্দেশে পথে নেমে উগ্র আন্দোলন নয়, বরং গোপন ডেরাই ভরসা জামাত নেতৃত্বের৷ আত্মগোপনে থেকেই যেমন করেই হোক জাতীয় নির্বাচনে নামতে মরিয়া সংগঠনটির নেতারা৷
গণহত্যা ও যুদ্ধপরাধ মামলায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলি আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মির কাসেম আলির মতো নেতাদের৷ কারাদণ্ডের সাজার মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে গোলাম আজমের৷ ,সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত৷
পাকিস্তান আমলে উগ্র ধর্মীয় রাজনীতিতে হাত পাকানো নেতাদের শূন্যতা জামাত ইসলামির মতো কট্টর সংগঠনের পক্ষে পূরণ করা কঠিন৷ এমনই মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ তাঁদের ধারণা, গণহত্যার মতো কার্যকলাপে জড়িত অতীতকে ভুলতে চেয়ে কিছুটা নরম হতে চাইছিল জামাত৷ সংগঠনের তরফে দেওয়া কিছু বিবৃতি তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল৷
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়ে দেখতে চেয়েছিল দেশের কোথায় তারা শক্তিশালী৷ সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে সংগঠনের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রেফতার৷ একাধিক জামাত নেতার বক্তব্য, শেখ হাসিনার সরকার চাইছে আমরা যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি৷ কিন্তু আমরা নির্বাচনের জন্য ভিতরে ভিতরে দলকে প্রস্তুত করছি৷
এক নজরে জামাত ইসলামি
১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট সংগঠনের জন্ম৷ দলের প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী৷
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর গঠিত হয় জামাত ইসলামি হিন্দ ও জামাত পাকিস্তান৷ একইসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান জামাত ইসলামি তৈরি হয়৷
১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামাত নিষিদ্ধ হয়৷ পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তৈরির আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সংঘর্ষে গণহত্যায় জড়িত ছিল সংগঠনটি৷ পরে তৈরি হয় বাংলাদেশ জামাত ইসলামি৷
১৯৮৬ সালে জামাত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয়৷ ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করে তারা৷
২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামাতের রেজিস্ট্রেশন নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং একে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের অযোগ্য ঘোষণা করে৷ তবে দলটিকে বাতিল করা হয়নি বলেই দাবি জামাত নেতৃত্বের৷